ছন্দে: আইএসএলের মাসের সেরার পুরস্কার নিয়ে কৃষ্ণ। টুইটার
গত বছর আইএসএলে যেখানে শেষ করেছিলেন, এ বার যেন সেখান থেকেই শুরু করেছেন ফিজি থেকে আসা এটিকে-মোহনবাগানের তারকা স্ট্রাইকার। ডার্বি-সহ টানা তিন ম্যাচে তিন গোল। ওড়িশা ম্যাচ জিতিয়ে রয় কৃষ্ণ একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।
প্রশ্ন: এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে আইএসএলের প্রথম ডার্বিতে গোল করার অনুভূতি কেমন ছিল?
রয় কৃষ্ণ: আইএসএলে এটিকে-মোহনবাগানের হয়ে ঐতিহাসিক ওই ডার্বিতে গোল করে আমি গর্বিত। আমার কাজই তো গোল করা। কিন্তু ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি ক্লাব এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গোল করাটা স্মরণীয় অনুভূতি।
প্র: ‘এ’ লিগে দাপিয়ে খেলার পরে এখন আইএসএলে খেলছেন। দুই লিগের পার্থক্য কী?
কৃষ্ণ: অস্ট্রেলিয়ার ‘এ’ লিগ আইএসএলের অনেক আগে থেকে চলছে। সেখানে এখন গোটা বিশ্বের সেরা প্রতিভাদের খেলতে দেখা যায়। প্রতিটি ক্লাবের যুব ফুটবলার তুলে আনার জন্য সুন্দর অ্যাকাডেমি রয়েছে। সেখান থেকেই প্রতিভাবান কিশোর ফুটবলারেরা উঠে আসে। তা ছাড়া নবীন ফুটবলারদের উৎসাহ বাড়ানোর জন্য রয়েছে নানা রকম পুরস্কার। এ রকম অনেক পাথর্ক্য আছে। ঠিক ভাবে এগোলে আগামী দিনে আইএসএলের মানও আরও বাড়তে পারে।
প্র: ওড়িশার বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে গোল করে সেই আপনিই জেতালেন।
কৃষ্ণ: আমি খুবই খুশি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা হাল ছাড়িনি। অনুশীলনে রোজ হেড দেওয়ার মহড়া চালিয়ে গিয়েছি। সেই অনুশীলন কাজে লেগে গিয়েছে।
প্র: ওড়িশার বিরুদ্ধে গোল করে কাকে উড়ন্ত চুম্বন দিলেন?
কৃষ্ণ: আমার ধাত্রী মায়ের উদ্দেশে ওই উৎসব। বৃহস্পতিবার ওঁর জন্মদিন ছিল। নিউজ়িল্যান্ডে আমাকে নিজের ছেলের মতো দেখভাল করেছেন। এখনও রোজ ফোন করে খবর নেন।
প্র: সতীর্থ প্রবীর দাস, প্রীতম কোটাল, প্রণয় হালদার, সন্দেশ জিঙ্ঘনদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন?
কৃষ্ণ: ওরা প্রত্যেকেই দুর্দান্ত ফুটবলার। যে কারণে ভারতের জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সন্দেশরা। ওদের পাশে খেলতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ওরাও যত বিদেশি ফুটবলারদের সঙ্গে খেলবে তত অভিজ্ঞ হবে। সবুজ-মেরুন শিবিরকে শক্তিশালী করতে ওদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। মাঠের বাইরে ওরা ভাল বন্ধুও।
প্র: কলকাতায় আসার আগে মোহনবাগান ক্লাব, সমর্থকদের সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল?
কৃষ্ণ: ধারণা থাকবে না, তা কী করে হয়? সমর্থকেরা কতটা আবেগপ্রবণ তা ওদের বার্তা থেকেই বুঝতে পারি। এ রকম ঐতিহ্যশালী ক্লাবের অধিনায়কের ব্যান্ড হাতে উঠলে নিজের উপরে চাপও বেড়ে যায়। একজন বিদেশি হিসেবে সমর্থকদের এই ভালবাসা আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। ওঁদের সমালোচনাকেও শ্রদ্ধা করি। ভক্তদের হাসি মুখটা দেখার জন্যই মাঠে নেমে নিজেদের নিংড়ে দিই।
প্র: কোচ হাবাস সম্পর্কে আপনার মত কী?
কৃষ্ণ: কোচ হাবাস আমাদের দলের শেষ কথা। সেরাটা তো উনিই বার করে আনেন। এটিকে-মোহনবাগানের মস্তিষ্ক হাবাস। আমাদের শক্তি-দুর্বলতা ধরে প্রত্যেক ম্যাচের রণনীতি সাজানোয় ওঁর জুড়ি মেলা ভার। ব্যক্তির চেয়েও হাবাসের কাছে দলের গুরুত্ব বেশি।
প্র: গত বছর ১৫ গোল করেছিলেন। এ বার আপনার লক্ষ্য কী?
কৃষ্ণ: অবশ্যই গত বছরের গোলসংখ্যা ছাপিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আমি নিজেই।
প্র: আপনি কি এখন পুরোপুরি ম্যাচ ফিট?
কৃষ্ণ: এখনও ফিটনেসের শিখরে যেতে পারিনি। অনুশীলনে প্রচুর খাটছি। এক মাসের মতো বল নিয়ে মাঠে নেমেছি। তাই আরও অনেক পরিশ্রম করতে হবে নিজেকে ক্ষুরধার করতে।
প্র: ভারতে কোন ডিফেন্ডার আপনাকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারেন?
কৃষ্ণ: আইএসএলে প্রত্যেক দলেই ভাল ডিফেন্ডারেরা রয়েছেন। তাই বিশেষ ভাবে কারও নাম বলতে চাই না। তা ছাড়া, সব দলের বিপক্ষে তো খেলিইনি। মাঠে নামার সময়ে মাথায় রাখি, বিপক্ষে সেরা ডিফেন্ডার রয়েছে। তাকে টপকেই গোল করতে হবে।
প্র: আপনি নাকি অমিতাভ বচ্চনের ভক্ত?
কৃষ্ণ: অবশ্যই। অমিতাভ একজন কিংবদন্তি। সিনেমার বাইরেও ওঁর দায়বদ্ধতা, আচরণ, পরিশ্রমের তাগিদ আমার কাছে প্রেরণা।