শুধু বিরাট কোহলী নয়, ভারতীয় ব্যাটিংকেও গুঁড়িয়ে দিলেন জেমস অ্যান্ডারসন। ছবি - টুইটার
লাল বলটা হাতে এলেই ওঁর শরীরীভাষা বদলে যায়। ৩৯ বছরের জেমস অ্যান্ডারসন সেটা গত দুই টেস্টে দেখিয়েছেন। কিন্তু বুধবারের হেডিংলে আরও ভয়ঙ্কর অ্যান্ডারসনকে দেখল। ভারতীয় ব্যাটিংকে ধ্বংস করে মাত্র ৭৮ রানে প্রথম ইনিংস গুটিয়ে দিয়ে যশপ্রীত বুমরার বাউন্সারের জবাব দিলেন অ্যান্ডারসন! ঘুরে দাঁড়াল ইংরেজদের ব্যাটিংও। ফলে ঝুলে যাওয়া কাঁধ নিয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হল বিরাট কোহলীর দল।
ইংল্যান্ডের মাঠে এটা ভারতীয় দলের তৃতীয় সর্বনিম্ন রান। ১৯৭৪ সালে লর্ডসে মাত্র ৪২ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। এর আগে ১৯৫২ সালে ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টে ৫৮ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল ভারতের ইনিংস। দীর্ঘদিন পরে ফের ভারতের ইনিংস শেষ হল একশোরও কমে। তবে এমন ব্যাটিং বিপর্যয় দেখার পরেও চিন্তিত নন সুনীল গাওস্কর।
ক্রিকেট পণ্ডিতদের মতে চলতি সিরিজে ভারতীয় দল ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলে আসছে। তাছাড়া কয়েক মাস আগে অ্যাডিলেড টেস্টে ৩৬ রানে অল আউট হয়ে যাওয়ার পরেও ২-১ ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে এসেছে টিম ইন্ডিয়া। তাই লিডসে ব্যাটিং দুর্দশা দেখার পরেও সঞ্জয় মঞ্জরেকরের মতো প্রাক্তনও চিন্তিত নন।
চেষ্টা করেও দুর্গ রক্ষা করতে পারলেন না রোহিত শর্মা। ছবি - টুইটার
তবে প্রাক্তনরা ভারতের ব্যাটিং নিয়ে চিন্তা না করলেও কেএল রাহুল, চেতেশ্বর পূজারা, বিরাট কোহলী ও অজিঙ্ক রহাণের অফ স্টাম্পের বাইরে দুর্বলতা ফের প্রকট হয়ে উঠল। সেটা অবশ্য অ্যান্ডারসনের বুদ্ধির জন্য। রাহুল ও কোহলীকে যে দুই বলে তিনি ফেরালেন, সেটা কিন্তু মোটেও আউট সুইং ছিল না। বরং দুজনকে আউট করার আগে বেশ কয়েকটি বল পঞ্চম স্টাম্পের দিকে রাখছিলেন। রাহুল ও কোহলী দুজনেই ড্রাইভ করতে ভালবাসেন। সেটা জানতেন অ্যান্ডারসন। তাঁর সোজা বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে খোঁচা দেন দু’জন। পূজারাকে আগেও আউট সুইংয়ে জব্দ করেছেন। এ বারও তাই করলেন। ফলে প্রথম স্পেলে ৮ ওভারে ৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে ভারতকে শুরুতেই ধাক্কা দেন তিনি। মাত্র ২১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পরে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ভারতীয় ব্যাটিং।
টস জিতে প্রথম ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কোহলী। তাঁর সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল না সেটা প্রমাণ করলেন অ্যান্ডারসন। জিমির সুইংয়ের কাছে পরাস্ত হয় ভারতের টপ অর্ডার। ফলে চতুর্থ উইকেটে রোহিত শর্মা ও রহাণে ৩৫ রান যোগ করলেও সেটা ইংরেজদের চাপে রাখার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না।
বাকি কাজটা সারলেন মাত্র চার টেস্ট খেলা ক্রেগ ওভার্টন (১৪/৩), অলি রবিনসন (১৬/২) ও স্যাম কারেন (২৭/২)। লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মহম্মদ শামি ও যশপ্রীত বুমরা ব্যাট হাতে লড়লেও এ বার পারলেন না। ফলে জোড়া হ্যাটট্রিকের ধাক্কা এড়ানোর পরেও শেষ ৭ উইকেট গেল মাত্র ২২ রানে! ফলে ৭৮ রানে গুটিয়ে যাওয়া তো স্বাভাবিক।
রোরি বার্নস ও হাসিব হামিদের ওপেনিং জুটি ভারতের কাছে কাঁটার মতো বিঁধছে। ছবি - টুইটার
অ্যান্ডারসনের দাপটে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংও হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল। অ্যান্ড্র স্ট্রস অবসর নেওয়ার পর থেকে এই নিয়ে ২২ বার ওপেনিং জুটির বদল হয়েছে। অবশেষে ২৪ ইনিংসের পরে ওপেনিং জুটিতে ১০০ রানের মুখ দেখল সাহেবরা। সৌজন্যে হাসিব হামিদ (৬০) ও রোরি বার্নস (৫২)। দুই ওপেনারের অপরাজিত অর্ধ শতরানের উপর ভর করে দিনের শেষে ইংল্যান্ড ১২০। লিড ৪২ রানের।
চলতি টেস্টের তিনটি সেশনই ইংরেজদের নামে লেখা রইল। ব্যাটে-বলে সব বিভাগেই পিছিয়ে ছিল কোহলীর দল। সেটা দিনের শেষে ভারতের শরীরী ভাষায় পরিষ্কার। তবে ক্রিকেট ঘোর অনিশ্চয়তার খেলা। তাই দ্বিতীয় দিন ভারতের ফিরে আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।