কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের হয়ে নিয়মিত খেলছেন মহম্মদ শামি, ঋদ্ধিমান সাহা সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে চলতি মরসুমে একটি ম্যাচেও খেলেননি।
আইপিএল মানেই সাধারণ ক্রিকেটার থেকে তারকা হয়ে ওঠা। তারকা থেকে মহাতারকা। জনপ্রিয় ক্রিকেট লিগে আটটি দল। প্রত্যেক দলে পঁচিশ জন করে আছে ধরলেও সব মিলিয়ে ক্রিকেটারের সংখ্যা অন্তত দু’শো। তার মধ্যে বাংলা থেকে ক্রিকেটারের সংখ্যা মাত্র চার। তাঁদের মধ্যে তিনজন আবার প্রথম একাদশে নিয়মিত সুযোগই পাচ্ছেন না।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদে রয়েছেন ঋদ্ধিমান সাহা ও শ্রীবৎস গোস্বামী। দুজনের কেউ চলতি মরসুমে একটি ম্যাচেও খেলেননি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে আছেন প্রয়াস রায়বর্মণ। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে চার ওভারে ৫৬ রান দেওয়ার পরে আবার কবে প্রয়াস মাঠে নামার সুযোগ পাবেন, কেউ জানে না। শুধুমাত্র কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের হয়ে নিয়মিত খেলছেন মহম্মদ শামি। তা-ও বাংলার ক্রিকেটার হিসেবে তাঁকে ধরা হলেও শামি আসলে উত্তরপ্রদেশের। বঙ্গ ক্রিকেটমহলে ক্রমশ জোরাল হচ্ছে এই প্রশ্ন যে, এ রাজ্যে কি আইপিএল খেলার মতো কোনও প্রতিভাই নেই? নাকি ভারতের ক্রিকেট আকাশে কার্যত অস্তমিতই বাংলা?
বাংলার বর্তমান কোচ অরুণ লাল সাফ বলে দিচ্ছেন, আইপিএল খেলার মতো ফিটনেসই এখনও আনতে পারেননি এখানকার অনেক ক্রিকেটার। তিনি নিশ্চিত, আগামী মরসুমে বাংলা থেকে ক্রিকেটারেরা আইপিএলে খেলার সুযোগ পাবেন।
আরও পড়ুন: অপারেশন চেন্নাই সফল করতে দলে কি একটি পরিবর্তন করতে চলেছে কেকেআর?
অরুণের কড়া নির্দেশেই প্রাক-মরসুম ফিটনেস ট্রেনিং শুরু হয়েছে বাংলায়। ছয় সপ্তাহ অন্তর ইয়ো ইয়ো টেস্ট করে দেখে নেওয়া হবে কার ফিটনেস কোন জায়গায় রয়েছে। সেই অনুযায়ী ক্রিকেটারদের সুযোগ দেওয়া হবে। অরুণের কথায়, ‘‘যখনই আইপিএল দেখি, তখন এই কথাটাই মাথায় আসে, অনামী সব ছেলেরা এই লিগে খেলে কোটিপতি হচ্ছে। বাংলার ছেলেরা কেন এই লিগে নেই? সত্যি কথা বলতে, এ বার আমাদের ছেলেদের ফিটনেস সেই জায়গায় ছিল না। রঞ্জি ট্রফিতেই তো তার ফল দেখেছি আমরা।’’ অরুণ যোগ করছেন, ‘‘অনেকেই আছে যারা আইপিএল খেলার যোগ্য। একটু বেশি পরিশ্রম করলেই হবে। আগামী মরসুমে আমরা পরিবর্তন দেখতে পাব বলে আমি আশাবাদী।’’
শুধু আইপিএল নয়, সর্বস্তরেই এ রাজ্যের ক্রিকেটে ছবি খুব উজ্জ্বল নয়। চোটের কারণে এবং ঋষভ পন্থের আগমনের পরে জাতীয় দল থেকে বাইরে ঋদ্ধিমান। একমাত্র আছেন শামি। অনূর্ধ্ব-১৯ বা অনূর্ধ্ব-১৬ স্তরেও ভারতের হয়ে দু’একজন খেললেও খুব চোখে পড়ার মতো কিছু কেউ করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে না।
অশোক মলহোত্র মনে করেন, বাংলায় দ্রুত ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ শুরু করা উচিত। ঠিক যেমন টিএনপিএল রয়েছে তামিলনাড়ুর জন্য। সেখান থেকে উঠে এসেছেন বরণ চক্রবর্তীর মতো অনামী স্পিনার। আইপিএলের নিলামে ৮.৪ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছেন বরুণ। অনেক রাজ্যই নিজেদের লিগ চালু করে দিয়েছে। কর্নাটকে অনেক দিন আগেই শুরু হয়েছে কেপিএল। যেখানে ভাল খেলে কেকেআরে সুযোগ পেয়েছেন কে সি কারিয়াপ্পা। মহারাষ্ট্র লিগ থেকে উঠে এসেছেন নিখিল নায়েক, রাহুল ত্রিপাঠিরা। অশোক বলছেন, ‘‘বাংলার এত প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও ক্রিকেটার উঠছে না। কারণ, প্রতিভা দেখানোর জায়গাই তারা পাচ্ছে না।’’ কথা উঠছে, স্থানীয় ক্রিকেটকে পাল্টানোর। যাতে সেখান থেকে উচ্চ স্তরে খেলার মতো যোগ্য ক্রিকেটার বেরিয়ে আসে।
বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল খুবই হতাশ। টানা সাত বছর কেকেআরের হয়ে আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। শুরুর দিকে লক্ষ্মী এবং মনোজ ছিলেন আইপিএলে বাংলার মুখ। সঙ্গে ছিলেন ঋদ্ধি এবং ডিন্ডা। নাইট রাইডার্সের জার্সিতে দু’বার চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য লক্ষ্মী বলছেন, ‘‘ভাল খেলতে না পারলে কোনও ভাবেই আইপিএলে সুযোগ পাওয়া যায় না। মনোজ আর ডিন্ডা কেন সুযোগ পায়নি জানি না, কিন্তু অভিমন্যু ঈশ্বরনকে বাদ দিলে বাকিরা আইপিএল দলগুলির নজর কাড়ার মতো খেলেওনি।’’ তাঁর আরও পর্যবেক্ষণ, ‘‘শেষ তিন বছরে বাংলার ক্রিকেটারদের বিভ্রান্ত করে দিয়ে গিয়েছেন সাইরাজ বাহুতুলে। কিন্তু আমার বিশ্বাস, অরুণ লালের কোচিংয়ে বাংলা দলটা আরও এক বছর থাকলে চেহারা পাল্টে যাবে।’’
ঘটনা হল, বাংলা থেকে ব্যাট হাতে ঝড় তোলার মতো কেউ বেরোননি। কেকেআরে খেলা নীতিশ রানা বা রাজস্থান রয়্যালসের সঞ্জু স্যামসনের মতো কেউ আসেননি, যাঁকে দেখে উৎসাহিত হতে পারেন আইপিএলের কোনও দলের স্পটারেরা। কেকেআরেও নেই বাংলার কোনও ক্রিকেটার।
আইপিএলের মাঠে তাই ছুটছে কলকাতার রথ, দেখা নেই বাংলার!