রাসেল-শক্তির মন্ত্র: তিনশো ‘পুশ-আপস’

রবিবার ইডেনের নায়ক আন্দ্রে রাসেল জানিয়ে দিলেন, এ ভাবেই তিনি এ বারের আইপিএলে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে চান কেকেআর-কে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৯ ০৪:৩২
Share:

বিধ্বংসী: রবিবার ইডেনে রাসেলের ক্যালিপসো-শো। ফাইল চিত্র

হোটেলের ঘরে একঘেয়েমি অনুভব করলেই তিনি শুরু করে দেন পুশ-আপস (ডন-বৈঠক জাতীয় অনুশীলন)। এবং সেটাও ৩০০ বার! সেই পুশ-আপসের প্রভাব যে মাঠে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেটা প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করেছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।

Advertisement

রবিবার ইডেনের নায়ক আন্দ্রে রাসেল জানিয়ে দিলেন, এ ভাবেই তিনি এ বারের আইপিএলে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে চান কেকেআর-কে। তিনি বলেছেন, ‘‘এমন ভাবে মরসুমটা শুরু করে খুব আনন্দই হচ্ছে। আশা করি, ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’’

গত দশ মাস ধরে হাঁটুর চোট বারবার তাঁকে বিব্রত করে তুলেছে। গত বছর ভারত সফর থেকে শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন। তা ছাড়াও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গত মাসে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল থেকেও সরে যান। কিন্তু অকুতোভয় ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি। হাঁটুতে অস্ত্রোপচার যেমন করিয়েছেন, তেমনই রিহ্যাবের মাধ্যমে নিজেকে করে তুলেছেন আরও শক্তিশালী এবং আগ্রাসী।

Advertisement

আইপিএল ওয়েবসাইটে সতীর্থ রবিন উথাপ্পাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাসেল বলেছেন, ‘‘পুশ-আপস যে কতটা প্রয়োজনীয়, তা বোধহয় সকলে এখন বুঝতে পারছেন।’’ বাঁ হাতের সবল পেশি দেখিয়ে ক্যারিবিয়ান তারকা আরও বলেছেন, ‘‘এই শক্তিই আমার সেরা অস্ত্র। তাকেই কাজে লাগাতে চাই প্রত্যেক ম্যাচে।’’

হোটেলের ঘরে ৩০০ পুশ-আপস দেওয়ার প্রসঙ্গে রাসেল বলেছেন, ‘‘এটা আমার একটা ভাল অভ্যাস বলতে পারেন। একঘেয়েমি অনুভব করলেই আমি পুশ-আপস শুরু করে দিই। হোটেলের ঘরেও তার ব্যতিক্রম ঘটে না। ৩০০ পুশ-আপস দেওয়াও আমার কাছে বিরাট বিষয় নয়। আমি এটার মধ্যে দারুণ একটা মজা খুঁজে পাই।’’ যোগ করেছেন, ‘‘তবে সবচেয়ে বেশি আনন্দ হচ্ছে এটা দেখে যে, দারুণ ভাবে আমরা আইপিএল শুরু করতে পারলাম। এখন পুশ-আপস-এর খুব প্রয়োজন নেই। পরে আবার সেটা নিয়ে ভাবা যাবে।’’

১৯ বলে অপরাজিত ৪৯ রানের ঝোড়ো ইনিংসেই তো থেমে থাকেননি জামাইকার নায়ক। রবিবার ইডেনে রাসালের নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছে আরও কিছু অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান। রান তাড়া করার সময়ে রাসেলের স্ট্রাইক রেট ২৫৭.৮৯। এর আগে গত বছর চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে অপাজিত ৮৮ রানের সময়ে সেই স্ট্রাইক রেট ছিল ২৪৪.৪। আরও দেখা গিয়েছে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আগে ব্যাট করলে সচরাচর রানের গড় দাঁড়ায় ২২.৪৫। পরে ব্যাট করলে গড় হয়ে যায় ২৬.০৫। একই রকম ভাবে পরিবর্তন ঘটে স্ট্রাইক রেটেরও। আগে ব্যাট করলে রাসালের স্ট্রাইক রেট সাধারণ ভাবে থাকে ১৬২.৯৫। রান তাড়া করার ক্ষেত্রে তা লাফিয়ে পৌঁছে যায় ১৬৯.৭৬-এ।

ঘটনা হল, রাসেল এই ধরনের পরিসংখ্যান নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নন। তাঁর ব্যাখ্যা অত্যন্ত স্বচ্ছ। রাসেল মনে করেন, একজন পেশাদার ক্রিকেটারের থেকে সমর্থকরা বরাবর সেরা ক্রিকেট প্রত্যাশা করবেন। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তিনি ভক্তদের কতটা সন্তুষ্ট করতে পারছেন, সেটাই দিনের শেষে প্রধান আলোচ্যে পরিণত হয়। রাসেলের কথায়, ‘‘সাধারণত দর্শকরা আমাদের মাঠে নিয়মে বাঁধা কিছু অনুশীলন দেখতেই অভ্যস্ত। কিন্তু অনুশীলনের বাইরেও একজন পেশাদার খেলোয়াড়কে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয় নিজস্ব ফিটনেসকে সেরা উচ্চতায় রাখার জন্য। আমি বিশ্বাস করি, যে কোনও পেশাদার খেলোয়াড়কেই সেই নিয়ম মেনে চলতেই হবে।’’

সামনেই বিশ্বকাপ। সেখানে কি ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে দেখা যাবে আন্দ্রে রাসেলকে? কঠিন সেই প্রশ্নের জবাব নেই কেকেআর নায়কের কাছেও। নিজস্ব ক্রিকেট-দর্শনে বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যেতে চান তিনি। রাসেল বলেছেন, ‘‘পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকে অনেক কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মত্যাগের অজানা কাহিনি। সেটাই প্রতিফলিত হয় মাঠে। এর বাইরে অন্য কোনও মন্ত্র নেই আমার। সেই মন্ত্রে আস্থা রেখে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement