পন্থের অপেক্ষা হয়তো বাড়ছে, আস্থা শঙ্করেই

মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত যে দু’টো সুখবরের আশায় রয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা, তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক) ম্যাঞ্চেস্টারে বৃষ্টি থামার কোনও লক্ষণ নেই।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

ম্যাঞ্চেস্টার শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ০৩:৩৬
Share:

প্রতীক্ষা: ঋষভকে খেলানো নিয়ে দ্বিধায় শাস্ত্রী-কোহালিরা। ছবি: টুইটার।

তিরাশিতে কপিলের দৈত্যদের সফল কাপ অভিযান শুরু হয়েছিল এই ওল্ড ট্র্যাফোর্ড থেকেই। সে বার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সকলকে চমকে দিয়েছিল ভারত। এ বারও ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ কি শুভলক্ষণ নিয়ে হাজির হবে?

Advertisement

মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত যে দু’টো সুখবরের আশায় রয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা, তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক) ম্যাঞ্চেস্টারে বৃষ্টি থামার কোনও লক্ষণ নেই। মঙ্গলবারও ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ দু’দলের আউটডোর প্র্যাক্টিসই বাতিল করে দিতে হল। ভারতীয়রা তো বৃষ্টি হচ্ছে শুনে অনেকে এলেনই না। যতই আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলুক, ম্যাচের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই, প্রস্তুতি নিয়ে এই ‘বাবুজি জরা ধীরে চলো’ মার্কা সুর এ বার চরম বিরক্তি উৎপাদন করতে শুরু করেছে। যেখানে যাচ্ছেন কোহালিরা, মেঘলা আকাশ আর বৃষ্টি ছায়ার মতো তাঁদের পিছু নিচ্ছে।

দুই) সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরেও ঋষভ পন্থকে খেলানোর কোনও ভাবনা ভারতীয় দলের মধ্যে রয়েছে বলে খবর নেই। বরং দেখেশুনে মনে হচ্ছে, বিজয় শঙ্করকে আরও সুযোগ দেওয়ার কথাই ভাবছেন কোহালিরা। তা সে যতই ক্রিকেট বিশ্বে তর্কের ঝড় উঠুক যে, শঙ্করই যথাযথ চার নম্বর কি না?

Advertisement

পরামর্শ: গুরু শাস্ত্রীর ক্লাসে শিষ্য শঙ্কর। তাঁর উপর আস্থা দলের। ছবি: টুইটার।

ইন্ডোরের প্র্যাক্টিসে ভারতীয় দলের মাত্র চার জন এলেন। এর মধ্যে উদাহরণ হয়ে থাকার মতো নাম বিরাট কোহালি। চলতি বিশ্বকাপে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেঞ্চুরি নেই এখনও। ঐচ্ছিক অনুশীলনের দিনে হোটেলে বসে আরাম না করে চলে এলেন নিজেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের জন্য তৈরি করতে। শোনা গেল, আগের দিন দারুণ খেলতে খেলতেও উইকেট দিয়ে আসায় নিজের উপর বিরক্ত অধিনায়ক। তাই কিছুটা শাস্তি দেওয়ার ঢংয়েই বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঐচ্ছিক অনুশীলনে এলেন। আশ্চর্যের হচ্ছে, রানের মধ্যে থাকা কোহালি প্র্যাক্টিসে এলেন, ক্রিজে আটকে যাওয়া ধোনি এলেন না।

কোহালিকে দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং করতে দেখা গেল বোলিং মেশিন আর থ্রো ডাউনের সামনে। হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে নিবিড় আলোচনাতেও মগ্ন থাকতে দেখা গেল। ২০১৪-তে সেই অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে শাস্ত্রী-কোহালি জুটি চাণক্য-চন্দ্রগুপ্তের মতো হয়ে উঠেছেন। কোহালিকে অস্ট্রেলিয়ার সেই সিরিজে মিচেল জনসনদের বিরুদ্ধে ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে দাঁড়ানোর সেই বিখ্যাত পরামর্শ দিয়েছিলেন শাস্ত্রী। তার পর থেকেই পাল্টে যাওয়া ব্যাটসম্যান তিনি। এ দিনও দেখে মনে হল, দু’জনে নতুন কিছু উদ্ভাবনের নেশায় মেতেছেন।

কোহালি ছাড়া এলেন আরও তিন জন। তার মধ্যে বিজয় শঙ্করকে নিয়ে নডর কাড়ার মতো অনুশীলন চলল। ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারকে সঙ্গে নিয়ে বেশ খানিক্ষণ ব্যাটিং করলেন তিনি। অধিনায়ক কোহালি এবং কোচ শাস্ত্রীও মাঝেমধ্যে তাতে এমন নিবিড় ভাবে জড়িয়ে পড়ছিলেন যে, দেখে মনে হওয়ার উপায় নেই যে, সাউদাম্পটনেই শঙ্কর চলতি বিশ্বকাপে তাঁর শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। এক বার শাস্ত্রী গিয়ে নেটের মধ্যে ঢুকে বোঝাতে থাকলেন তাঁকে। সেই দৃশ্য দেখে মনে হবে, একটা ম্যাচ দেখেই শঙ্করের ব্যাটিং দক্ষতায় আস্থা হারাচ্ছে না দল।

প্রস্তুতি: চোখই বলে দিচ্ছে, বলের উপরে কতটা নজর রাখেন বিরাট। ছবি: টুইটার।

ভারতীয় দলের অন্দরমহল থেকে যে রকম ইঙ্গিত পাওয়া গেল, তাতে মনে হচ্ছে, ম্যাঞ্চেস্টারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অন্তত তাঁকে বসানো হচ্ছে না। তা হলে ঋষভ পন্থ ঢুকবেন কার জায়গায়? বা আদৌ তাঁকে নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে কি?

