ছিটকে গেলেন শঙ্করও, বিকল্প বাড়ানোর লক্ষ্যে এ বার ডাক মায়াঙ্ককে

সাউদাম্পটনে নেটে ব্যাট করার সময় যশপ্রীত বুমরার ইয়র্কার এসে আঘাত করেছিল তাঁর বাঁ-পায়ের পাতায়। সেই চোটই বিশ্বকাপ শেষ করে দিল শঙ্করের।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৯ ০৩:০৪
Share:

হতাশ: পায়ের চোট শেষ পর্যন্ত ছিটকে দিল শঙ্করকে। ফাইল চিত্র। পরীক্ষা: বিশ্বকাপ বৃত্তে ঢুকে পড়লেন মায়াঙ্ক। ফাইল চিত্র

এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের কাছে হার এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনি-কেদার যাদবদের দিকে ধেয়ে আসা ধিক্কার ধ্বনিতেই থেমে থাকছে না ভারতের দুর্ভোগ। ইংল্যান্ডে আসা ইস্তক বিব্রত করতে থাকা চোট-আঘাতজনিত ব্লাড প্রেশার আরও বেড়েছে। এ বার তা গ্রাস করল এই বিশ্বকাপের সব চেয়ে বিতর্কিত ক্রিকেটার বিজয় শঙ্করকে।

Advertisement

সাউদাম্পটনে নেটে ব্যাট করার সময় যশপ্রীত বুমরার ইয়র্কার এসে আঘাত করেছিল তাঁর বাঁ-পায়ের পাতায়। সেই চোটই বিশ্বকাপ শেষ করে দিল শঙ্করের। যাঁকে প্রথম থেকে চার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে ভেবে আসার জন্য ভারতীয় দল পরিচালন সমিতিকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছিল।

সাউদাম্পটনে বুমরার বল লাগার সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রণাবিদ্ধ দেখাচ্ছিল শঙ্করকে। তখন ভারতীয় দলের তরফে বলা হয়েছিল, চোট গুরুতর নয়। ওই অবস্থাতেই দু’টি ম্যাচ খেলেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যাচের পরে তাঁর পায়ের পাতার অবস্থার অবনতি হয়। এজবাস্টনে এসে স্ক্যান রিপোর্টে ধরা পড়ে চিড় ধরেছে। অন্তত তিন সপ্তাহ লাগবে চোট সারতে।

Advertisement

বিশ্বকাপের দল নির্বাচনে সব চেয়ে বিতর্কিত নাম ছিলেন শঙ্কর। শুরু থেকেই প্রশ্ন উঠে পড়েছিল ক্রিকেট মহল এবং ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে যে, ঋষভ পন্থকে বাদ দিয়ে কেন তাঁকে দলে নেওয়া হয়েছে? পন্থকে নিয়ে এতটাই হইচই হয়েছে যে, রবিবার ইংল্যান্ডের কাছে হারের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে রোহিত শর্মাও তাতে মশলা যোগ করে গেলেন। রোহিতকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, পন্থকে প্রথম ম্যাচেই চার নম্বরে নামানো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল কি না? সেঞ্চুরি করে আসা ওপেনার জবাব দিলেন, ‘‘মনে হয় না। আপনারাই তো পন্থ, পন্থ করছিলেন। এই নিন পন্থ। চার নম্বরে ব্যাট করছে।’’

শঙ্কর-বিদায়েই অবশ্য নির্বাচনী বিতর্ক থামছে না। ভারতীয় দল এবং নির্বাচক কমিটি মিলে শঙ্করের পরিবর্ত হিসেবে বেছে নিয়েছে মায়াঙ্ক আগরওয়ালকে। যিনি কখনও ভারতের হয়ে ওয়ান ডে-ই খেলেননি। সোজা বিশ্বকাপে উড়িয়ে আনা হচ্ছে তাঁকে। অথচ, এর আগে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে অম্বাতি রায়ডুর নাম ঘোষণা করে রাখা হয়েছিল। সচরাচর প্রথা হচ্ছে, প্রয়োজন পড়লে স্ট্যান্ডবাই থেকেই পরিবর্ত পাঠানো হয়। শিখর ধওয়ন চোট পাওয়ায় ঋষভ পন্থকে যেমন আনা হয়েছিল। যদিও আইসিসি নিয়মে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই যে, স্ট্যান্ডবাই তালিকা থেকেই পরিবর্ত বাছতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ায় টেস্টে সফল অভিষেক হয়েছিল মায়াঙ্কের। ভারতের হয়ে এখনও ওয়ান ডে না-খেললেও ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর স্ট্রোকপ্লে দেখে নামকরণ করা হয়ে গিয়েছে ‘নতুন সহবাগ’। অস্ট্রেলিয়ায় প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্কদের বিরুদ্ধে গতিসম্পন্ন এবং বাউন্সি উইকেটে মাথায়, শরীরে আঘাত পেয়েও দারুণ লড়াকু মানসিকতা দেখিয়ে রান করে এসেছিলেন মায়াঙ্ক। তবু একেবারেই আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে-র কোনও অভিজ্ঞতা না থাকা এক জনকে বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে মাঝপথে উড়িয়ে আনা ঠিক হচ্ছে কি না, তা নিয়ে তর্ক উঠে পড়েছে। শঙ্করের জায়গায় মিডল অর্ডারের জন্য কাউকে না এনে ওপেনার কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে।

