অ্যাটলেটি্কো কলকাতা।
আইএসএল আমার মতো আই লিগ ক্লাব কোচেদের দারুণ সুবিধে করে দিয়েছে। এই টুর্নামেন্ট শেষ হলেই তো আমরা মাঠে নেবে পড়ব। তার আগে সনি, প্রণয়, প্রীতম, দেবজিৎ, শৌভিকদের দেখে নিচ্ছি। কেমন ওদের অবস্থা? কোথায় খামতি? সব নজরে রেখে চলেছি।
সনি-শৌভিকদের সঙ্গে আমার মাঝেমধ্যেই কথা হচ্ছে। নানা পরামর্শ দিচ্ছি ওদের। সে দিনই তো মুম্বইয়ের হয়ে খেলতে নেমে প্রণয় লাল কার্ড দেখে বসল। রাতে ওকে ফোন করে বললাম, ‘ও রকম মাথা গরম করছিস কেন? ঠান্ডা থাক।’ সনি নর্ডিকেও কনগ্র্যাচুলেট করেছি, আইএসএলের গোলটা দেখে।
কলকাতার দুই বড় দলের ফুটবলাররা এখন দেশের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খেলছে। তবে আমি সবচেয়ে খুশি আটলেটিকো কলকাতাকে দেখে। অর্ণব, প্রীতম, প্রবীর, দেবজিতদের মতো বঙ্গসন্তানরা দাপটে খেলছে আমাদের কলকাতা টিমে। যা গত দু’বারের আইএসএলে সে ভাবে দেখিনি। আইএসএলের সব টিম শহর ভিত্তিক। ফলে কলকাতা দলে বাংলার ছেলেদের বেশি করে যোগদান আলাদা মাত্রা দিচ্ছে এ বার। কলকাতা সব অর্থেই এখন বাংলার টিম। ডিকা, বিক্রমজিৎ, রবার্টরাও তো আছে। এটিকের স্প্যানিশ কোচ জোসে মলিনা দুই সাইড ব্যাকে প্রীতম আর প্রবীরকে সব ম্যাচ খেলাচ্ছেন।
এমনিতে মাত্র আট দলের লিগ থেকে সেমিফাইনালে ওঠার অঙ্ক কষা কোচেদের কাছে কঠিন। পরপর দুটো ড্র-ও পয়েন্ট টেবলের নিচে পাঠিয়ে দিতে পারে কোনও দলকে। গত দু’বার কলকাতা চ্যাম্পিয়ন আর সেমিফাইনালিস্ট। মলিনাকে এখন শেষ চারে যেতে হলে জিততে হবে। এমনিতে চার ম্যাচে তিনটে ড্র— খারাপ বলব না আমি। তবে জিতলে লিগ টেবলে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া যায়। আজ মলিনার কলকাতা মুখোমুখি হচ্ছে জামব্রোতার দিল্লির। ঘরের মাঠে এই ম্যাচ থেকেই যদি জেতা শুরু করতে পারে এটিকে, তা হলে সেটা মলিনার কাছে আশীর্বাদ হবে। না হলে কিন্তু চাপে পড়ে যাবে।
মলিনা আজ কী করবেন জানি না। তবে আমি এটিকে কোচ হলে শনিবার দলের ফর্মেশন বদলে ফেলতাম। ৪-৪-১-১ থেকে ৪-৪-২। আক্রমণ বাড়াতে হিউমের সঙ্গে স্পেনের বেলানকোসো-কেও সামনে রাখতাম। কলকাতার সুবিধ হল, দ্যুতি আর জাভি লারার মতো দু’জন থাকছে মাঝমাঠে। দ্যুতির উইং দিয়ে দৌড় আর মাঝেমাঝে কাট করে ভেতরে ঢোকাটা অনেকটা সনির মতো। লারা আবার বলটা খুব ভাল ধরে খেলতে জানে।
আজকের ম্যাচকে আমি দেখছি কলকাতার অ্যাটাক বনাম দিল্লির ডিফেন্স। দিল্লিকে জামব্রোতার খেলানো দেখে মনে হচ্ছে, ইতালিয়ান স্টাইল এখনও পুরো রপ্ত করতে না পারলেও শৌভিকরা ডিফেন্সটা জমাট রাখার চেষ্টা করছে। আমার ধারণা এটিকের ম্যাচে ৪-১-৪-১ ফর্মেশনে টিম নামাবে জামব্রোতা। কলকাতা প্রচুর পাস খেলার চেষ্টা করে। তবে সেটা সুন্দর করে তুলতে পারেনি ওরা এখনও। পস্টিগা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারছি। মাদ্রিদের প্রি-সিজন ট্রেনিংয়েও সেই সময় কলকাতা লিগ খেলতে ব্যস্ত ফুটবলারদের পায়নি মলিনা। তা সত্ত্বেও ভদ্রলোকের হাতে যা রসদ আছে, তা দিয়েই লড়াই করার চেষ্টা করছে। আমার ধারণা এটিকের সেমিফাইনাল উঠতে অসুবিধে হবে না।
তবে কলকাতা গোল দিয়েও পরের দিকে গোল খেয়ে যাচ্ছে, এটা নিশ্চয়ই জামব্রোতার চোখ এড়িয়ে যায়নি। যেমন মলিনাও নিশ্চই ভেবে আশ্বস্ত হচ্ছে যে, মুম্বই যদি দিল্লিকে তিন গোল দিতে পারে, তা হলে কলকাতা পারবে না কেন? সে জন্যই আমার ধারণা ম্যাচটা উপভোগ্য হবে। দু’দলই জিততে চাইবে।
যদিও গত দু’বারের মতো এ বার আইএসএল জমে ওঠেনি। তবে লিগ টেবলে যে ভাবে একটা টিম অন্য টিমের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে তাতে আর একটা-দু’টো রাউন্ডের পরে আশা করছি উত্তেজনা ফিরবে।
দিল্লির মালুদা আজ কেমন খেলে দেখতে আগ্রহী আমি। যত প্রাক্তন বিশ্বকাপার আইএসএলে খেলছে, তাদের মধ্যে ও-ই সবথেকে ফিট। গত মরসুমে ওর খেলা আমার দারুণ লেগেছিল।
কিন্তু আমি বরাবর বিশ্বাস করি, আইএসএলের চেয়ে আই লিগ কঠিন। আই লিগে যে সব ভারতীয় ফুটবলারর খেলার সুযোগ পায় না সেই গৌরমাঙ্গি, সন্দীপ নন্দী, রাভানন, বলজিৎ সাইনি, ইসফাক আমেদরাও অনায়াসে খেলে দিচ্ছে আইএসএল। কোচেদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ থাকে আইএসএলে। কয়েক দিন আগে দেখলাম, সঞ্জয় বালমুচুকে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে খেলানো হচ্ছে। মোহনবাগানে যদি আমি ওকে ওই রকম অপ্রত্যাশিত পজিশনে খেলাতাম, হয়তো সমালোচনা শুরু হয়ে যেত। আইএসএল কোচেদের গালাগাল খেতে হয় না। এই যে হাবাস পুণেতে গিয়ে হারছে বা ড্র করছে, সেটা নিয়ে কারও মাথাব্যথা আছে কী? বরং মজার ব্যাপার, হাবাসের সঙ্গে মলিনার তুলনা চলছে!
(৩৬০ কর্পোরেট রিলেশনস)