আলিঙ্গন: নায়ক টেলরকে বুকে টেনে নিলেন লাথাম। বুধবার। পিটিআই
হ্যামিল্টনের সেডন পার্ক মাঠের দু’দিকের স্কোয়ার বাউন্ডারির দূরত্ব বেশ কম। কিন্তু তা সত্ত্বেও মনে হয়েছিল, নিউজ়িল্যান্ডের পক্ষে ৩৪৮ রানের লক্ষ্যে পৌঁছনো খুব একটা সহজ হবে না। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করে ম্যাচটা বেশ সহজেই জিতে নিল রস টেলররা। তাও ওদের সেরা ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসনকে বাইরে রেখে।
ভারত বনাম নিউজ়িল্যান্ডের এই ম্যাচটা দেখতে দেখতে আমার খুব পুরনো একটা ম্যাচের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। ১৯৮৭ সালে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারত-ইংল্যান্ডের লড়াই। যেখানে গ্রাহাম গুচ এবং মাইক গ্যাটিং সুইপ করেই ভারতকে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে দেয়। বুধবার হ্যামিল্টনেও ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে সুইপ শটটা দারুণ ভাবে কাজে লাগাল দুই বাঁ হাতি— টম লাথাম ও হেনরি নিকোলস। টেলরও সমান সাবলীল ছিল। ১০৯ রান করে টেলর ম্যাচের সেরা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু খেলা ঘুরিয়ে দিয়ে গেল লাথামের ৪৮ বলে ৬৯ রানের ইনিংস। শুরুতে আবার ভাল খেলল নিকোলসও। এই ত্রয়ীর সুইপ শটের উত্তর ছিল না রবীন্দ্র জাডেজা বা কুলদীপ যাদবের কাছে।
পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখছি, ৩১ বলে ৬৪ রান সুইপে তুলেছে নিউজ়িল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। লাথাম ব্যাকরণ মেনে সুইপ করা ছাড়াও প্যাডল সুইপ, স্লগ সুইপ— সব মেরেছে। ১১টি সুইপ শটে ২৫ রান তুলেছে। টেলর ১৩ বলে ২৬ রান। আর নিকোলস ৭ বলে ১৩ রান। সংখ্যা দেখে হয়তো বিশাল কিছু মনে হবে না, কিন্তু ঘটনা হল, ওই ভাবে সুইপ করে ভারতীয় স্পিনারদের লেংথ, লাইন নষ্ট করে দেয় নিউজ়িল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা।
সুইপের বিরুদ্ধে ভারতীয় স্পিনাররা বলের গতির হেরফের করতে পারত। ফুল লেংথ বল করতে গিয়ে মার খেয়ে যায় ওরা। জাডেজা কয়েকটা ডেলিভারি বেশ গতি বাড়িয়ে করেছিল, ব্যাটসম্যান পরাস্তও হয়। কিন্তু ছন্দটা ধরে রাখতে পারেনি। কুলদীপ তো আবার বেশির ভাগ শর্ট বল ফেলল। যে সব বলে পুল বা কাট মেরে দু’ধারের ছোট বাউন্ডারির ফায়দা তুলেছে লাথামরা। কুলদীপ দু’উইকেট নিলেও ১০ ওভারে ৮৪ রান দিল। জাডেজা ৬৪ রান দিয়ে কোনও উইকেট পেল না। মাঝের ওভারগুলোয় কোনও চাপই তৈরি করতে পারল না ভারতীয় বোলাররা।
ভারতীয় দল একটা ষষ্ঠ বোলারের অভাব খুব টের পাচ্ছে। হার্দিক পাণ্ড্য না থাকায় ওর জায়গা ভরাট করা যাচ্ছে না। শিবম দুবেকে কোনও ভাবেই হার্দিকের বিকল্প বলা যায় না। কেদার যাদবকে খেলানো হলেও ওকে বল দেওয়া হচ্ছে না। বল না করলে কিন্তু কেদারের কোনও জায়গা হয় না এই দলে। মণীশ পাণ্ডে ওর চেয়ে সব দিক থেকে এগিয়ে।
এ সব ক্ষেত্রে আপনার হাতে এমন পাঁচ বোলার দরকার, যারা ম্যাচে প্রভাব ফেলত পারবে। আমি বুঝতে পারছি না, শার্দূল ঠাকুরকে কেন ওয়ান ডে দলে খেলানো হচ্ছে। ও কোনও প্রভাবই ফেলতে পারছে না ম্যাচের উপরে। তা ছাড়া শার্দূল মাঝের ওভারে ব্যাটসম্যানকে হার মানিয়ে উইকেট তোলার মতো বোলার নয়। এখানে নবদীপ সাইনিকে দরকার। শুধু গতিই নয়, ঠিক জায়গায় বলটা রাখতে পারে সাইনি। ওর গতির বিরুদ্ধে বড় শট খেলা সহজ নয়। আমি বলছি না, সাইনি থাকলেই এ দিন আমরা ম্যাচ জিতে যেতাম। কিন্তু নিউজ়িল্যান্ডের কাজটা অনেক কঠিন হত।
নিউজ়িল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টিতে হারিয়ে আসার ফলে ভারত কি একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিল? এখানে একটা কথা বলতে চাই। ওদের এই ওয়ান ডে দলটায় বেশ ভারসাম্য আছে। দু’জন পেসার, দু’জন স্পিনার, দু’জন পেসার-অলরাউন্ডার আছে। তাই ব্যাটিং গভীরতাও বেড়েছে, আবার প্রয়োজনে বাড়তি এক জন বোলারকেও কাজে লাগাচ্ছে। এই দলের বিরুদ্ধে সব সময় সেরাটা দিতে হবে। যেমন ফিল্ডিংটা আরও ভাল করতে হবে। গ্রাউন্ড ফিল্ডিং এবং ক্যাচিং— দুটোই।
চার নম্বর জায়গাটা নিজের জন্য পাকা করে নিয়েছে শ্রেয়স আইয়ার। এ দিনের সেঞ্চুরি সেটা আবার বুঝিয়ে দিয়ে গেল। এটাও বোঝা যাচ্ছে, কে এল রাহুল জীবনের সেরা ফর্মে আছে। ৬৪ বলে ৮৮ রানের ইনিংসটাই ভারতকে প্রায় সাড়ে তিনশোয় পৌঁছে দিয়েছিল। এই রকম ফর্মের রাহুলকে দিয়ে ফের ওপেন করানোর কথাও ভাবা যেতে পারে। এই সিরিজে রোহিত শর্মা, শিখর ধওয়ন না থাকায় ভারতকে একেবারে নতুন ওপেনিং জুটি খেলাতে হল। অর্থাৎ মায়াঙ্ক আগরওয়াল আর পৃথ্বী শ। ওদের দু’জনকে কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে।