সুপার ওভারে রাবাডার কাছে হার নাইটদের

দুই ক্রিকেট মস্তিষ্কের সহায়তায় পুষ্ট দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে কলকাতার বাজি সেই রাসেলের চওড়া ব্যাটের জোরেই কেকেআরের ইনিংস শেষ হয়েছিল ১৮৫-৮। ছ’টি ছক্কা ও চারটি চার সহযোগে রাসেলের ২৮ বলে ৬২ রান কেকেআরকে পৌঁছে দিয়েছিল ১৮৫ রানে। জবাবে ছয় উইকেট হারিয়ে দিল্লির রানও শেষ হয় ১৮৫। ফলে খেলা গড়ায় সুপার ওভারে।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৯ ০৪:১৬
Share:

উচ্ছ্বাস: সুপার ওভারে জয় নিশ্চিত হতেই উৎসব সৌরভের। আইপিএল

এই প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে বেরোল কলকাতা নাইট রাইডার্স। কোটলায় শনিবারের ম্যাচে নাইটদের প্রতিপক্ষ ছিল এমন একটি দল, যাদের কোচ রিকি পন্টিং এবং উপদেষ্টা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বর্তমান ক্রিকেট দুনিয়ার দুই সেরা মস্তিষ্ক।

Advertisement

এই দুই ক্রিকেট মস্তিষ্কের সহায়তায় পুষ্ট দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে কলকাতার বাজি সেই রাসেলের চওড়া ব্যাটের জোরেই কেকেআরের ইনিংস শেষ হয়েছিল ১৮৫-৮। ছ’টি ছক্কা ও চারটি চার সহযোগে রাসেলের ২৮ বলে ৬২ রান কেকেআরকে পৌঁছে দিয়েছিল ১৮৫ রানে। জবাবে ছয় উইকেট হারিয়ে দিল্লির রানও শেষ হয় ১৮৫। ফলে খেলা গড়ায় সুপার ওভারে।

সেখানে শুরুতে শ্রেয়স আইয়ার ও ঋষভ পন্থ ব্যাট করতে এসে তোলে ১০। জবাবে রাসেল ব্যাট করতে এসে রাবাডার ইয়র্কারে আউট হয়ে যাওয়ার ম্যাচ চলে যায় দিল্লি ক্যাপিটালসের দখলে। সেখান থেকে জিততে পারেনি কেকেআর। সুপার ওভারে দুর্দান্ত বল করে ম্যাচের নায়ক রাবাডা।

Advertisement

আরও পড়ুন: পৃথ্বী শ নাকি রাবাডা, কার কাছে হারল নাইটরা?

এ দিন কেকেআর পাওয়ার প্লে-তে করেছিল ৩৬-২। সেখানে দিল্লি পাওয়ার প্লে-তে তোলে ৪৫-১। তার পরে দিল্লির দুই তরুণ ক্রিকেটারের দাপুটে ও দায়িত্বশীল ব্যাটিং। এই দু’জন হল পৃথ্বী শ (৫৫ বলে ৯৯ রান) এবং শ্রেয়স আইয়ার (৩২ বলে ৪৩)। পৃথ্বী মাত্র এক রানের জন্য শতরান পেল না। কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে ইনিংস নিয়ন্ত্রণ করল। তবে আমি পৃথ্বীকে টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখব। কারণ, ওর সোজা ব্যাটে খেলার প্রবণতা।

শনিবার চোট পাওয়া সুনীল নারাইন খেলেনি। নাইটরা নেমেছিল তিন বিদেশি নিয়ে। কেন মহারাষ্ট্রের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নিখিল নায়েককে এ দিন প্রথম দলে রাখা হল, তার যুক্তি খুঁজে পাইনি। ঋষভ পন্থদের জয়ের একটা বড় কারণ, ওদের নারাইনের চার ওভার খেলতে হয়নি।

স্কোরকার্ড
কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৮৫-৮ (২০)
দিল্লি ক্যাপিটালস ১৮৫-৬ (২০)

কলকাতা নাইট রাইডার্স
নিখিল এলবিডব্লিউ বো লামিছানে ৭•১৬
লিন ক ঋষভ বো রাবাডা ২০•১৮
উথাপ্পা এলবিডব্লিউ বো হর্ষল ১১•৬
নীতীশ ক রাবাডা বো হর্ষল ১•২
কার্তিক ক ঋষভ বো মিশ্র ৫০•৩৬
শুভমন রান আউট ৪•৫
রাসেল ক পরিবর্ত বো মরিস ৬২•২৮
চাওলা রান আউট ১২•৫
কুলদীপ ন. আ. ১০•৫
অতিরিক্ত ৮
মোট ১৮৫-৮ (২০)
পতন: ১-১৬ (নিখিল, ৩.৪), ২-৩৬ (উথাপ্পা, ৫.৬), ৩-৪০ (লিন, ৬.৫), ৪-৪৪ (নীতীশ, ৭.১), ৫-৬১ (শুভমন, ৯.১), ৬-১৫৬ (রাসেল, ১৭.৫), ৭-১৭০ (কার্তিক, ১৮.৪), ৮-১৮৫ (চাওলা, ১৯.৬)।
বোলিং: কাগিসো রাবাডা ৪-০-৪১-১, সন্দীপ লামিছানে ৪-০-২৯-১, ক্রিস মরিস ৪-০-৩৫-১, হর্ষল পটেল ৪-০-৪০-২, অমিত মিশ্র ৪-০-৩৬-১।
দিল্লি ক্যাপিটালস
পৃথ্বী ক কার্তিক বো ফার্গুসন ৯৯•৫৫
ধওয়ন ক রাসেল বো চাওলা ১৬•৮
শ্রেয়স ক শুভমন বো রাসেল ৪৩•৩২
ঋষভ ক চাওলা বো কুলদীপ ১১•১৫
ইনগ্রাম রান আউট ১০•৭
হনুমা ক শুভমন বো কুলদীপ ২•৩
হর্ষল ন. আ. ০•০
অতিরিক্ত ৪
মোট ১৮৫-৬ (২০)
পতন: ১-২৭ (ধওয়ন, ২.৪), ২-১১৬ (শ্রেয়স, ১১.৬), ৩-১৭০ (ঋষভ, ১৭.৫), ৪-১৭৪ (পৃথ্বী, ১৮.৩), ৫-১৮৪ (হনুমা, ১৯.৫)।
বোলিং: প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ৪-০-৩৩-০, লকি ফার্গুসন ৪-০-৩৮-১, পীযূষ চাওলা ৪-০-৩৬-১, আন্দ্রে রাসেল ৩-০-২৮-১, কুলদীপ যাদব ৪-০-৪১-২, নীতীশ রানা ১-০-৮-০।

ফিল্ডিংটাও দারুণ করেছিল দিল্লি। দু’টো ক্যাচের কথা বলতেই হচ্ছে। যার প্রথমটা কাগিসো রাবাডার (১-৪১) বাউন্সারে ক্রিস লিন (১৮ বলে ২০ রান) মারতে গিয়ে আউট হয়। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে সেই ক্যাচ ধরেছিল ঋষভ। এই ক্যাচটা আমার কাছে এ বারের আইপিএলে এ পর্যন্ত ধরা সেরা ক্যাচ। বলটা তালুবন্দি করার আগে ঋষভ শূন্যে লাফ দিয়ে শরীর ছুড়ে দিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে দেখার মতো ব্যাপার হল, বলটা ধরার সময় নিজের হাতটাকে ঠিক বলের কাছে নিয়ে যাওয়া।

দ্বিতীয় ক্যাচটির ক্ষেত্রেও রাবাডার নাম উঠে আসবে। হর্ষল পটেলের (২-৪০) বলে নীতীশ রানা ভাল ফ্লিক করেছিল। ফাইন লেগ ও স্কোয়ার লেগ অঞ্চলের মাঝে দৌড়ে এসে তা ধরে রাবাডা।

শুভমন যখন আউট হয়, তখন কেকেআরের রান ৬১-৫। সেই সময় আসে আন্দ্রে রাসেল। ওর পাওয়ার হিটিংয়ের বৈশিষ্ট্য হল, টেকনিক ও বল বাছাইয়ের প্রাধান্য। তা ছাড়া বলের উপরে গিয়ে খেলে। এ রকম বিধ্বংসী ক্রিকেট এ বারের আইপিএলে আমি এখনও কাউকে খেলতে দেখিনি। রাসেলের ব্যাটিং গত তিন ম্যাচ খুঁটিয়ে দেখলাম। তাতে চোখে পড়ছে, ব্যাট করার সময় ডান পা রাখছে অফস্টাম্পের বাইরে। ওপেন চেস্ট হয়ে যাচ্ছে সেই সময়। আর ওর হাতে এমন শক্তি যে অফস্টাম্প আর লেগ মিডে বল পড়লে উড়িয়ে দিচ্ছে মাঠের বাইরে। এ দিনও যা হতে দেখলাম।

রাসেল ও দীনেশ কার্তিকের জন্যই কেকেআরের রান ১৮৫ ছুঁতে পেরেছে। দীনেশ কার্তিক আজ শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিল। চার মেরে শুরু করেছিল। ৩৬ বলে ৫০ রানটার মধ্যে ও দায়িত্ববোধের প্রকাশ রয়েছে। ফলে বিশ্বকাপে ভারতের সম্ভাব্য চার নম্বর ব্যাটসম্যানের জন্য লড়াইটা এখনও বাঁচিয়ে রাখল কেকেআর অধিনায়ক।

তবে এই ম্যাচটা দেখে মনে হল কলকাতা অনেকটাই হয়তো রাসেল নির্ভর। রাসেল খেললে কেকেআর ঝলমলে। আর ক্যারিবিয়ানের ব্যাট না চললে কেকেআর শিবিরে অন্ধকার। যেমনটা হল আজ সুপার ওভারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement