কাজ করতে পারছিলেন না আগের মতো। তাই ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব ছেড়েছেন আলেয়ান্দ্রো। —ফাইল চিত্র।
আই লিগের প্রথম ডার্বি ম্যাচের আগে থেকেই চাপ বাড়ছিল আলেয়ান্দ্রো মেনেন্দেজের উপরে। তাঁর সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকর্তারাও। মোহনবাগান ম্যাচ ছিল তাঁর কাছে লাইফলাইন। সবুজ-মেরুনকে হারাতে পারলে চাপমুক্ত হতে পারতেন সমর্থকদের বড় প্রিয় ‘আলে স্যর’। সেটা আর হয়নি। মোহনবাগানের কাছে হারের দিন দু’য়েক পরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চাকরি ছাড়েন মেনেন্দেজ। তিনি চলে গেলেও তাঁকে নিয়ে উত্তাল হয় সোশ্যাল মিডিয়া। কেউ তাঁর হয়ে গলা ফাটান। আবার কেউ তাঁর দিকে আঙুল তোলেন। তিনি, আলেয়ান্দ্রো মেনেন্দেজ কী বলছেন?
হঠাৎ করেই পৃথিবীটা বদলে গিয়েছে। করোনাভাইরাসের জন্য সব বন্ধ। যদিও আপনার দেশে ফুটবল ফিরেছে। কিন্তু আপনি তো কোনও ক্লাবের সঙ্গে এখন যুক্ত নন। কেমন কাটছে আপনার দিনগুলো? প্রিয় ফুটবল থেকেই তো আপনি অনেক দূরে?
এখন ফুটবল নিয়ে মানুষজনের ভাববার অত সময় নেই। আগে নিজেদের জীবন বাঁচাতে হবে। করোনাভাইরাসের জন্য বিশ্ব জুড়ে যে অতিমারি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে সবার মতো আমিও খুবই চিন্তিত। যদিও স্পেনে ফুটবল শুরু হয়েছে। আমি সে দিকে নজর রাখছি। খেলা দেখছি, ক্লাবগুলো সম্পর্কে নিজেকে আপডেট রাখার চেষ্টা করছি। প্লেয়ারদের সম্পর্কেও খোঁজখবর রাখছি। নিজেকে আপডেটেড রাখাটা সব চেয়ে জরুরি। সেই কাজটাই করে চলেছি।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক তো খুবই ভাল ছিল এক সময়ে। এখনও কি আগের মতোই ভালবাসা পান লাল-হলুদ সমর্থকেদের কাছ থেকে? ওঁদের সঙ্গে কি যোগাযোগ রয়েছে?
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আগেও স্পেশাল ছিল। এখনও তা-ই রয়েছে। একটা জায়গা থেকে চলে আসা মানে সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়া নয়। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা এখনও আমাকে ভালবাসেন। ওঁদের সঙ্গে কথা বললেই তা আমি বুঝতে পারি। অনেকেই দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা আমার সঙ্গে শেয়ার করেন। আগে কেমন পরিস্থিতি ছিল, এখন তা কতটা বদলেছে, তা-ও আমাকে অনেকে জানান। ক্লাব সম্পর্কে ওঁদের অনুভূতি, আবেগ আমার সঙ্গে শেয়ার করেন।
আরও পড়ুন: ‘ওয়ার্নের চেয়ে মুরলীর বলে বৈচিত্র বেশি ছিল’
বল পায়ে আলেয়ান্দ্রো।
প্রথম বছর আপনি স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সমর্থকদের। কিন্তু দ্বিতীয় বছর সব তালগোল পাকিয়ে গেল। পরিস্থিতি এমনই হল যে, মরশুমের মাঝপথে কাউকে কিছু টের পেতে না দিয়ে আপনি কোচের চেয়ার থেকেই সরে দাঁড়ালেন। দলটাও ভেঙে গেল। পিছন ফিরে তাকালে আপনার কি মনে হয়, থেকে গেলেই ভাল হত?
ইস্টবেঙ্গল কোচ হিসেবে প্রথম বছরটা বেশ ভালই কেটেছিল। আমরা যে ভাবে কাজ করেছিলাম, তা সবার চোখে পড়েছিল। আমাদের কাজ করার পদ্ধতি অনেকেই কপি করার চেষ্টা করেছিল। শুধু রেজাল্টের কথা বলব না, মাঠে ঝলকানি দেখিয়েছিল টিম। আই লিগের দলগুলোর মধ্যে ইস্টবেঙ্গল থেকেই দু’জন ফুটবলার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিল। ভারতীয় প্লেয়ারদের মাঠের পারফরম্যান্স দারুণ ছিল। তার ফলে অন্যান্য ক্লাবগুলো ইস্টবেঙ্গল প্লেয়ারদের দলে নিতে আগ্রহী ছিল। ওদের দর বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বছরটায় প্রথম বছরের মতো কাজ করতে আর পারলাম না। ইনভেস্টর সরে যাবে এ রকম একটা বিষয় সব এলোমেলো করে দিল।
আপনি তো লড়াকু কোচ। হঠাৎ করে সরে গেলেন কেন? কোথায় কেটে গেল সুর?
আমি আগেও এই ব্যাপারে বলেছিলাম। এখনও সেই একই কথা বলছি। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে ইস্তফা দিয়ে চলে আসা আমার কাছেও অত্যন্ত দুঃখজনক একটা ব্যাপার। আমিও যন্ত্রণা পেয়েছি। তবে আমাকে সরে যেতেই হত। ক্লাবের অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য আমি ভাল করে কাজটাই করতে পারছিলাম না। প্রথম বছরে যে ভাবে নিজেকে মেলে ধরে কাজ করেছিলাম, দ্বিতীয় বছর সে ভাবে করতে পারলাম কোথায়!
অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ, নতুন মুখদের নিয়ে কাজ করেছিলেন আপনি। জবি জাস্টিনের মতো এক জন স্ট্রাইকার তৈরি করেছিলেন ভারতীয় ফুটবলের জন্য। দ্বিতীয় বছর আবার মার্কোস দে লা এসপাড়ার মতো স্ট্রাইকার এনেছিলেন।
যাঁরা অভিজ্ঞ এবং ফুটবলে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন, তাঁদের নিয়ে কাজ করা তো খুব সহজ ব্যাপার। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন, অভিজ্ঞদের দিয়ে ক্লাব বা দেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব নয়। বিশ্বসেরা ক্লাবগুলোর দিকে আপনি যদি নজর দেন, তা হলে দেখবেন সেই সব ক্লাবে তরুণ প্লেয়ার যেমন রয়েছে, তেমনই অভিজ্ঞ প্লেয়ারও রয়েছে। অভিজ্ঞরা যেমন থাকবে তেমনই তরুণ প্লেয়ারদেরও তুলে ধরতে হবে। আর তরুণ প্লেয়ারদের ঠিকঠাক রাস্তা দেখানো হলে তারাই কিন্তু ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারবে। কারণ তরুণরাই তো ভবিষ্যৎ। এটাই তো পরিকল্পনা হওয়া উচিত। আমিও সেই চেষ্টাই করেছিলাম। উদাহরণ যদি দিতেই হয়, তা হলে আমি জবি জাস্টিনের কথাই বলব।
অনুশীলনে আলেয়ান্দ্রো। তখন তাঁর হাতে ইস্টবেঙ্গলের রিমোট কন্ট্রোল।
আপনি নিশ্চয় জানেন, নিন্দুকরা কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতার জন্য আপনার দিকেই আঙুল তুলছেন। আপানার কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি এ ব্যাপারে। এই ধরনের সমালোচনা নিশ্চয় আপনার মনেও ঝড় তোলে?
কলকাতা ছাড়ার পরে অনেক মিথ্যা এবং বানানো তথ্য পরিবেশিত হয়েছে আমার নামে। আমাকে আক্রমণ করা হয়েছে। এর থেকে অনেকেই সুবিধা নিয়েছে। সেটাও আমি জানি। আমি পেশাদার কোচ। আমাকে নিয়ে যা রটল, যে খবর পরিবেশিত হল, সেই বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না। পেশাদার জগতে এমন কাজ কেউই করবেন না। দিনের শেষে প্রমাণ হয়ে যাবে, কে ঠিক আর কে বেঠিক। সত্যিটা প্রকাশিত হবেই এক দিন।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ গড়াপেটা তদন্তে ছয় ঘণ্টা জেরা অরবিন্দ ডি সিলভাকে
ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করিয়েছেন। ফের কি ভারতে ফিরতে চান?
আমি আবার ভারতে কাজ করতে চাই। ভারতীয় ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনও প্রজেক্ট পেলে আমি নিশ্চয় ফিরতে রাজি। ইস্টবেঙ্গলের কোচ হিসেবে আমার কাজের জন্য ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছিল শেষ ম্যাচে। এটা আমার কাছে বড় পাওনা।