জুটিতে লুটি: রোহিত ও রাহুল ওপেনিং-এ ২২৭ রান তুললেন।—ছবি এপি।
খেলার বয়স তখন তিরিশ ওভার। নিকোলাস পুরান এবং শেই হোপ যে ভাবে মারছিল, রীতিমতো চিন্তায় পড়ে যাচ্ছিলাম। ৩৮৭ রান করেও হারতে হবে নাকি? এমনকি টিভি-তে বিরাট কোহালিকে দেখেও মনে হল একটু চিন্তায় পড়েছে। ২৯.১ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর তখন ১৯২-৩।
ওই সময় মহম্মদ শামির দুটো বল খেলাটাকে ঘুরিয়ে দিয়ে গেল। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বিধ্বংসী ইনিংস, কুলদীপ যাদবের হ্যাটট্রিক মাথায় রেখেও বলছি, আমার কাছে গেমচেঞ্জার শামি। বা শামির ওই দুটো বল। বাংলার এই পেসারের হাতে দারুণ একটা বাউন্সার আছে। যেটা সামলাতে পারল না পুরান। ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উঁচু ক্যাচ দিয়ে বসল। পরের বলটা দারুণ একটা আউটসুইং। ছোট্ট সুইং করে কায়রন পোলার্ডের ব্যাট ছুঁয়ে কিপারের হাতে চলে গেল। শামির এই বলটাই ম্যাচের সেরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারল ১০৭ রানে।
একটা ক্রিকেট কাহিনির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। ফ্রেডি ট্রুম্যান এক বার লোয়ার অর্ডারের এক ব্যাটসম্যানকে দারুণ আউটসুইংয়ে ফিরিয়ে বলেছিলেন, ‘‘এই বলটা তোমার জন্য নয়।’’ পোলার্ডের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই। ক্যারিবিয়ান অধিনায়কের চেয়ে অনেক ভাল ব্যাটসম্যানও ওই বলে আউট হয়ে যেত।
আরও পড়ুন: হ্যাটট্রিকের পরে কুলদীপ: গুগলিতেই বাজিমাত
কয়েক দিন আগে কোহালি বলেছিল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে পেসারদের জন্য একটা জায়গা ফাঁকা। প্রথম তিন বোলার হল যশপ্রীত বুমরা, ভুবনেশ্বর কুমার, দীপক চাহার। বিশাখাপত্তনমের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে, রাতের শিশির সামলে শামি যে স্পেলটা করল, তাতে ওর-ও অস্ট্রেলিয়া যাওয়া নিশ্চিত হওয়া উচিত। শামি হ্যাটট্রিক না পেলেও কুলদীপ পেল। প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ান ডে-তে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। মাঝে কুলদীপের আত্মবিশ্বাস বেশ ধাক্কা খেয়েছিল। এখন দেখছি, যত সময় যাচ্ছে ও পুরনো ছন্দ ফিরে পাচ্ছে। এ দিনের গুগলি এবং চায়নাম্যান ডেলিভারিগুলো নিখুঁত নিশানায় ছিল। হ্যাটট্রিকের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বল— দুটোই ছিল গুগলি। কারও যদি কুলদীপকে নিয়ে প্রশ্ন থাকে, তা হলে উত্তর নিশ্চয়ই পাওয়া হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভের আবহেই জমজমাট মরসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো
এ দিন অবশ্য ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যে জায়গায় রানটা নিয়ে গিয়েছিল, সেখান থেকে ম্যাচ হারা খুবই কঠিন ছিল। একমাত্র পুরান আর হোপের ওই দুরন্ত জুটি ছাড়া উদ্বেগের মুহূর্ত কখনও তৈরি হয়নি। রোহিত এবং রাহুল যে এখন ভারতের ‘জুটি নম্বর ওয়ান’ হয়ে উঠেছে, তা নিয়ে আর কোনও প্রশ্ন নেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ওপেনিং জুটি আমরা পেয়ে গিয়েছি। এ দিন রাহুল শুরুতে বেশি আগ্রাসী ছিল, কিন্তু রোহিত তার পরে ওকে ছাড়িয়ে যায়। রোহিতের মতো ব্যাটসম্যান জমে গেলে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, ফের দেখা গেল। রাহুলও ব্যাকফুটে খুব শক্তিশালী। ওর স্কোয়ারকাট দেখে আমার গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের কথা মাঝে মাঝে মনে পড়ে যাচ্ছিল। দু’জনের জুটিতে উঠল ২২৭ রান। তবে কোহালিকে নিশ্চয়ই বেশি তৃপ্তি দেবে দলের চার-পাঁচ নম্বরে দুই তরুণের ব্যাটিং। কোহালি এক বলে ফিরে গিয়েছে। ওই সময় শ্রেয়স আইয়ার এবং ঋষভ পন্থের ওই রকম ধ্বংসাত্মক ব্যাটিং না হলে ভারত ৩৮৭ রানে পৌঁছয় না। পন্থ এক ওভারে ২৪ নিল, শ্রেয়স ৩১। ওয়ান ডে-তে এক ওভারে এত রান ভারত কোনও দিন তোলেনি।
সাদা বলের ক্রিকেটে শ্রেয়সের পরপর চারটে হাফসেঞ্চুরি হয়ে গেল। অক্রিকেটীয় শট খুব কম খেলে। ওর স্কোয়ারকাটও দেখার মতো। উল্টো দিকে পন্থ নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন দেখিয়েছে। মানে বলতে চাইছি, উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসার মতো শট খেলেনি। ভারতের চার এবং পাঁচ নম্বর যদি প্রয়োজনে এতটা ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে, তা হলে অধিনায়কের চিন্তা অনেক কমে যাবে।
তবে চিন্তা থাকবে ফিল্ডিং নিয়ে। শ্রেয়সের দুরন্ত ফিল্ডিংয়ে শিমরন হেটমায়ারের রান আউট আর কোহালির ক্যাচে পিয়েরের ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কিন্তু কিছু পাওয়া গেল না। এ দিনও সহজ ক্যাচ ফেলল রাহুল এবং দীপক চাহার। দেখা যাচ্ছে, উঁচু ক্যাচ ধরতে ভারতীয় ফিল্ডারদের সমস্যা হচ্ছে। সিরিজ ফয়সালার ম্যাচ কটকে। ভারতের পূর্বাঞ্চলে কিন্তু শিশির বেশি পড়বে। ফিল্ডারদের সমস্যা আরও বাড়বে। ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর নিশ্চয়ই ব্যাপারটা মাথায় রাখবে।