পাক অধিনায়কের নিশনায় এখন কে? ছবি: পিটিআই।
আশার আলো, না মৃত্যুঘণ্টা? কী অপেক্ষা করে আছে পাকিস্তানের জন্য?
মঙ্গলবার রাতেই তো এই জল্পনায় পর্দা পড়ে যাবে। কিন্তু ঠিক তার আগেই সে দেশের বোর্ডপ্রধান ও অধিনায়কের মধ্যে যে তুমুল কাজিয়া শুরু হয়ে গেল, তাতে তাঁদের দেশের মিডিয়াই যেন অবাক হয়ে গিয়েছে।
অদম্য নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলে পাকদের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা বেঁচে থাকবে। না পারলে কার্যত বিদায়। কিন্তু তার আগে যে ভাবে একের পর এক জ্বালা ধরানো বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন পিসিবি চেয়ারম্যান শাহরিয়র খান, তা অভাবনীয়।
রবিবার রাতে বিবিসি রেডিও উর্দুতে শাহরিয়র সাফ বলে দেন, ‘‘এই টিমের কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করবেন না।’’ এইটুকুতেই বিতর্কের আগুন জ্বলতে শুরু করে ধিকিধিকি। কিন্তু এ দিন লাহৌরে ফিরে শাহরিয়র ‘‘বিশ্বকাপের পর আফ্রিদি নিজে না সরলে ওকে বোর্ডই সরিয়ে দেবে’’ বলার পর থেকে এই আগুন ক্রমশ দাবানল হয়ে ওঠার দিকে এগোচ্ছে।
আফ্রিদি তাঁর নিজের দেশের ও ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে এ সব শুনে সাফ বলে দিলেন, ‘‘টুইটার, ফেসবুক, কাগজ, টিভির নিউজ কোনওটাই এখন দেখছি না। বাইরে যে যা বলছে বলুক। আমি জানি আমি কী করছি, আমার দল কী করছে। পরে এগুলো দেখা যাবে। আপাতত আমাদের ভাল পারফরম্যান্স দিয়ে এগুলোর মোকাবিলা করতে হবে। সে জন্য মঙ্গলবারের ম্যাচে জেতাই একমাত্র লক্ষ্য।’’
বোর্ড চেয়ারম্যানের বিতর্কিত মন্তব্য যে ক্রিকেটারদের ক্ষুব্ধ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এত দিন যে পাকিস্তান মিডিয়া আফ্রিদিকেই ভিলেন বানিয়ে ফেলছিল, তারাই এখন শাহরিয়রের মন্তব্যে চটেছে। কেউ কেউ তো বলছেন, ‘‘শাহরিয়র এ সব কী বলছেন। এই মুহূর্তে এ সব না বললে চলছিল না?’’
নিউজিল্যান্ড যুদ্ধের আগে পিসিবি বনাম ক্যাপ্টেনের এই লড়াই নিয়েই আপাতত উত্তেজনা তুঙ্গে। পাক সাংবাদিক মহল মনে করছে, এই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে দেশের বোর্ড প্রধান যে ভাবে টিমকে খরচের খাতায় পাঠিয়ে দিয়েছেন, তাতে আফ্রিদির পক্ষে টিমকে তাতিয়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়বে।
তবু আফ্রিদি বললেন, ‘‘শনিবার ইডেনে যারা বেশি ভুল করেছিল, তারাই হেরেছে। আমাদের এই ভুলের বহর এ বার কমাতে হবে। গত দু’দিন ধরে নিজেদের মধ্যে প্রচুর কথা হয়েছে এই বিষয়ে। প্ল্যানিংও হয়েছে। সেই প্ল্যান কাজে লাগিয়ে প্র্যাকটিসের পর কাল আমাদের ‘অ্যাকশন টাইম’। পারফরম্যান্স ভাল করলে সব কিছুর জবাব দেওয়া যাবে।’’ মাঠেই যে যাবতীয় অপমানের জবাব দিতে চান, তা বুঝিয়েই দিচ্ছেন পাক অধিনায়ক। যেন এটাই এখন তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় মোটিভেশন।
কিন্তু কথায় যে আছে ‘অভাগা যে দিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়’। ক্যাপ্টেন বুক ফুলিয়ে এই কথাগুলো বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই হঠাৎ বজ্রপাত পাক শিবিরে। দলের পেস ব্যাটারির প্রধান দুই অস্ত্র ওয়াহাব রিয়াজ ও মহম্মদ আমের— দু’জনেই ঘায়েল। আরও বড় ধাক্কা, মহম্মদ হাফিজের হাঁটুর লিগামেন্টে চোট। এ দিন এমআরআই করে যা ধরা পড়েছে। তাঁর খেলার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। দুই পেসারের এক জন নেট করেননি, অন্য জন মাঝ পথে চোট পেলেন। আমেরের পায়ের পেশিতে টান ধরেছে। সোমবার তাঁকে নেট প্র্যাকটিসে বিশ্রাম দেওয়া হল। তবে তাঁর খেলার সম্ভাবনা ভাল। আর ফিল্ডিং ড্রিলের সময় সতীর্থর ছোড়া বল ডান কাঁধ ও গলার মাঝখানে লেগে ওয়াহাব রিয়াজ কাবু। স্টেডিয়ামের কাছেই এক হাসপাতালে তাঁর কাঁধে স্ক্যান করা হয়। রাতের খবর, তাতে খারাপ কিছু পাওয়া যায়নি। তবে কাঁধে ব্যথা সামান্য রয়েই গিয়েছে।
আফ্রিদিরা এমনিতেই তুমুল মানসিক চাপে। নিজেদের দেশে যা চলছে, তা নিয়ে কম চিন্তায় নেই তাঁরা। মঙ্গলবার হেরে গেলে দেশে তাঁদের পরিবার আক্রান্ত হতে পারে, এমন আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। তাই তাঁরা দেশের সরকারের কাছে তাঁদের পরিবারের সুরক্ষার আবেদনও করেছেন। তার উপর উল্টোদিক থেকে আফ্রিদিদের উপর মানসিক চাপ বাড়িয়ে চলেছে নিউজিল্যান্ড শিবির। এই বলে যে, মোহালিতে এসে তাঁদের নাকি মনে হচ্ছে নিজেদের দেশে কোথাও খেলতে চলে এসেছেন।
চলছে দলের নমাজ। সোমবার মোহালিতে। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়া
রস টেলরদের কোচ মাইক হেসন এ দিন বলে দিলেন, ‘‘মোহালির কন্ডিশন অনেকটা নিউজিল্যান্ডের মতো। ধর্মশালাতেও এমন ‘হোমলি’ পরিবেশ পাইনি।’’ অস্ট্রেলিয়াও একবার ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলতে এসে ঠিক এ কথাই বলেছিল। আসলে এখানকার সবুজ উইকেট, নভেম্বরের কলকাতার মতো তাপমাত্রা, রাতের শিশির, সব মিলিয়ে কিউয়িদের এমন মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
সবুজ উইকেট মানে দু’দলের পেস শক্তির টক্কর। সবুজ উইকেট আবার কিছুটা চিন্তায়ও ফেলে দিয়েছে পাকিস্তানকে। সমস্যা অবশ্যই তাদের ভঙ্গুর ব্যাটিং। প্র্যাকটিসের সময় দফায় দফায় পাকিস্তানের অনেকের পিচ দেখতে ছুটে আসেন। এমনকী ম্যানেজার ইন্তিখাব আলমও উইকেট দেখতে এলেন একবার। কথা বললেন কিউরেটর দলজিত সিংহর সঙ্গে। পরে দলজিত বললেন, ‘‘উইকেটে ঘাস থাকবে। তবে এখন যেমন দেখছেন, কাল হয়তো ততটা থাকবে না, ছাঁটা হবে। তাতে সবুজ ভাবটা হয়তো কমবে। কিন্তু ফ্যাটফ্যাটে সাদা হয়ে যাবে না।’’
হিমাচলের দিক থেকে হাওয়া চলছে সমানে। একটা হালকা ঠান্ডার আমেজ। কিন্তু তার মধ্যেই গনগনে পাক শিবির। যাদের ক্যাপ্টেন এখনও তেজের সঙ্গে বলছেন, ‘‘কত বড় বড় ক্রিকেটারকে কাঁদতে দেখলাম। খেলা ছেড়ে দিতে দেখলাম। ও সব ভেবে যুদ্ধে নামা যায় না। যা হবে দেখা যাবে।’’
মনে হল এইমাত্র শপথ নিয়ে উঠলেন। ক্রিকেট নামক জীবনের যুদ্ধে হেরে না যাওয়ার শপথ।