চর্চা: সিডনির পরে প্রশ্নের মুখে ধোনির স্ট্রাইক রেট। ফাইল চিত্র
অ্যাডিলেডে আজ মরণ-বাঁচন ম্যাচ ভারতের। এই ওয়ান ডে সিরিজকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে মঙ্গলবার জিততেই হবে বিরাট কোহালির দলকে। আমি যদি ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্য হতাম, তা হলে কিন্তু মাত্র একটা হারের ভিত্তিতে উদ্বিগ্ন হতাম না। সিডনিতে প্রথম এক দিনের ম্যাচে ভারত হেরেছে মূলত শুরুর দিককার ব্যাটিংয়ে ধাক্কা লাগার জন্য। অস্ট্রেলিয়ার ২৮৮ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র চার রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ভারত।
রোহিত শর্মা এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এর পর দারুণ একটা পার্টনারশিপ গড়েছিল চতুর্থ উইকেটে। তাতে মনে হচ্ছিল, ম্যাচে ফিরে আসছে ভারত। ১৩৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলল রোহিত। ও একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছিল দলকে। তবে শেষ পর্যন্ত জেতাতে পারেনি রোহিত। তবু আমি বলব, মাত্র চার রানে তিন উইকেট হারানোর পরেও ভারত যে ভাবে ম্যাচটাকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছিল, সেটাই ওদের শক্তির গভীরতা বুঝিয়ে দিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া যদি চার রানে তিন উইকেট হারাত, তা হলে হয়তো একশো বা দেড়শোর মধ্যে অলআউট হয়ে যেত। ভারত সেখানে ২৮৮ রান তাড়া করতে নেমে ৩৪ রানে হেরেছে। খুব খারাপ পারফরম্যান্স বলা যাবে না।
ভারতের টপ-অর্ডার ব্যাটিং যে কোনও প্রতিপক্ষকে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতো। ওপেনিংয়ে রোহিত শর্মা এবং শিখর ধওয়ন। তিন নম্বরে কিং কোহালি। বার বার কিন্তু ভারতীয় স্কোরবোর্ডে চার রানে তিন উইকেটের মতো ছবি দেখা যাবে না। সেই কারণেই আমি মনে করি, সিডনিতে শুরুর দিককার ব্যাটিংয়ে বিপর্যয়টা একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। শুধুমাত্র ওই একটি ম্যাচের ভিত্তিতে আমি ওয়ান ডে সিরিজের ভাগ্য গণনা করতে রাজি নই।
ভারতীয় দলের মধ্যে সব চেয়ে বেশি নজর এখন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উপরে। ধোনিকে কি বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়া উচিত? না কি তরুণ কাউকে চেষ্টা করার সময় হয়েছে? আমি মনে করি, সিডনিতে ধোনি বিচক্ষণ ইনিংস খেলেছে। কঠিন সময়ে এসে হাফ সেঞ্চুরি করেছে। খুব খারাপ পারফরম্যান্স বলা যাবে না। এখন এটাই দেখার যে, এই হাফ সেঞ্চুরি পুরনো সেই ম্যাচউইনার ধোনিকে ফিরিয়ে দিতে পারে কি না।
এই ওয়ান ডে সিরিজে ভারতীয় দলে রাখা হয়নি ঋষভ পন্থকে। যে সিদ্ধান্ত অনেককে অবাক করেছে। সিডনিতেই টেস্টে দারুণ সেঞ্চুরি করেছিল ঋষভ। এখনও ওর অনেক উন্নতি দরকার, এটা মাথায় রেখেও বলতেই হবে যে, ঋষভ খুবই উত্তেজক এক প্রতিভা। আমি নিশ্চিত, ভারতের বিশ্বকাপ নকশায় ও ভাল করেই রয়েছে। এই মুহূর্তে দীনেশ কার্তিককেও দলে রেখেছে ভারত। সিডনিতে ধোনি কিপিং করল। কার্তিক শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছে। তবে বিশ্বকাপে যদি ভারত ধোনি এবং ঋষভকে নিয়ে যায়, সেটাকে নিশ্চয়ই কেউ বিশ্বের সব চেয়ে খারাপ সিদ্ধান্ত বলবেন না।
ভারতীয় মিডল-অর্ডারের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হচ্ছে, ধোনি এবং ঋষভ দু’জনকেই খেলানোর জায়গা রয়েছে। প্রশ্নটা হচ্ছে, কে উইকেটকিপার হিসেবে খেলবে, কে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে। আমি কিন্তু বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতায় এই বিষয়টা নিয়ে খোলা মনে থাকার পক্ষে। অর্থাৎ, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেব। বরং কয়েকটি ম্যাচে ঋষভের হাতে কিপিং গ্লাভস তুলে দিয়ে ধোনিকে হাল্কা মনে খেলার সুযোগ দিয়ে দেখতে চাই, তার ফল কী রকম হয়।
হার্দিক পাণ্ড্য এবং কে এল রাহুলকে নিয়ে মাঠের বাইরের বিতর্কও ভারতীয় দলকে সামলাতে হচ্ছে। ভারতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল না হয়ে আমি এই বিতর্ক নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু এটুকু আমি আশা করব যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারেরা জানবে টিভি-র সামনে বসে কী আমি বলতে পারি আর কী বলতে পারি না। আমার মনে হয় হার্দিকের অনুপস্থিতি ভারতীয় দলের জন্য বড় ধাক্কা। পেস বোলিং-অলরাউন্ডার হিসেবে হার্দিক অনেক ভারসাম্য দিতে পারে দলকে।
এই সিরিজে যশপ্রীত বুমরাকেও বিশ্রাম দিয়েছে ভারত। বুমরা একাই অনেকটা পার্থক্য গড়ে দেয়। তাই ওর না থাকাটাও ভারতীয় বোলিংকে দুর্বল করে দিয়েছে। তার মানে এই নয় যে, যারা আছে তারা সুযোগটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে না। ভারতীয় দল কিন্তু কারা নেই, তা নিয়ে ভাবার মতো জায়গায় নেই। এই ম্যাচটা হাত থেকে ফস্কে যেতে দিলে চলবে না। বিরাটদের মাথায় রাখতে হবে যে, বাস্তব দুনিয়াটা খুবই নির্মম। লোকে শুধু মনে রাখে গত কাল তুমি কী করেছ। তাই ওরা যখন দেশে ফিরবে, জনতা দেখতে চাইবে ওয়ান ডে সিরিজে কী ফলাফল হয়েছে। টেস্ট সিরিজের ইতিহাস তখন অতীত হয়ে যাবে। তাই টেস্ট সিরিজ জেতার পরেও হাল্কা দেওয়ার বা বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা নেই। ওয়ান ডে সিরিজ ২-১ বা ৩-০ হেরে ফিরতে চাইবে না কোহালিরা। বিশেষ করে বিশ্বকাপের আগে এই সিরিজ জয় যেখানে ওদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া দলকে দেখে মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে ওরা টেস্টের চেয়ে ওয়ান ডে টিম হিসেবে অনেক ভাল। স্টোইনিস, ম্যাক্সওয়েল, শন মার্শরা এক দিনের ক্রিকেট খারাপ খেলে না। হ্যান্ডসকম্ব টেস্টে সমস্যায় পড়লেও ওয়ান ডে-তে রান পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার দুই পেসার বেহরেনডর্ফ এবং রিচার্ডসন ভাল বল করেছে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের থেকে অনেক ভাল পারফরম্যান্স আশা করছি আমি। আর সেটা যদি করতে পারে তা হলে আরও একটা উত্তেজক ম্যাচ উপহার দিতে চলেছে অ্যাডিলেড!