ছবি: এপি।
করোনাভাইরাসের আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া দেশটি আবার ফুটবলকে সামনে রেখে ফিরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে নেমেছে। কোপা ইটালিয়া দিয়ে যে লড়াই শুরু। যেখান থেকে ব্যাটন তুলে নিয়েছে ইটালির ফুটবল লিগ সেরি আ। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোদের সামনে রেখে ইটালির মানুষ কী ভাবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে, তা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে সেরি আ-র মহাকর্তা, চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) লুইজি দে সিয়েরভোর কথায়।
রোনাল্ডোদের জুভেন্টাসের লিগ-প্রত্যাবর্তনের দিন আনন্দবাজারকে সিয়েরভো বললেন, ‘‘আমাদের দেশের মানুষ অপেক্ষা করেছিল ফুটবল ফিরে আসার জন্য। কোপা ইটালিয়ার ফাইনাল এক কোটিরও বেশি মানুষ টিভিতে দেখেছে। যা রেকর্ড। এ বার সেরি আ শুরু হয়েছে। আশা করছি, এই প্রতিযোগিতাও দারুণ সফল হবে।’’
করোনাভাইরাসের আক্রমণে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে প্রথমে সব চেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছিল ইটালি। এই মুহূর্তে তাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। ভেঙে পড়েছে অর্থনীতি। ফুটবল ক্লাবগুলোও আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে। সেরি আ মহাকর্তার মন্তব্য, ‘‘শুধু দর্শকদের টিকিট বিক্রি করতে পারছি না বলেই ১০ কোটি ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় ৮৫১ কোটির কিছু বেশি) ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা ফুটবল চালু করতে বদ্ধপরিকর।’’
এমন মরিয়া মনোভাবের কারণ, ফুটবলের হাত ধরে ইটালির মানুষকে ধীরে, ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দেখা যাচ্ছে। সে কথা জানাচ্ছেন সিইও স্বয়ং। বলছেন, ‘‘আমাদের দেশের মানুষ চায় ফুটবল ফিরুক। খেলা শুরু হলে সবাই আবার পুরনো, স্বাভাবিক জীবনের স্বাদটা পাবে।’’ পাশাপাশি আরও একটা আশার কথা শোনালেন সিয়েরভো, ‘‘আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব স্টেডিয়ামে দর্শক ফেরানোর। এখন ম্যাচের সময় অ্যাপের মাধ্যমে আর ভার্চুয়াল গ্যালারি বানিয়ে টিভি দর্শকদের খিদে কিছুটা মেটাচ্ছি। কিন্তু আসল লক্ষ্য হল, স্টেডিয়ামে দর্শক ফিরিয়ে আনা। আমরা ইটালি সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা চালাচ্ছি।’’
জার্মানির বুন্দেশলিগা থেকে শুরু করে স্পেনের লা লিগা, সবই আবার চালু হয়েছে। কিন্তু একটা প্রশ্ন কাঁটা হয়ে থাকছে। ফুটবলের মতো শারীরিক সংযোগ এবং সংঘর্ষের খেলায় কোনও ফুটবলারের করোনা ধরা পড়লে কী হবে? সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কি বন্ধ হয়ে যাবে? ইটালিতে সেই সম্ভাবনা নেই। সিয়েরভো বলছেন, ‘‘কোনও ফুটবলারের যদি কোভিড-১৯ ধরা পড়ে, তা হলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে বাকিদের থেকে আলাদা করে দেওয়া হবে। বাকিরা খেলা চালিয়ে যাবে। যদিও তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। পরে সুস্থ হয়ে গেলে সেই ফুটবলার আবার দলে যোগ দিতে পারবে। এই ভাবে চললে চ্যাম্পিয়নশিপটা শেষ করা যাবে।’’
তবে সেরি আ নিয়ে সতর্কতার মাত্রা কমছে না তাঁদের। মোটামুটি বাকি দেশগুলোর মতোই কঠোর পদক্ষেপ করেছে সেরি আ কর্তৃপক্ষ। যেমন, ১) পরীক্ষা হয়নি এমন কারও সংস্পর্শে কখনও আসতে দেওয়া হবে না ফুটবলারদের। ২) বাতিল করা হয়েছে সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং ম্যাচের পরে মিক্সড জ়োন (যেখানে ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান সাংবাদিকেরা)। ৩) করমর্দন করা যাবে না। ৪) মাঠে কোনও অবস্থাতেই সব মিলিয়ে তিনশোর বেশি লোক থাকবে না। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ চালিয়ে যাবে সেরি আ। এই লড়াইয়ে জয়টা কার হয়, সেটাই এখন দেখতে চায় করোনা বিধ্বস্ত পৃথিবী।
মঙ্গলবারের সেরি আ: ভেরোনা বনাম নাপোলি (রাত ১১.০০), তোরিনো বনাম উদিনেস (রাত ১.১৫)। সরাসরি সম্প্রচার সোনি টেন ২ ও সোনি সিক্স চ্যানেলে।