ক্ষিপ্র: দস্তানা হাতে এখনও দুরন্ত ধোনি। মঙ্গলবার চেন্নাইয়ে। এএফপি
ক্রিকেট এবং ফুটবল, দুটোতেই অধিনায়ক থাকে। ফুটবলে টস করার পরে অধিনায়কের সে রকম ভূমিকা আর থাকে না। আর ক্রিকেটে অধিনায়কের প্রধান কাজটা শুরু হয় টস হওয়ার পর থেকে।
আর সেখানেই দেখা গেল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির কৃতিত্ব। কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম চেন্নাই সুপার কিংসের মঙ্গলবারের ম্যাচটা হওয়ার কথা ছিল ধোনির মগজাস্ত্র বনাম আন্দ্রে রাসেলের পেশি শক্তির খেলা। কিন্তু সেই লড়াই শুরু হওয়ার আগেই নাইটদের শেষ করে দিল ধোনির চতুর নেতৃত্ব। কেকেআরকে ১০৮-৯ স্কোরে আটকে অনায়াসে সাত উইকেটে ম্যাচ জিতল চেন্নাই সুপার কিংস।
ধোনি কোথায় টেক্কা দিয়ে গেল, তার একটা উদাহরণ দিই। রবিন উথাপ্পা ব্যাট করছে। পঞ্চম ওভার বল করছে দীপক চাহার। দেখলাম, কেদার যাদবকে ডিপ স্কোয়ারলেগে পাঠিয়ে দিল ধোনি।
আরও পড়ুন: ব্যাটিং ব্যর্থতা না খুনে পিচ, নাইটদের হারের আসল কারণ কী?
উথাপ্পা শট খেলার সময় বাঁ পা সামান্য এগিয়ে নিয়ে যায়। যার ফলে ও ফ্রন্টফুটে পুল শটটা খুব বেশি মারে। টোপটা ফেলেছিল ধোনি। চাহার একটু শর্ট অব লেংথ বলটা ফেলল। উথাপ্পা লোভ সামলাতে না পেরে শটটা মেরেই দিল। বল চলে গেল কেদারের হাতে। চাহার প্রথম স্পেলেই তিন উইকেট নিল। বিশ্বকাপের দল বাছাইয়ের সময় চতুর্থ পেসার হিসেবে চাহারের নাম কিন্তু আলোচনায় উঠবে।
টস জেতা থেকে শুরু। তার পরে চিদম্বরম স্টেডিয়ামে কেকেআরের ইনিংস জুড়ে থাকল ধোনিরই প্রভাব। পাওয়ার প্লে-তে দুই স্পিনার মিলে তিন ওভার বল করল। উল্টো দিকে চাহার তিন ওভার। পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই চার উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে নাইটরা আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। তিন স্পিনারকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দুর্দান্ত ভাবে ব্যবহার করল ধোনি। হরভজন সিংহ, ইমরান তাহির ও রবীন্দ্র জাডেজা মিলে পাঁচ উইকেট নিল। রাসেল হাফসেঞ্চুরি করলেও কখনও সিএসকে বোলিংকে শেষ করে দিতে পারেনি। তাহিরের বলে হরভজন যদি রাসেলের ওই ক্যাচ না ফেলত, তা হলে কেকেআর আরও কমে শেষ হয়ে যায়।
উইকেটকিপার হিসেবেও দারুণ ছাপ রেখে গেল ধোনি। দুটো স্টাম্পিং করেছে, তার মধ্যে শুভমন গিলেরটাকে বিশ্বমানের বললে কম বলা হবে। ধোনির ওই স্টাম্পিং দেখে বলতে বাধ্য হচ্ছি, ও উইকেটকিপিংয়ের সংজ্ঞাটাই বদলে দিয়েছে। তাহিরের গুগলিটা বুঝতে না পেরে এগিয়ে গিয়েছিল শুভমন। ব্যাট আর প্যাডের ফাঁক দিয়ে বল চলে যায়। আমি নিজে কিপিং করেছি বলে জানি, লেগ সাইডে এই রকম বল ধরা কতটা কঠিন। কারণ, কিপারদের ব্লাইন্ড জ়োনে বল থাকে। অর্থাৎ বলটা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেখা যায় না। ধোনি সেই বলটাও ধরে বিদ্যুৎগতিতে স্টাম্প করল।
তবে এর চেয়েও একটা ব্যাপার তাৎপর্যপূর্ণ। বার্ট ওল্ডফিল্ড থেকে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট— সবাই ক্রিকেট ব্যাকরণ মেনে কিপিং করেছে। যে ব্যাকরণ বলছে, কিপারদের অপেক্ষা করতে হবে বলটা গ্লাভসে আসা পর্যন্ত। ধোনি কিন্তু অপেক্ষা করার বদলে আগে হাতটা নিয়ে যায় বলের কাছে। যে কারণে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময় বেশি পায় স্টাম্পিং করার ক্ষেত্রে। ধোনি যেন কিপিংয়ের নতুন একটা বই-ই লিখে ফেলেছে।
ঠিক যে রকম পিচ, সে রকম দল আর গেমপ্ল্যান নিয়ে নেমেছিল চেন্নাই অধিনায়ক। প্রথম ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের সঙ্গে যে রকম ছিল, চিদম্বরমের এই পিচ তার চেয়ে একটু ভাল। তবে ব্যাটিং করাটা খুব সহজ ছিল না। বল ভাল করে ব্যাটে আসেনি। টস জেতায় বাড়তি সুবিধেটুকু পেয়ে যায় সিএসকে। পরে শিশিরের সমস্যা সামলাতে হয়নি।
এখন পর্যন্ত ছ’টি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতেই রান পেয়েছে রাসেল। এ দিন ৪৪ বলে অপরাজিত ৫০ করল। কেকেআরকে দেখে মনে হচ্ছে, ওয়ান ম্যান ইনডাস্ট্রি। বাকি ব্যাটসম্যানদের এ বার কিন্তু রান করতে হবে।
ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব বা কিপিংয়ের জন্য ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, এ রকম ঘটনা প্রায় দেখাই যায় না। এই ম্যাচেও সেরার পুরস্কার নিয়ে চলে গেল দীপক চাহার। কিন্তু দুর্দান্ত নেতৃত্ব আর অসাধারণ কিপিং করার জন্য আমার ম্যান অব দ্য ম্যাচ মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।