ফের মুম্বইয়ের কাছে কলকাতার হারের পরে হতাশ শাহরুখ এবং জুহি। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এক মাস আগে ইডেনে নাইটদের প্রথম ম্যাচে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। যে ম্যাচে বিরাট কোহালির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে চার উইকেটে হারিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। খেলা শেষে মেয়ের হাত ধরে ইডেন পরিক্রমা করে খুশি মনে হোটেলে ফিরেছিলেন ‘কিং খান’ শাহরুখ।
তার পরে বুধবার ফের ইডেনে এলেন তিনি। কিন্তু টিম মালিকের আবির্ভাবেও মুম্বই জয় হল না কেকেআরের। ১০২ রানে ম্যাচ হেরে খেলা শেষ হওয়ার আগেই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন হতাশ শাহরুখ। বিশাল ব্যবধানে হারের পরে নাইট মালিক ইডেন ছাড়লেন মুখ কালো করে। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত এগারোটা বাইশ। ইডেনে ‘বি’ ব্লকের সামনে জমায়েত ভক্তরা মোবাইল ক্যামেরা হাতে ‘শাহরুখ, শাহরুখ...’ হাঁক পাড়লেন। কিন্তু সে দিকে ঘুরেও তাকালেন না বাদশা। চোয়াল শক্ত। হনহন করে এগিয়ে গেলেন গাড়ির দিকে। দ্রুত দরজা বন্ধ করে ছাড়লেন ইডেন প্রাঙ্গন। আর তার পরেই মাঠে ঢুকে ভক্তদের সঙ্গে দেখা করতে না পারার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী শাহরুখের টুইট, ‘খেলার মাঠে একটা লড়াইয়ের মানসিকতা কাজ করে। জয়-পরাজয়টা সেখানে বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু আজ সেই লড়াইয়ের অভাবটাই দেখলাম আমার দলে। তার জন্য ভক্তদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী’। তখনও ১৭তম ওভারের খেলা চলছে ইডেনে। স্কোর বোর্ডে তখন কলকাতা ১০৬-৯।
১০.২ ওভারের মাথায় রিঙ্কু সিংহ যখন যশপ্রীত বুমরার বলে আউট হয়ে ফিরছেন তখন শেষ বার শাহরুখকে দেখা গেল নাইটদের বক্সের বারান্দায়। স্কোরবোর্ডে কেকেআরের রান তখন ৭৭-৭। ডান দিকে ঝুঁকে পড়ে নাইটদের আর এক মালিক জুহি চাওলাকে কী যেন বললেন। তার পরে দ্রুত ঢুকে পড়লেন বক্সের ভিতর। সেখান থেকেই দেখলেন পীযূষ চাওলার আউট। এর পরেই বাদশার স্টেডিয়াম ছাড়ার প্রস্তুতি।
এমনিতেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচ মানে তা শাহরুখের কাছে মর্যাদার লড়াই। প্রত্যেক বছরই যে ম্যাচটি এলে শাহরুখ স্বপ্ন দেখেন তাঁর শহর মুম্বইকে হারানোর। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা শাহরুখকে ব্যর্থতার ধাক্কাই দিয়ে গিয়েছে। গত এগারো বছরে ইডেনে তাঁর দল এই ম্যাচটায় হেরেছে নয় বার। অতীতে এই ম্যাচেই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে শাহরুখের বিতর্কে জড়িয়ে পড়া। কিন্তু এ বারও সেই দুর্ভাগ্যই তাড়া করল শাহরুখকে। এল না প্রত্যাশিত জয়। পর পর দুই ম্যাচে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে হার। তার উপর এ দিনই কেকেআরকে টপকে আইপিএলের প্রথম চারে ঢুকে পড়ল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ফলে হতাশা স্বাভাবিক।
রবীন্দ্রজয়ন্তীর রাতে অতীতে ইডেনে এসে ‘হোয়ার দ্য মাইন্ড ইজ উইদাউট ফিয়ার...’ আওড়েছেন শাহরুখ। কিন্তু বুধবারের রবীন্দ্রজয়ন্তীর রাতে তিনি মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়তে পারলেন কোথায়?
গত কয়েক ম্যাচ ধরেই শাহরুখকে দেখার প্রত্যাশায় চাতকের মতো প্রতীক্ষায় ছিলেন কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ। দুপুরেই জানা হয়ে গিয়েছিল, এ দিন মাঠে হাজির থাকবেন শাহরুখ। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে ভেসে উঠেছিল শাহরুখের টুইট, ‘কলকাতা ইডেনে দেখা হচ্ছে। আজকে প্রিয় দলের জন্য সমর্থনের আওয়াজ যেন সবকিছু ছাপিয়ে যায়।’ সেই আকর্ষণেই সূর্য ডুবতে কলকাতা ইডেনমুখী।
কেকেআর অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকের স্কোয়াশ চ্যাম্পিয়ন স্ত্রী দীপিকা পাল্লিকল, রবিন উথাপ্পার স্ত্রী শীতল গৌতম, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অধিনায়ক রোহিত শর্মার স্ত্রী রীতিকা সচদে, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স মালকিন নীতা অম্বানী-রা মাঠে চলে এসেছিলেন ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই। কিন্তু নাইটদের মালিক শাহরুখ কোথায়?
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ব্যাটিংয়ের সময় প্রথম দশ ওভার এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছিল ইডেনের প্রতিটি ব্লকে। কিন্তু তিনি, শাহরুখ খান তখন বাইপাসের ধারে নাইটদের টিম হোটেলে বিশ্রাম নিচ্ছেন। অবশেষে ঘড়ির কাঁটায় ন’টা বাজতেই ‘বাদশা’ হাজির ইডেনে। হসপিটালিটি বক্সের বারান্দায় তিনি দাঁড়াতেই ইডেনের বৈদ্যুতিন স্কোরবোর্ডে ভেসে উঠল তাঁর আগমন বার্তা। যা দেখে মাঠে হাজির দর্শক জয়োল্লাসে এমন চিৎকার করে উঠলেন যেন কলকাতা ম্যাচটা জিতেই গিয়েছে।
কেকেআর মালিক বারান্দায় দাঁড়িয়েই দেখলেন ব্যাট করছেন বিপক্ষ অধিনায়ক রোহিত শর্মা। বোলার কুলদীপ যাদব। কিন্তু সেই তেরোতম ওভারে কুলদীপকে ঈশান কিসান শেষ চার বলে চারটি ছক্কা মেরে ম্যাচ তখন নিয়ে যাচ্ছেন মুম্বইয়ের দিকে। তখনই মনে হয়েছিল, দিনটা আজ হয়তো শাহরুখের নাও হতে পারে। আর শেষ পর্যন্ত তা হয়ওনি।