সাফল্যের পিছনে নতুন কোচ: শ্রীকান্ত

গত রবিবার ইন্দোনেশিয়া ওপেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরদিনই উড়ে গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। গোটা দিনটাই বিমানে কেটেছে। তাই যোগাযোগ করা যায়নি। কথা দিয়েছিলেন সিডনিতে পৌঁছে সাক্ষাৎকার দেবেন।

Advertisement

শমীক সরকার

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৭ ০৪:১৯
Share:

নায়ক: ধারাবাহিকতা ধরে রাখাটাই শ্রীকান্তের চ্যালেঞ্জ। ফাইল চিত্র

কোচেদের কথা মতো চলা, প্রবল খাটনি আর কোর্টে চাপ না নিয়ে পারফর্ম করা। এই সহজ রেসিপি মেনে তিনি এখন আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনে ভারতের অন্যতম চমক।

Advertisement

গত রবিবার ইন্দোনেশিয়া ওপেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরদিনই উড়ে গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। গোটা দিনটাই বিমানে কেটেছে। তাই যোগাযোগ করা যায়নি। কথা দিয়েছিলেন সিডনিতে পৌঁছে সাক্ষাৎকার দেবেন। মঙ্গলবার দুপুরে শেষ পর্যন্ত যোগাযোগ করা গেল তাঁর সঙ্গে। কিদম্বি শ্রীকান্তের সঙ্গে।

ইন্দোনেশিয়ায় ফাইনালের পরেই দেখা গিয়েছিল ভারতের নতুন কোচ মুলয়ো হান্দোয়োকে জড়িয়ে ধরেছেন শ্রীকান্ত। চলতি বছরের গোড়ার দিকেই জাতীয় দলের প্রধান কোচ পুল্লেলা গোপীচন্দের চাপ কমাতে যাঁকে আনা হয়েছিল। তাঁর কোচিংয়েই কি আলাদা কোনও লাভ হচ্ছে?

Advertisement

আনন্দবাজারকে শ্রীকান্ত ফোনে বললেন, ‘‘উনি আসার পরে আমাদের প্র্যাকটিসের ধরনে বদল এসেছে। আগে তিনটে সেশনে প্র্যাকটিস করতাম আমরা। এখন তার বদলে দুটো লম্বা সেশনে প্র্যাকটিস করি। একটা সকালে আর একটা বিকেলে। তাতে প্রচুর লাভ হচ্ছে। এনার্জি, ফিটনেস লেভেল ম্যাচে আরও উন্নত হয়েছে।’’

ইন্দোনেশিয়ায় মুলয়ো হান্দোয়ো খুব সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব। তৌফিক হিদায়াতের প্রাক্তন কোচ হিসেবে। তাঁর কোচিংয়েই ২০০৪ আথেন্স অলিম্পিক্সে সোনা এবং পরের বছরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা হন তৌফিক। গোপীচন্দই তাঁর নাম সুপারিশ করেছিলেন নতুন কোচ হিসেবে। ডিসেম্বরে তাঁর নাম পাশ করে সাই। তিনি এসে দুটো জিনিসে বেশি গুরুত্ব দেন। এক কোর্টে দীর্ঘসময় দম ধরে রাখা আর মানসিক শক্তি। শ্রীকান্ত বলছিলেন। ‘‘আমি দিনে ছ’ঘণ্টা প্র্যাকটিস করি। তা ছাড়া কোচ আলাদা ভাবেও প্রত্যেককে ভুল-ত্রুটি দেখিয়ে দেন। সেটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’’

আরও পড়ুন: ধোনিকে নিয়ে প্রশ্ন দ্রাবিড়ের

সাইনা নেহওয়াল, পিভি সিন্ধুর পরে গত কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনে ভারতীয় পুরুষরাও একের পর এক সাফল্যে চমকে দিচ্ছেন। শুধু ট্রফি জেতাই নয়, ধারাবাহিকতাতেও। শ্রীকান্তকে ফাইনালে হারিয়েই বি সাই প্রণীতের এপ্রিলে সুপার সিরিজ চ্যাম্পিয়ন হওয়া, এইচএস প্রণয়ের ইন্দোনেশিয়ায় পরপর দুই প্রাক্তন বিশ্বসেরাকে হারানো, শ্রীকান্তের প্রথম ভারতীয় হিসেবে সুপার সিরিজ প্রিমিয়ার, সুপার সিরিজ এবং গ্রঁ প্রি গোল্ড জেতার কৃতিত্ব— শেষ কবে এ রকম এক ঝাঁক ভারতীয় আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনে দাপট দেখিয়েছেন মনে করা যাচ্ছে না। এর কারণ কি? ‘‘আমার মনে হয় আমাদের নতুন কোচের ট্রেনিং পদ্ধতি অনেকটা বদল এনেছে খেলায়। মানসিক ভাবে আমরা এখন আরও শক্তপোক্ত,’’ বলেন শ্রীকান্ত।

সুপার শ্রীকান্ত

সুপার সিরিজে সাফল্য

ভারতীয় পুরুষ খেলোয়াড়দের মধ্যে এখন এক মাত্র তাঁর দখলেই তিনটি সুপার সিরিজ খেতাব। জিতেছেন ২০১৪ চিনা ওপেন, ২০১৫ ইন্ডিয়ান ওপেন এবং ২০১৭ ইন্দোনেশিয়ান ওপেন।

তিন ভিন্ন টুর্নামেন্টে জয়

আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন সংস্থার সুপার সিরিজ প্রিমিয়ার, সুপার সিরিজ এবং গ্রঁ প্রি (২০১৩ তাইল্যান্ড ওপেন, ২০১৫ সুইস ওপেন এবং ২০১৬ সৈয়দ মোদী আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট) তিনটি টুর্নামেন্টই জেতার নজির। যা আর কোনও ভারতীয় পুরুষ খেলোয়াড়ের দখলে নেই।

অন্য টুর্নামেন্টে

২০১১ কমনওয়েলথ যুব গেমসে একটি রুপো এবং একটি ব্রোঞ্জ। ২০১৬ সাউথ এশিয়ান গেমসে ব্যক্তিগত এবং দলগত বিভাগে সোনা। ২০১৬ এশিয়ান টিম চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ।

তারাদের বিরুদ্ধে সাফল্য

চিনের কিংবদন্তি অলিম্পিক্স সোনাজয়ী ও পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন লিন ড্যান, এখন বিশ্বের এক নম্বর কোরিয়ার সন ওয়ান হো-কে হারিয়েছেন।

তবে একটা সময় কিন্তু এই সাফল্যের রাস্তাটাই অস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল চোটের জন্য শ্রীকান্তের। রিও অলিম্পিক্সের পরে তিনি চোটের জন্য বাকি মরসুম ছিটকে গিয়েছিলেন কোর্ট থেকে। সেই সময়টা এখনও ভুলতে পারেননি। কি ভাবে তখন নিজেকে মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখতেন? ‘‘তিন মাস চোটের জন্য কোর্টের বাইরে ছিলাম। খুব কঠিন সময় গিয়েছে। খেলোয়াড়ের জীবনে চোট–আঘাত লেগেই থাকে। তবে সেই সময়টা কাটিয়ে আসাটা সহজ নয়। নিজেকে সেই সময় বলতাম আমায় কোর্টে ফিরতেই হবে। সেই জেদটাই চাঙ্গা রাখত।’’

অস্ট্রেলিয়ান সুপার সিরিজে শ্রীকান্তের প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী চিনা তাইপের কোয়ালিফায়ার কান চাও উ। অগস্টে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের আগে এটাই শেষ টুর্নামেন্ট। তাই আলাদা কোনও লক্ষ্য ঠিক করে নামছেন? শ্রীকান্ত বললেন, ‘‘আমি কোনও লক্ষ্য ঠিক করে খেলি না। যে টুর্নামেন্টে নামি সেখানে সবসময় নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। এখানেও সেটা মাথায় রেখেই নামছি।’’

কিছু দিন আগেই হান্দোয়ো শ্রীকান্তের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন তাঁর প্রাক্তন ছাত্র তৌফিক হিদায়াতের। বলছিলেন দু’জনের খেলার স্টাইল অনেকটা একই রকম। শ্রীকান্তের বড় মঞ্চে সাফল্যের সুযোগ রয়েছে। যা নিয়ে শ্রীকান্ত বললেন, ‘‘কোচের প্রশংসায় খুব খুশি। অনেকেই আমায় অভিনন্দন জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ান ওপেনে জেতার পরে। আশা করি এ ভাবেই সমর্থক ও কোচের প্রশংসা পাওয়ার জায়গাটা ধরে রাখতে পারব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement