সম্প্রীতি। এক ফ্রেমে ডালমিয়া-শাহরিয়র। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
সব কিছু ঠিকঠাক চললে বছর শেষে ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য থাকছে বিশেষ ক্রিসমাস উপহার। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট সিরিজ। শহরে দু’দেশের বোর্ড প্রধানের রবিবাসরীয় বৈঠকের পর, এই সিরিজের ভবিষ্যৎ রীতিমতো উজ্জ্বল। তবে প্রশ্ন থেকে গেল, কোথা থেকে শুরু হবে ভারত-পাক ক্রিকেট সম্পর্কের এই নতুন অধ্যায়? ইডেন না দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম?
ডিসেম্বরে ভারত-পাক সিরিজ খেলতে এতটাই মরিয়া পিসিবি, যে তারা ভারতে এসেও ‘হোম সিরিজ’ খেলতে রাজি। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের অনুমতি। পাশাপাশি একটা সমস্যাও থাকছে। সেটা হল, টিভি সম্প্রচার থেকে আয়ের বন্টন। পাকিস্তানের ঘরোয়া সিরিজ সম্প্রচার করার দায়িত্বে টেন স্পোর্টস। যাদের সঙ্গে পিসিবি-র চুক্তি রয়েছে। আর ভারতের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখানোর স্বত্ব রয়েছে স্টার স্পোর্টসের। ফলে প্রশ্ন উঠছে, ভারতের মাটিতে পাকিস্তানের ‘হোম সিরিজ’ হলে তা সম্প্রচার করবে কারা এবং তা থেকে যা আয় হবে, তা ভাগাভাগি হবে কী ভাবে?
এই সমস্যাগুলো যদি মেটানো যায়, তা হলে বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার ইচ্ছে, ইডেন থেকেই ফের শুরু হোক ভারত-পাক ক্রিকেট যুদ্ধ। যদিও পিসিবি চেয়ারম্যান শাহরিয়র খান এ দিন বৈঠকের পর বলে গেলেন, ‘‘ডিসেম্বরে ভারত-পাক সিরিজের আয়োজন করার জন্য তৈরি আরব আমিরশাহি। তিনটে টেস্ট, পাঁচটা ওয়ান ডে আর দু’টো টি-টোয়েন্টি হওয়ার কথা।’’ আপাতত আইসিসি-র যা উইন্ডো, তাতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এই সিরিজ আয়োজন করা সম্ভব। এর মধ্যে বাংলাদেশ বোর্ডও ভারত-পাকিস্তান সিরিজ আয়োজনের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। যা এ দিন জানালেন শাহরিয়র নিজেই।
বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক সেরে এ দিন সন্ধ্যার বিমানেই দিল্লি রওনা হয়ে গেলেন সস্ত্রীক শাহরিয়র। সোমবার তিনি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। যেখানে ভারত-পাক সিরিজ নিয়ে সরকারি সম্মতি পাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হওয়ার কথা।
এ দিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ দশ নম্বর আলিপুর রোডের বাড়িটাতে ঢোকার সময় তাঁর মুখে যে রকম হাসি ছিল, পৌনে এক ঘণ্টা পর সেখান থেকে শাহরিয়রের গাড়ি বেরনোর সময়ও দেখা গেল সেই চওড়া হাসি। পুরনো বন্ধু ডালমিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ার আনন্দ এবং ভারত-পাক সিরিজ নিয়ে নিশ্চয়তা পেয়ে যাওয়ার স্বস্তি যেন মিলেমিশে একাকার। সঙ্গে বোনাস হিসেবেও পেয়ে গেলেন আরও এক আশ্বাস। ডিসেম্বরে ভারত-পাক সিরিজ যেখানেই হোক, ঠিকঠাক উতরে গেলে হয়তো পাক ক্রিকেটারদের সামনে খুলে যেতে পারে আইপিএলের দরজাও। বোর্ড সূত্রে খবর, এই বিষয়েও এ দিন আলোচনা হয় দুই বোর্ড প্রধানে।
এত ইতিবাচক আশ্বাসের সঙ্গে শাহরিয়র এ দিন নিয়ে গেলেন প্রচুর উপহারও। শহরে এসে আবদার করেছিলেন, চানাচুর নিয়ে যাবেন। সেই চানাচুর তো তাঁকে দেওয়া হলই। এ ছাড়াও কলকাতার বিখ্যাত রসগোল্লাও নিয়ে গেলেন পাক বোর্ড প্রধান। স্ত্রী-র জন্য শাড়ি ও তাঁর নিজের জন্য স্যুট পিস তাঁকে উপহার হিসেবে দেন ভারতীয় বোর্ড প্রধান। শাহরিয়রও তাঁর পুরনো বন্ধুকে দিয়ে গেলেন পাকিস্তানের ক্রিকেটে রাজনৈতিক ওঠাপড়া নিয়ে তাঁর লেখা বই ‘ক্রিকেট কলড্রন’ এবং দেশ থেকে আনা আরও নানা উপহার।
কুড়ি-বাইশ ঘন্টা আগেই যে শহরের বিমানবন্দরে আটক হয়ে ছিলেন, সেই শহরে এসে এমন আতিথেয়তা পেয়ে শাহরিয়রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মিস্টার ডালমিয়ার বাড়িতে এসে যে ঘরোয়া পরিবেশে আলোচনা করার সুযোগ পেলাম, এই অভিজ্ঞতা চিরকাল মনে থাকবে।’’