মঙ্গলবার ইন্ডোর প্র্যাক্টিসে কোহালি, বিজয় শঙ্কর ছাড়া দেখা গেল রবীন্দ্র জাডেজা এবং ভুবনেশ্বর কুমারকে। এই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বল করতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান ধরেছিল ভুবনেশ্বরের। সেই ম্যাচে আর বলই করতে পারেননি তিনি। তার পর এ দিন আবার প্রথম বল করলেন। তিনি অনেকটা সেরে উঠেছেন বলে খবর। যদিও সম্পূর্ণ ছন্দে আসতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বৃহস্পতিবার প্রথম একাদশের দৌড়ে নেই ভুবি। সাউদাম্পটনে শামির হ্যাটট্রিকের পরে তাঁকে ফেরানোর তাড়াহুড়োও ততটা নেই। রাতারাতি নাটকীয় কোনও পরিবর্তন না ঘটলে সাউদাম্পটনের একাদশই হয়তো দেখা যাবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে।

ভারতীয় দলে এই মুহূর্তে ছয় থেকে এগারো নম্বর পর্যন্ত জায়গাগুলোতে পরিবর্তন হওয়া কঠিন। এই ছয় থেকে এগারো নম্বর পর্যন্ত থাকছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, হার্দিক পাণ্ড্য, কুলদীপ যাদব, মহম্মদ শামি, যুজবেন্দ্র চহাল এবং মহম্মদ শামি। ওপেনিং জুটিতে শিখর ধওয়ন বিদায় নেওয়ার পরে রোহিত শর্মার সঙ্গী কে এল রাহুল। তিনে বিরাট কোহালি। তার মানে যদি কোনও বদল করতে হয়, তা করতে হবে চার এবং পাঁচ নম্বর জায়গায়। যে দুই জায়গায় ব্যাট করছেন বিজয় শঙ্কর এবং কেদার যাদব। তিরাশিতে কপিলের বিশ্বকাপজয়ী যে দল ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল, সেই দলে তিন, চার এবং পাঁচ নম্বর ছিলেন যথাক্রমে মোহিন্দর অমরনাথ, সন্দীপ পাটিল এবং যশপাল শর্মা। এর মধ্যে সব চেয়ে কম বিখ্যাত ছিলেন যশপাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৪ রানে হারানোর ম্যাচে ৮৯ রান করে যশপালই ছিলেন সর্বোচ্চ স্কোরার।

সেই ম্যাচে অ্যান্ডি রবার্টস এবং জোয়েল গার্নারের শেষ উইকেটের লম্বা পার্টনারশিপ ভেঙে ভারতকে বল হাতে জেতান রবি শাস্ত্রী। কোচ শাস্ত্রীর দল কি বিজয় শঙ্করের মধ্যে নতুন যশপালকে খুঁজে পেল? বহির্বিশ্বে যতই ঋষভ পন্থকে খেলানো দাবি জোরাল হতে থাকুক, দলের অন্দরমহলে অন্য রকম ব্যাখ্যা ঘোরাফেরা করছে। কারও কারও মনে হচ্ছে, ঋষভের পঞ্চাশ ওভারের ওয়ান ডে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা কম। এটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট হলে কোনও কিছু না ভেবে তাঁকে খেলিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু পঞ্চাশের ওভারের খেলায় হিসাব কষে ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিপক্কতা তাঁর এসেছে কি না, তা অজানা। সেই গুণ নাকি শঙ্করের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের মধ্যে খুঁজে পেয়েছে দল। এমনকি, দীনেশ কার্তিকের পক্ষেও ভোট রয়েছে। কিন্তু চার নম্বরের জন্য ঋষভের আক্রমণাত্মক ভঙ্গি ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়মুক্ত হতে পারছে না দল। শঙ্করের পক্ষে যাচ্ছে তাঁর দুর্দান্ত ফিল্ডিং এবং ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় প্রয়োজনে বল হাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারার বোনাস। এই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেই ভুবনেশ্বরের চোট লাগার পরে পরিবর্ত বোলার হিসেবে ওভার শেষ করতে এসে জুটি ভেঙে দিয়েছিলেন তিনি। ক্রিকেট বিশ্ব অবশ্য বোলার শঙ্করকে নিয়ে নয়, তর্কে মেতেছে চার নম্বরের ভূমিকায় নিযুক্ত ব্যাটসম্যান শঙ্করের যোগ্যতা নিয়ে।

কোহালির ‘যশপাল’ হয়ে ওঠার ক্ষমতা সত্যিই বিজয় শঙ্করের আছে কি না, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেই সম্ভবত এসপার-ওসপার হয়ে যাবে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement