আমার দেখা সেরা ভারতীয় ব্যাটসম্যান গাওস্কর

আমি কোহলি হলে বিশ্বকাপে সচিনের নাম না ওঠার চ্যালেঞ্জ নিতাম

বাড়িতে নেট খুললে এখুনি ওঁকে বল করতে দেখতে পাবেন! রাউন্ড আর্ম অবশ্য নয়। আন্ডার আর্ম। তাও ওয়েলিংটন সি বিচে। মঙ্গলবার যখন এবিপি-কে ল্যান্ডলাইন ফোনে সাক্ষাত্‌কার দিলেন তখন তিনি অবশ্য ক্রাইস্টচার্চের এইট্টিন হোল গল্ফ কোর্সে! আসলে এখানেই যে থাকেন স্যর রিচার্ড হ্যাডলি...

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

অ্যাডিলেড শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৮
Share:

বাড়িতে নেট খুললে এখুনি ওঁকে বল করতে দেখতে পাবেন! রাউন্ড আর্ম অবশ্য নয়। আন্ডার আর্ম। তাও ওয়েলিংটন সি বিচে। মঙ্গলবার যখন এবিপি-কে ল্যান্ডলাইন ফোনে সাক্ষাত্‌কার দিলেন তখন তিনি অবশ্য ক্রাইস্টচার্চের এইট্টিন হোল গল্ফ কোর্সে! আসলে এখানেই যে থাকেন স্যর রিচার্ড হ্যাডলি...

Advertisement

প্রশ্ন: নেট খুলে আপনাকে দেখছি ব্যাট করছেন। বল হাতে। আবার কিপিংও করছেন। ব্যাপার কী?
হ্যাডলি: আরে ওটা আইসিসির বিশ্বকাপ প্রচার। আমি তো আইসিসির এক জন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর। ওরাই প্রোমোশনের জন্য ওয়েলিংটন সি বিচে নিয়ে গেছিল।

প্র: ক’বছর বাদে ক্রিকেট ব্যাট ধরলেন?
হ্যাডলি: খেলা ছেড়েছি কুড়ি বছর আগে। তার মধ্যে দু’একবারের বেশি ব্যাট ধরেছি বলে মনে পড়ছে না।

প্র: আচ্ছা অ্যাডিলেডে তো বিশ্বকাপ নিয়ে তেমন উদ্দীপনাই চোখে পড়ছে না। ইন্ডিয়াতেও সেই গমগমে ব্যাপারটা নেই।
হ্যাডলি: নিউজিল্যান্ডে তা নয়। বিরাট উদ্দীপনা। ব্ল্যাক ক্যাপস ইদানীং এত ভাল খেলছে যে সমর্থকদের তীব্র বিশ্বাস এ বার কিছু ঘটবেই। দুদ্দাড়িয়ে নিউজিল্যান্ড ম্যাচের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে।

প্র: এই বিষ্যুদবার বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন একই সঙ্গে মেলবোর্ন আর ক্রাইস্টচার্চে। আপনার ভূমিকা থাকবে?
হ্যাডলি: হ্যাঁ, ক্রাইস্টচার্চে মিনিটখানেকের জন্য আমি মঞ্চে উঠছি। এ ছাড়াও বিশ্বকাপ চলাকালীন নানা দায়িত্ব থাকবে।

প্র: যেমন?
হ্যাডলি: যেমন কর্পোরেট বক্সগুলোতে বক্তৃতা আছে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের দিন। আইসিসির সঙ্গে কথা অনুযায়ী দু’দেশ মিলিয়ে মোট চোদ্দোটা ম্যাচে আমায় থাকতে হবে।

প্র: ধোনিদের খেলা দেখতে আসবেন না?
হ্যাডলি: হ্যাঁ, ওদের নিউজিল্যান্ডে দুটো ম্যাচেই থাকব। সে দিন অন্য কোনও কাজও নেই। মন দিয়ে দেখব।

প্র: এখন অবধি যা অবস্থা ভারতীয় সমর্থকেরা মন দিয়ে খেলা দেখার আশ্বাসও পাচ্ছেন না...
হ্যাডলি: (হা হা) ইশান্ত শর্মা চলে যাওয়াটা ভারতের বিরাট ধাক্কা। বোলিংয়ের যা হাল, শর্মাকে ইন্ডিয়ার দরকার ছিল। আমার তো ওকেই আসল লোক মনে হচ্ছিল।

প্র: বিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপের সময় আপনি যখন ভারতীয় ড্রেসিংরুমে এসেছিলেন ঘুমন্ত এক ক্রিকেটারকে দেখে ফিরে যান। তাঁর সঙ্গেই দেখা করতে এসেছিলেন। যাঁর নাম সচিন তেন্ডুলকর। আপামর ভারতের ধারণা, সচিন না থাকায় তাদের কাপভাগ্য আরও ঘুমন্ত দেখাচ্ছে।
হ্যাডলি: প্লেয়াররা আসে আবার চলে যায়। এটা জীবনের ধর্ম এবং মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। সচিন অসামান্য। নিছক স্ট্যাটিস্টিক্সের বিচারে, সব ধরনের খেলায় ওর পারফরম্যান্স বিচারে সর্বোত্তম! কিন্তু এখন ও নেই এটা মেনে নিতে হবে। এখন আছে কোহলি। আমি কোহলি হলে আমার চ্যালেঞ্জ হত এ বারের বিশ্বকাপে যেন সচিন নিয়ে আর কেউ কথা না বলে!

