দিলীপ দোশী। —ফাইল চিত্র
বাংলা ও সৌরাষ্ট্র, দু’দলের হয়েই রঞ্জি ট্রফি খেলেছেন। দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাকে। ৮৯৮ উইকেট রয়েছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। ৩৩টি টেস্টে প্রাক্তন বাঁ-হাতি স্পিনারের উইকেটসংখ্যা ১১৪। রঞ্জি ফাইনালে বিশেষ অতিথি হিসেবে এসসিএ স্টেডিয়ামে এসেছেন। সংস্থার বাইরে টাঙানো তাঁর ছবি দেখে স্মৃতিরোমন্থন করছিলেন। তার ফাঁকেই আনন্দবাজারকে সময় দিতে রাজি হয়ে গেলেন দিলীপ দোশী। বাংলা ক্রিকেটের উত্থান থেকে অরুণ লালের মানসিকতা। এমনকি শাহবাজ আহমেদের কোথায় উন্নতি প্রয়োজন, সব কিছু নিয়েই খোলামেলা বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক।
প্রশ্ন: বাংলা এবং সৌরাষ্ট্র, দু’দলের হয়েই খেলেছেন। ফাইনালে দু’দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখে কী রকম অনুভূতি হচ্ছে?
দোশী: দু’দলের হয়ে খেললেও বাংলাই আমার প্রথম দল। তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কলকাতায় বড় হয়েছি। নিজেকে বাঙালি বলতেই বেশি ভালবাসি। রঞ্জি ফাইনালে যে দল স্নায়ুর চাপ সামলাতে পারবে, তারাই জিতবে।
প্রশ্ন: শাহবাজের বোলিং দেখছেন। কোথাও উন্নতি করা উচিত?
দোশী: ওকে দেখে ভাল লেগেছে। ও কিন্তু একই লাইনে বল করে যাচ্ছে। বড় ম্যাচে সেটাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে বড় ব্যাটসম্যানেরা কিন্তু সহজে ধৈর্য হারিয়ে শট নিতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসে না। বেশ কয়েক বার পরাস্ত করে তাদের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে হয়। শাহবাজ তা পারবে। শুধুমাত্র বৈচিত্র বাড়াতে হবে। পারলে আরও আস্তে বল করুক। বল হাওয়ায় ভাসাক।
প্রশ্ন: এসসিএ স্টেডিয়ামের পিচ নিয়ে আপনার কী মত?
দোশী: কিছুটা অস্বাভাবিক তো বটেই। প্রথম দিন থেকেই বল নিচু হয়ে যাচ্ছে। তৃতীয় দিনে তা হলে কী হবে? সাধারণত রাজকোটে ব্যাটসম্যানেরা সাহায্য পায়। কিন্তু এই পিচে ব্যাটিং করাও কঠিন। পেসাররা এমনিতেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলবে। তৃতীয় দিন থেকে স্পিনারেরা বড় ভূমিকা পালন করবে।
প্রশ্ন: অরুণ লাল আপনার নেতৃত্বে খেলেছেন। তখন থেকেই কি তিনি এতটা আগ্রাসী?
দোশী: বরাবর। শুরু থেকেই ওকে দেখেছি কখনও হার মানতে চায় না। ও যে কোনও ক্রিকেটারের অনুপ্রেরণা। ওর মতো লড়াকু মানসিকতা দেখা যায় না। কোনও কারণ ছাড়া তো ওর নাম ফাইটার দেওয়া হয়নি। কোচ হিসেবে ও দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দলের মানসিকতা বদলে গিয়েছে। গত বছর বাংলার নামই শোনা যায়নি। এ বছর ক্রিকেটমহলে বাংলার ক্রিকেটারদের নাম ভালই আলোচনা হচ্ছে।
প্রশ্ন: অধিনায়ক থাকাকালীন বড় ম্যাচের আগের দিন দলকে কী বার্তা দিতেন?
দোশী: একটা কথাই বলতাম, উপভোগ করো। ফলের চিন্তা না করে নিজের সেরাটা দাও। ফলের আশায় থাকলে কখনও সেরাটা দেওয়া যায় না। ভয় ভয়ে খেললে হার অনিবার্য।
প্রশ্ন: রঞ্জি ফাইনালে কে জিতলে সব চেয়ে খুশি হবেন। বাংলা না সৌরাষ্ট্র?
দোশী: অবশ্যই বাংলা। এই ম্যাচ পাঁচ দিন গড়াবে। প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকার লক্ষ্য রাখতে হবে যে কোনও দলকে। বাংলা শেষ জিতেছিল ৩০ বছর আগে। সেটা ভুলে গিয়ে খেলতে হবে ওদের। সৌরাষ্ট্রও চেষ্টা করবে স্বাধীনতার পরে প্রথম বার রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হতে। দু’দলের কাছেই ম্যাচটি অন্য মাত্রার।
প্রশ্ন: এক সময় আপনি, উৎপল চট্টোপাধ্যায়, শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো স্পিনার উঠেছে বাংলা থেকে। বর্তমানে বাংলা থেকে স্পিনার উঠে আসছে না কেন?
দোশী: স্পিনার উঠে না আসার নেপথ্যে অনেক কিছু নির্ভর করছে। এখন ভারতীয় ক্রিকেটে পেসারদের রাজত্ব চলছে। স্পিন বোলিংয়ে তেমন জোর দেওয়া হচ্ছে না। তরুণ ক্রিকেটারেরা স্পিন ছেড়ে পেস বোলিং বেছে নিচ্ছে।