অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের কোচ লুইস নর্টন দে মাতোস। ছবি: সংগৃহীত।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে নয় গোল খেয়ে গ্রুপ লিগ থেকে বিদায়। তা সত্ত্বেও নায়কের সম্মান পেয়েছিল ভারতীয় দলের ফুটবলাররা। প্রশংসিত হয়েছিলেন কোচ লুইস নর্টন দে মাতোস। কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৯ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ্যতা পর্বের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে পাঁচ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রশ্নের মুখে ভারতীয় কোচের স্ট্র্যাটেজি।
শনিবার সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে অনূর্ধ্ব-১৭ দলের পাঁচ ফুটবলার (ধীরজ সিংহ, আনোয়ার আলি, জ্যাকসন সিংহ, রাহুল কে পি ও রহিম আলি)-কে রেখেছিলেন মাতোস। পরে পরিবর্ত হিসেবে নামান আরও দুই অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলার সঞ্জীব সিংহ ও অমরজিৎ সিংহ-কে। ভারতীয় দলের কোচের দল গঠনের এই স্ট্র্যাটেজিতেই বিস্মিত দুই প্রাক্তন অধিনায়ক আই এম বিজয়ন ও জো পল আনচেরি।
রবিবার বিকেলে ত্রিশূর থেকে ফোনে আনন্দবাজার-কে বিজয়ন বললেন, ‘‘মাতোসের হয়তো মনে হয়েছিল, অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে এ রকম ফুটবলাররা লড়াই করতে পারবে। ব্যাপারটা কিন্তু এত সহজ নয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো শারীরিক ভাবে সব সময়ই আমাদের চেয়ে এগিয়ে। তা ছাড়া ওরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে। ফলে অভিজ্ঞতার দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়েই থাকে।’’ বিজয়ন যোগ করলেন, ‘‘আমার মতে, প্রথম একাদশে অনূর্ধ্ব-১৭ দলের দুই-তিন জনের বেশি ফুটবলার কখনওই খেলানো উচিত নয়। কারণ পার্থক্যটা গড়ে দেয় শারীরিক সক্ষমতাই। লড়াইটা অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলাররাই করতে পারত।’’
ভারতীয় দলের আর এক প্রাক্তন অধিনায়ক আনচেরি খোলাখুলি বলে দিলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ফুটবলে দু’বছরের পার্থক্যটা কিন্তু অনেক। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, ব্যক্তিগত দক্ষতায় আমাদের ছেলেরা খারাপ নয়। শারীরিক ভাবে ওরা অন্যান্য দেশের ফুটবলারদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। প্রত্যেকটা ম্যাচেই দেখা গিয়েছে, দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের ছেলেরা পিছিয়ে পড়েছে।’’
শনিবার সৌদি আরবের বিরুদ্ধেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। প্রথমার্ধে ০-১ গোলে পিছিয়ে ছিল ভারত। দ্বিতীয়ার্ধে চার গোল খায়। প্রাক্তন সতীর্থ বিজয়নের সুরেই আনচেরি বললেন, ‘‘ধীরজ, রহিমদের পক্ষে কখনও অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলারদের সঙ্গে লড়াইয়ে এঁটে ওঠা সম্ভব নয়। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স নিয়ে যতই প্রশংসা হোক, বাস্তবটা মেনে নিতেই হবে। আশা করছি, মাতোস নিজেও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর সেটা বুঝতে পারছেন।’’
অনূর্ধ্ব-১৯ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ভারতের সঙ্গে একই গ্রুপে আছে ইয়েমেন ও তুর্কমেনিস্তান। আজ, সোমবার ইয়েমেনের বিরুদ্ধে কি ঘুরে দাড়াতে পারবে মাতোসের দল? ভারতীয় ফুটবলের দুই কিংবদন্তি কিন্তু খুব একটা আশার আলো দেখছেন না। বললেন, ‘‘ইয়েমেন দারুণ শক্তিশালী দল। ২০০১ সালে প্রাক-বিশ্বকাপের ম্যাচে আমরা ওদের বিরুদ্ধে ড্র করেছিলাম। কিন্তু সাত বছর আগে ছয় গোলে হেরেছিল ভারত। হারের অন্যতম কারণ, শারীরিক লড়াইয়ে ওদের বিরুদ্ধে এঁটে উঠতে না পারা। সেই ছবিটা এখনও বদলায়নি।’’