হাতে আসা সোনার সুযোগ যে কোনও দল এই ভাবে নষ্ট করতে পারে, তা নাইটদের না দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন! চলতি আইপিএলে আরসিবি তাদের শেষ ম্যাচ জিতে নাইটদের প্লে-অফে যাওযার যে সুযোগ দিয়েছিল, তা যেন নষ্ট করার পণ করেই ওয়াংখেড়েতে নেমেছিলেন দীনেশ কার্তিকরা।
ডু অর ডাই ম্যাচে ঠিক কতটা খারাপ খেলা যায়, তার যেন উদাহরণ তৈরির জন্যই মাঠে নেমেছিল গোটা দল। রবিবার রাতে মুম্বই ম্যাচের মযনাতদন্ত করলে নাইটইদের হারার এক নয়, একাধিক কারণ উঠে আসে। কী কী সেই কারণ?
প্রথমেই আসা যাক ব্যাটিং অর্ডারের কথায়। আইপিএলের শুরু থেকেই কেকেআর তাদের ব্যাটিং অর্ডারে ক্রমাগত বদল করে চলেছে। গত কালের ম্যাচেও সেই ট্র্যাডিশন বজায় ছিল। মুম্বইয়ের ঘরের মাঠে এতটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে নেমেও তিন নম্বরে দেখা গিয়েছে অফ-ফর্মে থাকা রবিন উথাপ্পাকে। ফলে ক্রিস লিন যে শুরুটা করেছিলেন, তার ধরে রাখতে পারেননি উথাপ্পা।
৬.১ ওভারে ব্যাটিং করতে নেমে তিনি আউট হন ১৯.৫ ওভারে। তবে এত ক্ষণ ক্রিজে থেকেও তাঁর অবদান ৪৭ বলে ৪০ রান। ফলে ক্রিস লিনের ২৯ বলে ৪১ রানের ইনিংসের ফায়দা তেমন ভাবে তুলতে পারেনি কেকেআর। অথচ উথাপ্পার কাছে সুযোগ ছিল সমালোচকদের যোগ্য জবাব দেওয়ার। যা হেলায় হারিয়েছেন তিনি।
এ বার আসা যাক রাসেল-রহস্য উদ্ধারে। চলতি আইপিএলে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন আন্দ্রে রাসেল। অবিশ্বাস্য সব ইনিংস খেলেছেন। রবিবারের আগে টুর্নামেন্টের ১৩ ম্যাচে করেছিলেন ৫১০ রান। কিন্তু সেই রাসেলকেই কেন তিনের বদলে পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করতে নামানো হল, তার উত্তর খুঁজে পাওয়া গেল না। এর পিছনে দীনেশ কার্তিকদের কী স্ট্র্যাটেজি ছিল, তা নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়া যেতে পারে।
রাসেলের ব্যাট চলেনি। ১ বল খেলে শূন্য রানে ঘরে ফেরেন তিনি। মুম্বইকে বড়সড় রানের টার্গেট দিতে ব্যর্থ হওয়ার পিছনে এটা একটা বড় কারণ।
ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে অদলবদল করা বা রাসেলের পজিসন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ছাড়াও কুলদীপ যাদবকে প্রথম একাদশের বাইরে রেখে মাঠে নামাটাও কেকেআরের বিপক্ষে গিয়েছে। টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে কুলদীপের পারফরম্যান্স কি ভুলে গিয়েছেন কার্তিক? চলতি আইপিএলে তেমন ভাবে জ্বলে না উঠলেও, কুলদীপ যে কোনও সময়ই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখেন।
আরও একটা বিষয়ে রহস্য থেকে যাবে। দলে কেন রিঙ্কু সিংহ? সাত নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমেছেন রিঙ্কু। ঠিক কোন কারণে রিঙ্কু প্রথম একাদশে জায়গা পেলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেকেআর সমর্থকেরা। প্রশ্ন উঠছে, কেকেআরের দল নির্বাচন নিয়েও। গত কালের আগে ১০ ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়া প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ কী কারণে এই নক আউট ম্যাচে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না কেউই।
এ বার আসা যাক, দীনেশ কার্তিকের অধিনায়কত্ব নিয়ে। দল জিতলে এ প্রশ্নটা বোধহয় ধামাচাপা পড়ে যেত। তবে মুম্বই ম্যাচে কার্তিকের বহু সিদ্ধান্ত তাঁর বিপক্ষে গিয়েছে। রাসেলকে তিন নম্বরে না নামানোটা তার মধ্যে অন্যতম। তা ছাড়া, মাত্র ১৩৩ রানের পুঁজি নিয়ে মুম্বইয়ের মতো টিমকে বেঁধে রাখতে সঠিক ভাবে বোলার পরিবর্তনও করতে পারেননি তিনি।
ফলে সব মিলিয়ে ক্যাপ্টেন কার্তিকের জন্য গত রাতটা তাঁর পক্ষে যায়নি। প্রশ্ন উঠে গিয়েছে তাঁর নেতৃত্ব নিয়েই! অবশ্য সে প্রশ্নটা আগেই তুলেছিলেন রাসেল। দলের পরিবেশ নিয়ে প্রকাশ্যেই সরব হয়েছিলেন তিনি।
ক্যাপ্টেন কার্তিকের মতোই দল হিসাবেও খেলতে ব্যর্থ কেকেআর। ওয়াংখেড়ের পিচে নেমে গত কালের আগে ১০টা ম্যাচের মধ্যে ৯টাতেই হারের রেকর্ড রয়েছে কেকেআরের। কিন্তু, গত কালের মতো নক আউট ম্যাচে মুম্বইয়ের ঘরের মাঠে খেলতে যে মানসিক দৃঢ়তা থাকা উচিত, তার যেন আশপাশেই ছিলেন না নাইটরা। ফলে রবিবাসরীয় লড়াইটা যেন অসম হয়ে গিয়েছিল।
কেকেআরের হারের পিছনে মুম্বই টিম ম্যানেজমেন্টের স্ট্র্যাটেজিও একটা বড় ফ্যাক্টর ছিল। কেকেআরে অন্যতম অস্ত্র রাসেলকে ভোঁতা করে দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার, তা-ই করেছেন মুম্বই থিঙ্কট্যাঙ্ক। রাসেল ব্যাটিং করতে নামামাত্রই তাঁকে রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে বাউন্সার উপহার দিয়েছেন লাসিথ মালিঙ্গা। পরের বলেও একই ধরনের।
রাসেলের যে শর্ট বলে দূর্বলতা রয়েছে, তা মাথায় রেখেই তাঁকে আক্রমণ করা হয়েছে। মালিঙ্গার এই বলের পিছনে যে পরিকল্পনা ছিল তাকে অস্বীকার করা যায় না। এবং, রাসেলের উইকেটটা শেষমেশ কেকেআরের হারের বড়সড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যে ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে আর পারেনি কেকেআর!