বিতর্কিত প্রাক্তন আইসিসি প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশের প্রভাবশালী মন্ত্রী মুস্তাফা কামাল শুক্রবার সপরিবার শহরে। ছবি: উৎপল সরকার।
প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের একাংশের মধ্যে তীব্র ভীতি রয়েছে যে, আসন্ন বাংলাদেশ সফরে তাঁদের উত্তেজিত গণসমর্থনের বিরুদ্ধে পড়তে হতে পারে। সোজা কথায়, তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।
কামাল: কোথা থেকে শুনছেন এ সব কথা! সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ঠিক উল্টো, গোটা বাংলাদেশ ভারতীয় ক্রিকেটারদের স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষায় আছে। ইন্ডিয়া এলে একটা দারুণ এক্সাইটমেন্ট হবে। ক্রিকেট উৎসবের চেহারা নেবে।
প্র: কিন্তু বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের পর যে ভাবে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী সেন্টিমেন্ট আছড়ে পড়েছে এবং তারও আগে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্লগার অভিজিৎ রায় খুন হওয়াতেই নাকি ক্রিকেটাররা এত উদ্বিগ্ন। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তাঁদের কারও কারও দুর্ভাবনা, আবার ক্রিকেট ঘিরে এমন উত্তেজক কিছু ঘটে না তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।
কামাল: বিন্দুমাত্র কোনও আশঙ্কা নেই। বরঞ্চ গোটা দেশ উদ্বেল হয়ে ভারতীয় সিরিজের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে হাজির থাকবেন ওয়ান ডে দেখতে। জগমোহন ডালমিয়াকে কাল দেখা করে আমরা বিশেষ আমন্ত্রণ জানাব অন্তত এক দিনের জন্যেও আসার জন্য। ডালমিয়া হলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের গডফাদার। ওঁর জন্যই আমরা টেস্ট স্টেটাস পাই। সেই ঋণ বাংলাদেশ ভোলেনি।
প্র: সে তো শ্রীনিবাসনও বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছু করেছেন বলে শোনা যায়। উনি না থাকলে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পেত না।
কামাল: একদম বাজে কথা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোথায় হবে, উনি আসার আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল।
প্র: আপনি ছিলেন আইসিসি প্রেসিডেন্ট। শ্রীনি চেয়ারম্যান। পদে বসার পরপর আপনি প্রচুর প্রশংসা করতেন শ্রীনির।
কামাল: হ্যাঁ করতাম। তখনও জানতাম না ওঁর বাড়ির লোকেরা এই ভাবে বেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। জানতাম না ক্রিকেট প্রসারের নামে উনি এতটা বেনিয়া। আইসিসিতে পরবর্তীকালে ওঁর হাবভাব দেখে আমার মনে হত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আবার ফেরত এল নাকি? খালি ধান্দা টাকা রোজগারের আর নিজের কাছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার। কোথায় ক্রিকেটের বিশ্বায়ন হবে, তা নয়। আইসিসি পরের বিশ্বকাপে টিমের সংখ্যা ১৪ থেকে ১০-এ নামিয়ে আনছে। খালি বলে টাকা, টাকা। কোথা থেকে কত রোজগার হবে। আরে, কোথাও তো ব্যাট আর বলের কথাটা বল।
প্র: বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ভারত হারানোর পর আপনি যে সব কথা বলেছিলেন, অনেকের মতে উত্তেজনা তাতেই বাড়ে।
কামাল: একটা কথা ভাল করে বুঝুন। আমি কিন্তু ইন্ডিয়ার এগেনস্টে বলিনি। আমি একটা লোকের এগেনস্টে বলেছিলাম। আইসিসির প্রেসিডেন্ট ছিলাম আমি। উনি চেয়ারম্যান। অপারেশনের দায়িত্ব ওঁর হাতে। মেলবোর্নে সে দিন উনি আমাদের ম্যাচে স্পাইক্যাম কেন রাখেননি বলতে পারেন? কেন টিভি রিপ্লের বেছে বেছে সে দিনই ব্যবস্থা করা হয়নি? মাহমুদউল্লাহর ক্যাচটা তো লাইনের বাইরে থেকে ধরা। অথচ টিভিতে দেখায়ইনি। স্কোরবোর্ডের ওপরে যে দেখাচ্ছিল ইন্ডিয়া জিতেগা জিতেগা, এটা কী? এটা তো আইসিসির স্পেস। সেখানে একটা টিমের প্রতি এমন পক্ষপাত দেখানো হবে কেন? এগুলো সব শ্রীনির কীর্তি। ফেয়ার প্লে-তে এই লোকটা বিশ্বাসই করে না।
প্র: এমসিজির ফাইনালে আপনাকে আইসিসি প্রেসিডেন্ট হয়েও পুরস্কার দিতে দেওয়া হয়নি। তখন আপনি বলেছিলেন আইসিসির বিরুদ্ধে মামলা করবেন। করেননি। বরঞ্চ পদে ইস্তফা দিয়ে দেন। কেন?
কামাল: পরে ভেবে দেখি সেটা করাটা খুব অনুচিত কাজ হবে। ইনস্টিটিউশনের একটা লোক পচা। তা বলে প্রতিষ্ঠানটা তো নয়। এই লোকটার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস দেখায়নি। আমি দেখাই।
প্র: শ্রীনি ভারতীয় বোর্ডের দায়িত্বে থাকলে কিন্তু বাংলাদেশ সফর হতই না।
কামাল: জানি তো। গোটা বাংলাদেশ খুব খুশি যে ভারতীয় বোর্ড থেকে ওঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশ শ্রীনির ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত। আজ রাতের প্লে-অফে আমার গোটা দেশ আরসিবিকে সাপোর্ট করবে। স্রেফ শ্রীনির জন্য কেউ সিএসকে-কে দেখতে পারে না। এই একটা মানুষ বাংলাদেশে ভারতের ভাবমূর্তিতে কাদা ছেটাচ্ছে।
প্র: শেখ হাসিনা তো বিশ্বকাপের পর আপনার সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছিলেন?
কামাল: একে তো উনি অসম্ভব ক্রিকেট ভক্ত। একেবারে প্রথম বল থেকে খেলা দেখেন। তার ওপর ওঁর মন্ত্রীসভার সদস্য আমি। আমার সঙ্গে এই রকম ব্যবহার করা হয়েছে। তাই উনি চুপ করে থাকেননি।
প্র: তো আপনার দাবি এখন সেই বিশ্বকাপ সময়ের উত্তেজনাটা নেই? ধোনি বা কোহলির ভারত— কারও কোনও অসুবিধে হবে না?
কামাল: একেবারেই না। আমি তো ইন্ডিয়ান টিমের সম্মানে ডিনার দেব ঠিক করেছি। দারুণ সংবর্ধনা পাবে ওরা এলে। তার আগে অবশ্য নরেন্দ্র মোদী আসছেন। ওঁকেও নজিরবিহীন সংবর্ধনা দেব আমরা। তবে ওই একটা লোককে বাংলাদেশ ক্ষমা করতে পারবে না।
প্র: নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন?
কামাল: ইয়েস। বাংলাদেশে লোককে গালাগাল দিলে একটা সময় মীরজাফরের নাম উঠত। এখন ১৭৫৭ উধাও। নতুন নাম পাওয়া গেছে ২০১৫-তে। শ্রীনি। কারও ওপর কেউ প্রচণ্ড রেগে গেলে বা কারও সঙ্গে ঝগড়া হলে আমাদের দেশে লোকে এখন বলে, তুই ব্যাটা শ্রীনি! একদম কথা বলিস না!