প্র: আপনার দেখা সেরা ভারতীয় ব্যাটসম্যান নিশ্চয়ই সচিন?
হ্যাডলি: স্টাটিস্টিক্সের বিচারে সচিনের কাছে কেউ নেই। কিন্তু আমার দেখা সেরা ব্যাটসম্যানের তালিকা টাঙাতে বললে আমি সবার আগে সানি গাওস্করের নাম ঝোলাব! মোহিন্দর অমরনাথকেও আমার খুব ভাল লাগত!

প্র: বিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপে ভারতীয় বোলাররা অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউজিল্যান্ড এসে লাইন লেংথের প্রয়োজনীয় অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে খুব সমস্যায় পড়েছিল।
হ্যাডলি: জানি, শুধু ওরা কেন, অনেকেরই এই সমস্যা হয়। এটা প্রাচীন সমস্যা।

প্র: কৌশলটা কী মানিয়ে নেওয়ার?
হ্যাডলি: সেটা বলা কি ঠিক হবে?

প্র: কেন?
হ্যাডলি: থাক। এটুকু শুধু বলি নিউজিল্যান্ডে কোনও ক্যাপ্টেন স্লো মিডিয়াম বোলারকে বুদ্ধি করে কাজে লাগাতে পারে। তবে এখন ড্রপ ইন পিচের প্রচলন হয়েছে। তাই শেষ অবধি কী দাঁড়ায় ইন্টারেস্টিং হবে।

প্র: ভারত সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াতে বিধ্বস্ত হলেও তাদের পক্ষে একটা মতবাদ শোনা যাচ্ছে যে, বিশ্বকাপ শুরু হতে হতে মরসুমের শেষে অস্ট্রেলিয়ান পিচগুলো মন্থর হয়ে যাবে। উইকেট পাওয়া যাবে শুকনো। ইংল্যান্ডে শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো ধোনির টিমের সুবিধে হবে।
হ্যাডলি: আমি এত গদগদ হওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। অস্ট্রেলীয় উইকেটের চরিত্র চট করে বদলাবে না। এই উইকেটগুলোর চরিত্র হল বাউন্স। অতিরিক্ত বাউন্স সব সময় এখানে থাকবে। আর বাউন্সেই তো ভারতীয়দের যত জ্বালা!

প্র: ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফর নিশ্চয়ই আপনি টিভিতে দেখেছেন। আপনার দেখে কী মনে হল? সমস্যাটা কি বাউন্সেই?
হ্যাডলি: বাউন্সে তো বটেই, তার চেয়েও বেশি মানসিক।

প্র: তা হলে তো ভূমিকম্পে চুরমার আপনার শহরের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অদম্য চেষ্টাকে ভারতীয়দের মডেল করা উচিত!
হ্যাডলি: ঠিক কথা! কী অবস্থা আমার সোনার শহরের। বছরখানেক আগের ভূমিকম্পে ১৭০০ বাড়ি ভেঙে চুরমার। ক্রিকেটের যে স্টেডিয়াম ছিল সেই ল্যাঙ্কাস্টার পার্ক, রাগবি মাঠ, মেইন সিটি সেন্টারের আশেপাশের বাড়ি সব গেছে। আরও হয়তো কুড়ি-পঁচিশ বছর লেগে যাবে ক্রাইস্টচার্চকে নতুন করে গড়তে! তবে আমরা লড়ে যাচ্ছি! বিশ্বকাপ উদ্বোধনের অনুষ্ঠানটাও আমাদের শহরের কাছে সেই লড়াইয়েরই প্রতীক! গোটা বিশ্বের কাছে সে দিন দেখাবার সুযোগ আমরা ম্যাচ ছেড়ে দিইনি। বরং ফিরছি!

প্র: ভয়ঙ্কর সেই ভূমিকম্পের সময় ক্রাইস্টচার্চে আপনার বাড়ি অক্ষত থাকল কী করে?
হ্যাডলি: আমি তো প্রপার ক্রাইস্টচার্চ শহরে থাকি না। আমি থাকি ক্রাইস্টচার্চের ৩০ মাইল উত্তরে ক্যান্টারবেরিতে। আমি সে দিন বাড়িতেই ছিলাম। কিন্তু আমাদের দিকটায় কোনও ক্ষতি হয়নি।

প্র: এটা কি সত্যি যে, আপনি গল্ফ কোর্সের ভিতর থাকেন?
হ্যাডলি: হ্যাঁ, আমার বাড়ি একটা এইটিন হোল গল্ফ কোর্সের মধ্যে।

প্র: ক্রাইস্টচার্চের নতুন স্টেডিয়াম কি আপনার নামে? হ্যাডলি ওভাল!
হ্যাডলি: না ওটা হ্যাগলি ওভাল। নতুন মাঠের প্যাভিলিয়নটা আমাদের নামে করা। দ্য হ্যাডলি প্যাভিলিয়ন।

প্র: ভিভ রিচার্ডস খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর বার কয়েক বলেছেন গ্লেন ম্যাকগ্রার মতো কোনও কোনও বোলারের দৌরাত্ম্য দেখে তাঁর হাত নিশপিশ করেছে যে, যদি আবার ফিরে আসা যেত! আপনিএককালের ব্যাটসম্যানদের ত্রাস রিচার্ড হ্যাডলি। আপনার কখনও মনে হয় না এই যে সব আধুনিক ব্যাটে এত ঠ্যাঙাচ্ছে। দিক না আমায় নতুন বলটা!
হ্যাডলি: না না, যা সব শট এরা খেলে তাতে বিশ্রামে থাকা অনেক বেটার। এখন বোলারদের নিয়ে বিশ্বব্যাপী ভিডিওতে এমন স্কাউটিং চলে, যে কোনও রহস্য রাখাই শক্ত।

প্র: স্কাউটিং বলতে?
হ্যাডলি: এই যে ভিডিও আর ল্যাপটপে প্রতি মুহূর্তে কাটাছেঁড়া। বোলারের প্রতি মিলিমিটার রহস্য এরা উন্মোচন করে ফেলছে। আর ব্যাটসম্যানরা কী কী সব শট খেলে! আমাদের সময় একটু আউট অব দ্য বক্স গেলে ক্যাপ্টেনের ভ্রু কুঁচকে যেত। আর এরা কী অবলীলায় শুধু ইম্প্রোভাইজ করে করে আউট অব দ্য বক্সই খেলছে। এবি ডে’ভিলিয়ার্সকে ভাবুন তো! ভাগ্যিস ওকে আমায় বল করতে হচ্ছে না। টিভির সামনে বসে আমি অনেক সেফ।

প্র: বলছেন কী?
হ্যাডলি: ঠিকই বলছি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এসে খেলাটাকে পুরো বদলে দিয়েছে। এত সব উদ্ভাবন ব্যাটসম্যানরা করে ফেলেছে, এত নতুন নতুন স্কিল তৈরি করেছে যে, বোলাররা থামাবে কী করে? এ বারের বিশ্বকাপটাও হাই স্কোরিং হবে।

প্র: তা হলে সেটাই তো হবে সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট?
হ্যাডলি: ইয়েস, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এ বার সবচেয়ে বেশি ছাপ ফেলবে ওয়ান ডে বিশ্বকাপের ওপর। ফেলবেই!

Advertisement

হ্যাডলি-জ্যোতিষ

ভারত: বোলিংয়ে ইশান্ত শর্মা আসল লোক ছিল। ও চলে যাওয়াটা বড় ধাক্কা। ব্যাটিংয়ে কোহলিকে সামলাতে হবে। ওয়ান ডে-তে হিসেব বদলাতে সময় লাগে না। কে বলতে পারে গা ঝাড়া দিয়ে উঠবে না ভারত! তবে যা দেখছি, যা বুঝছি আমার এই মুহূর্তের ফেভারিটদের মধ্যে ওরা নেই!

নিউজিল্যান্ড: টিম দারুণ খেলছে। সমর্থকদের প্রচুর আশা এ বার। কিন্তু অপ্রিয় প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে, সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গে বসার মানসিকতা কি আমরা অর্জন করতে পেরেছি? বিশ্বকাপের ইতিহাস দেখাবে মোট পাঁচবার খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আমরা হেরে গেছি। বিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপ • সেমিফাইনাল নিয়ে আজও আমাদের দেশে ট্র্যাজিক কথাবার্তা হয়। কী ভাবে যে ম্যাচটা পিছলে গিয়েছিল ভাবাই যায় না!

অস্ট্রেলিয়া: অন্যতম ফেভারিট তো নিশ্চয়ই। অস্ট্রেলিয়ান উইকেটে ওদের হারানোটা সমস্যা হবে।

দক্ষিণ আফ্রিকা: আমার কাছে ‘আ টিম ফর অল সিজনস’। আমার তো মনে হয়, যে কোনও পরিস্থিতিতে ওরা মারাত্মক হতে পারে। ওদের টপ অর্ডার ব্যাটিংটা দেখলে আমি খুশি হয়ে যাই যে, আমায় আর বল করতে হয় না! ডে’ভিলিয়ার্সকে না থামালে ও সবাইকে লণ্ডভণ্ড করে দেবে।

পাকিস্তান: ওদের সম্পর্কে কোনও রকম ক্রিকেট-জ্যোতিষ চলে না। সব সময় ওরা চমকে ভরা। তবে এটুকু বলতে পারি পাকিস্তান যদি কোয়ার্টার ফাইনাল চলে যায়, ওদের সামনে কেউ পড়তে চাইবে না। কারণ, ওরা যে কোনও টিমকে যে কোনও দিন হড়কে দিতে পারে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement