জুটি: লর্ডসে ইতিহাস গড়ে ফিরছেন শামি ও বুমরা। ছবি: এপি/পিটিআই
শুধুমাত্র সেঞ্চুরি করলে জায়গা পাওয়া যায় লর্ডসের ‘অনার বোর্ড’-এ। কিন্তু সোমবার ৭০ বলে মহম্মদ শামির অপরাজিত ৫৬ রানের ইনিংস নিঃসন্দেহে জায়গা করে নিল ভারতীয় সমর্থকদের মনের ‘অনার বোর্ড’-এ।
ভারতীয় পেসারের ব্যাটিং দেখে সুনীল গাওস্কর পর্যন্ত বলে উঠলেন, ‘‘তিন নম্বর ব্যাটসম্যানের মতো কভার ড্রাইভ মারছে।’’ গাওস্করের মতো ভারতের অধিকাংশ সমর্থক বিস্মিত হলেও অবাক হননি তাঁর ছোটবেলার কোচ ও এক সময়ের সতীর্থেরা।
ব্যাট হাতে শামি যে বরাবরই ভয়ঙ্কর, তা শোনালেন কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকি। সোনপুরে জুনিয়র স্তরের ওয়ান ডে লিগে টানা তিনটি ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করে দলকে প্লে-অফে তুলেছিলেন শামি। দল যখন চাপে পড়ে যেত, নামিয়ে দেওয়া হত তাঁকে। অনায়াসে কয়েকটি ছয় মেরে বিপক্ষের উপরে চাপ তৈরি করে দিতেন। বদরুদ্দিন বলছিলেন, ‘‘ব্যাটিংয়ে শামির উন্নতির নেপথ্যে ওর ভাইয়ের (মহম্মদ কাইফ) অবদান প্রচুর। নিজের মতো ভাইকেও পেসার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভাইকে দিয়ে নেটে বল করিয়ে ব্যাটিং করে যেত শামি। সেখান থেকেই টেকনিক মজবুত হতে শুরু করে।’’ বাংলার হয়েও ব্যাট হাতে একাধিক ম্যাচ জিতিয়েছেন শামি। ২০১২ সালে বিজয় হজারে ট্রফির সেমিফাইনালে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে সাত উইকেট পড়ে গিয়েছিল বাংলার। প্রয়োজন ছিল ২৭ রান। সেখান থেকে সাত বলে ২২ রান করে বাংলাকে ফাইনালে তোলেন শামি। বাংলা দলে তাঁর সতীর্থ অনুষ্টুপ মজুমদার বলছিলেন, ‘‘ও আর ঋদ্ধি (ঋদ্ধিমান সাহা) মিলে আমাদের যে ভাবে ফাইনালে তুলেছিল, তা কখনওই ভোলা সম্ভব না। শামি বরাবর ব্যাট হাতে কিছু করে দেখাতে চাইত।’’
কলকাতা ময়দানে লিগের ম্যাচে একাধিক বল হারিয়ে দেওয়ার নজিরও রয়েছে শামির। মোহনবাগানের হয়ে শামি যখন খেলতেন, কাস্টমস মাঠই ছিল তাঁদের ‘হোম’। ময়দানে কাস্টমস অন্যতম ছোট মাঠ হিসেবে বিবেচিত হয়। সেই মাঠ থেকে শামি যখন ছয় মারতেন, তার কোনওটা গিয়ে পড়ত তালতলা ক্যান্টিন পেরিয়ে। কোনও বল আবার উড়ে যেত পুলিশ তাঁবুর উপর দিয়ে। বল হারানোর পরে বেশ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধও রাখতে হত ম্যাচ। আবার বল নিয়ে আসার পরে শুরু করতে হত খেলা। বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল বলছিলেন, ‘‘বাংলার হয়ে সব সময় ওকে সাত-আট নম্বরে নামাতাম। প্রচুর ম্যাচে কঠিন জায়গায় রান করে আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে শামি।’’
ইডেনে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে চারটি ছয় মেরে টাউন ক্লাবকে জেতান ভারতীয় পেসার। ৪০ রান বাকি থাকতে আট উইকেট পড়ে গিয়েছিল টাউনের। শামি নেমেই চারটি ছয় মেরে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরে আসেন। ফলে শামির এই ব্যাটিং সমর্থকদের অবাক করলেও ময়দান তাঁকে ফিনিশার হিসেবে
এখনও মনে রেখেছে।