কেউ কেউ অজিঙ্ক রাহানের নাম নিচ্ছেন। হ্যাম্পশায়ারের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে এখন ইংল্যান্ডেই আছেন ভারতের টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক। তবে রাহানে শেষ ওয়ান ডে খেলেছেন গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। আইপিএলেও একেবারেই ফর্মে ছিলেন না। পাশাপাশি, ওয়ান ডে কখনও না খেললেও ঘরোয়া ক্রিকেটে এক দিনের ম্যাচে ৪৮.৭১ ব্যাটিং গড় রয়েছে মায়াঙ্কের। এ বারের আইপিএলে মিডল অর্ডারে ব্যাট করে ৩৩২ রান করেছিলেন। স্ট্রাইক রেট (একশো বলে কত রান করেছেন, সেই শতকরা হিসেবকেই বলা হয় স্ট্রাইক রেট) ছিল ১৪১.৮৮। কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন তিনি।

নির্বাচকমণ্ডলী এবং ভারতীয় দল পরিচালন সমিতি সম্ভবত বড় নাম নয়, সাম্প্রতিক ফর্মকে গুরুত্ব দিতে চেয়েছে। ভারতীয় দলের অন্দরমহলে খোঁজ নিতে গিয়ে অন্য ছবিও উঠে আসছে। মায়াঙ্ককে বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ, তিনি ওপেন আর মিডল অর্ডার দু’জয়গাতেই ব্যাট করতে পারেন। চোট-আঘাতের কারণে ভারতীয় শিবির মোটামুটি মিনি হাসপাতালের আকার ধারণ করেছে। এজবাস্টনে রবিবার ক্যাচ নিতে গিয়ে কে এল রাহুলও কোমরে চোট পেয়েছেন। তিনি পরে ব্যাট করতে নামলেও শূন্য রানে আউট হন। খুব একটা স্বস্তিতে যে ছিলেন না, বেশ বোঝা যাচ্ছিল। ধওয়ন ছিটকে গিয়েছেন। এখন রাহুলের পরিবর্তেও নতুন ওপেনার লাগে কি না, সেই চিন্তা এসে পড়েছে।

এজবাস্টনে ধোনি এবং কেদারের অদ্ভুত ব্যাটিংয়ের পরে এটুকু অন্তত নিশ্চিত যে, ঋষভ পন্থকে বসানো হবে না। ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার এসে বলেও গেলেন, ‘‘ঋষভকেই চার নম্বরে খেলানো হবে। ওটার কোনও বদল হচ্ছে না।’’ বাঙ্গার যতটা জোরের সঙ্গে বলে গেলেন, ততটা নিশ্চিত কি পন্থ? বলা যাচ্ছে না। মায়াঙ্ককে নিয়ে আসা মানে আরও একটা রাস্তা খোলা থাকল। যদি মিশন ঋষভ পন্থ মুখ থুবড়ে পড়ে, রাহুলকে চারে পাঠিয়ে মায়াঙ্ককে দিয়ে ওপেন করানো হতে পারে। ভারতীয় শিবির এখন ব্যাটিং বিভাগে তীব্রতা যোগ করার লক্ষ্যে নানা বিকল্প হাতে রাখতে চাইছে।

কিন্তু একটা ব্যাপার নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বিতর্ক মাথায় নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছিলেন বিজয় শঙ্কর। বিতর্ক জিইয়ে রেখেই বিদায় নিলেন!

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement