আর্জেন্তিনাকে ভাঙার উচ্ছ্বাস। রিওয় মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি আর্জেন্তিনাকে ভাঙার উচ্ছ্বাস। রিওয় মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি
লিয়েন্ডার পেজ যখন মাঠে ঢুকলেন, তখনই ভারত গোলটা হজম করল। চতুর্থ পর্ব চলছে তখন।
সাত বারের অলিম্পিয়ান অবশ্য মাঠ থেকে বেরোলেন সৃজেশ, রূপেন্দ্রদের সঙ্গে সেলফি তুলতে তুলতে। শুধু লিয়েন্ডার নন, খেলার অনেক লোকই এসেছিলেন রোল্যান্ট অল্টমান্সের টিমের ম্যাচ দেখতে।
জার্মানির বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে রঘুবীররা তিন সেকেন্ড বাকি থাকা অবস্থায় গোল খেয়ে হেরে গিয়েছিলেন। সেই আফসোস মেটাতেই বারহা হকি স্টেডিয়ামের দু’নম্বর মাঠে ভিড় করেছিলেন ভারতীয় হকি সমর্থকেরা। এসেছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী বিজয় গোয়েল থেকে শেফ দ্য মিশন রাকেশ গুপ্ত, আইওএর প্রাক্তন সচিব রনধীর সিংহও। ‘‘আর্জেন্তিনা বিশ্বের অন্যতম সেরা দলগুলোর মধ্যে একটা। ওদের হারানোটা অবশ্যই আমাকে স্বস্তি দেবে,’’ বলছিলেন টিম-কোচ অল্টমান্স।
শেষ কোয়ার্টারে যখন ভারত তীব্র চাপে, তখন তাঁকে প্রচণ্ড চিৎকার চেঁচামেচি করতে দেখা যাচ্ছিল। তখন মনে হচ্ছিল আম্পায়ারের উপর বিরক্তি প্রকাশ করছেন। কারণ ওই সময় পরপর পাঁচটি পেনাল্টি কর্নার পায় আর্জেন্তিনা। তার মধ্যে দু’টো রিপ্লে ভিডিও দেখে। পরে ডাচ কোচ সেটা অস্বীকার করে বললেন, ‘‘আম্পায়ারের বিরুদ্ধে আমি কখনও ক্ষোভ প্রকাশ করি না। ওটা টিমকে তাতাতে করতেই হয়। আমি জানতাম ওরা শেষ পর্বে এসে প্রচণ্ড চাপ দেবে। ওই জন্যই সর্দারদের বলেছিলাম বল তুলে না খেলতে। মাটিতে রাখতে। যাতে ওরা স্পেস না পায়। যে ভাবে আমার কিপার এবং রক্ষণ পেনাল্টি কর্নার রুখেছে, সেটাই আমাদের স্বাভাবিক খেলা। যত দিন যাচ্ছে, ততই আমরা উন্নতি করছি। এটা ভাল দিক।’’
কোচ বা অধিনায়ক সৃজেশ কেউই মনে করছেন না, দুটো ম্যাচ জেতায় ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গিয়েছে। হাসিখুশি ভারত অধিনায়ক বললেন, ‘‘আমরা আগে থেকে কিছু ধরছি না। সব ম্যাচ জিততে হবে আমাদের। কে কোথায় জিতবে-হারবে, তার উপর নির্ভর করার কোনও মানে হয় না।’’ শেষ দু’টো পেনাল্টি কর্নার সামলেছেন নিজের স্টিকে। সেই প্রসঙ্গ তুললে সৃজেশ বললেন, ‘‘ওটা তো কিপারদের কাজ। সেটাই করেছি। আমাদের ডিফেন্সও আজ ভাল খেলেছে।’’
পরের পর্বে ওঠা নিয়ে কোচ বা অধিনায়ক মুখে সংশয়ের কথা যতই বলুন, ভারতীয় হকি শিবিরকে দেখে মনে হচ্ছিল সেখানে এখন একেবারে ফিল-গুড আবহাওয়া।
‘‘জার্মানি ম্যাচে শেষ দিকে গোল খেয়েছিলাম। গেমস ভিলেজে ফিরে আমরা ভিডিও দেখে সেটা শুধরে নিয়েছি। আজ দেখুন শেষ মিনিটে আমরাই সুযোগ পেয়েছি,’’ বলছিলেন ভারত অধিনায়ক। কথাবার্তা শুনে মনে হল, কোচের মতো তাঁরও মনে হচ্ছে ছত্রিশ বছর পরে নতুন ফর্ম্যাটে এ বার কিছু হলেও হতে পারে। ‘‘আমরা কমনওয়েলথ, এশিয়াড, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভাল করে এসেছি। এখানে তো ভাল কিছু আশা করতেই পারি,’’ বলছিলেন সৃজেশ।
রিওতে এখন তীব্র গরম। তেতে পুড়ে যাচ্ছে সব কিছু। এই গরমে দুপুরে ম্যাচে খেলতে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি? জানতে চাওয়া হয়েছিল সৃজেশদের কোচের কাছে। অল্টমান্স বললেন, ‘‘আমরা স্পেন থেকে এখানে এসেছি। ওখানে তো ৪১ ডিগ্রিতে খেলতে হয়েছিল। গরমে ভারতীয়দের কোনও সমস্যা হয় না।’’
বোঝাই যায়, এখানে এসে সমস্যার কথা বলে আলোড়ন তুললেও আপাতত তাঁর পাখির চোখ পদকেই। পরের নেদারল্যান্ডস ম্যাচেই আপাতত চোখ রাখতে চান ডাচ কোচ।