আস্থা: হেডিংলেতে তুরুপের তাস হতে পারেন কুলদীপ। ছবি: এপি।
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে রাউন্ড রবিনের শেষ ম্যাচে ভারতীয় দলের একটা চোখ থাকছে আরও একটা জয় তুলে নেওয়ার দিকে। শেষ চারের দ্বৈরথের দিকে থাকছে অন্য চোখ। হেডিংলেতেই সেমিফাইনাল ও ফাইনালের জন্য ঘর গুছিয়ে নেওয়ার শেষ সুযোগ।
শুক্রবার হেডিংলের মাঠে ভারতীয় দলের অনুশীলনে সব চেয়ে বেশি নজর দু’জনের উপরে। এক জন অবশ্যই মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। অন্য জন কুলদীপ যাদব। চায়নাম্যান স্পিনারকে বহু ক্ষণ বল করতে দেখা গেল। পরে মাঝখানের একটি পিচেও বল করানো হল তাঁকে। বোলিং কোচ বি অরুণ সারা ক্ষণ লেগে থাকলেন তাঁর সঙ্গে। কাছেই লিডস বিমানবন্দর। মাথার উপর দিয়ে ঘনঘন উড়ে যাচ্ছে উড়ান। আর মাঠের লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে, সাময়িক গোলযোগের পরে কুলদীপও ফের টেক-অফ করার জন্য তৈরি।
যা ইঙ্গিত, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রাউন্ড রবিন পর্বের শেষ ম্যাচে প্রথম একাদশে ফেরানো হতে পারে কুলদীপকে। এজবাস্টনে ছোট বাউন্ডারির ফায়দা তুলে তাঁকে ও যুজবেন্দ্র চহালকে মেরে দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানেরা। কিন্তু ভারতীয় দলের মধ্যে কুলদীপের প্রতি আস্থা তাতে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়নি। বরং মনে করা হচ্ছে, বিশ্বকাপের এতগুলি ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পরে পিচ খারাপ হতে শুরু করেছে। শেষ পর্বে স্পিনারেরা আরও বড় ভূমিকা নিতে পারেন। কুলদীপকে খেলানোর ভাবনা রয়েছে সম্ভবত তাঁকে নক-আউট পর্বের জন্য তৈরি রাখার জন্যও। কোহালিরা মনে করছেন, নক-আউট পর্বে অপেক্ষাকৃত খারাপ হয়ে আসা পিচে ফের ব্রহ্মাস্ত্র হতে পারেন কুল-চা।
আর কুলদীপ এমন এক বোলার, যাঁকে আত্মবিশ্বাসী রাখা খুব জরুরি। যে-হেতু তিনি বোলিংয়ের এক বিরল শিল্পের সওদাগর। চায়নাম্যান বোলিং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, সামান্য এ-দিক ও-দিক হলেই ব্যাটসম্যানের চাবুকের ঘা সহ্য করতে হতে পারে। সেই কারণে কুলদীপকে বেশি দিন মাঠের বাইরে রাখলে তাঁর আত্মবিশ্বাসে বিরাট ধাক্কা লাগতে পারে বলে অনেকের মনে হচ্ছে। তা হলে চলতি বিশ্বকাপেই আর তাঁকে ব্যবহার করা কঠিন হয়ে যেতে পারে।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শনিবারের ম্যাচে কোহালিদের চেষ্টা থাকবে জিতে এক নম্বরে শেষ করা। তা হলে চার নম্বরে থাকা নিউজ়িল্যান্ডের সঙ্গে সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ পাবেন তাঁরা। তবে যদি অস্ট্রেলিয়া হারিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে, তা হলে ডেভিড ওয়ার্নাররাই এক নম্বর থাকবেন। তখন কোহালিদের ফের ইংল্যান্ডের সামনে পড়তে হবে। যদি অস্ট্রেলিয়া হারে আর ভারত জেতে, তবেই নিউজ়িল্যান্ডকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেতে পারেন কোহালিরা।
সমস্ত দিক ভেবেচিন্তেই কুলদীপ অস্ত্রে শান দিয়ে রাখতে চাইছে ভারত। তাঁকে এই মুহূর্তে কিছুটা সাহস দেওয়ার চেষ্টাও চলছে। আইপিএলে মার খাওয়ার পরে এমন একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, চায়নাম্যান কুলদীপ যাদবের রহস্য কি তা হলে ধরে ফেললেন ব্যাটসম্যানেরা? সেই সময়ে কুলদীপ নিজেও খুব বিভ্রান্ত। কলকাতা নাইট রাইডার্স বসিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তাঁর দক্ষতা নিয়ে। বিশ্বকাপে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাই হেড কোচ রবি শাস্ত্রী এবং বোলিং কোচ বি অরুণ তাঁর সঙ্গে প্রচুর সময় কাটান। প্র্যাক্টিসের সময় মাঠে, হোটেলে, বাসের মধ্যে যাত্রা করার সময় কুলদীপকে নিয়ে লেগে থাকতেন বোলিং কোচ অরুণ। বোলিংয়ের খুঁটিনাটি ধরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি যিনি ক্রিকেটারদের মানসিক কোচিংয়ের ব্যাপারেও অতুলনীয়। সারা ক্ষণ ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছেন তিনি। ক্রিকেটারদের মনের দিকটা বুঝে কোচিং করানোর প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী তিনি। অরুণের দর্শন হচ্ছে, খেলোয়াড়ের নিজের মাথায় ঢুকিয়ে দাও, তার কী দরকার। সে নিজে যদি বুঝতে পারে, কাজ সহজ হয়ে যাবে। মার খাওয়ার পরে কুলদীপকেও এই দাওয়াইয়ে আগ্রাসী এবং অকুতোভয় রাখার চেষ্টা করছেন অরুণ।
এজবাস্টনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিন পেসারে নেমেছিল ভারতীয় দল। ভেঙে ফেলা হয়েছিল কুল-চা জুটি। তাঁদের আবার একসঙ্গে দেখা যেতে পারে হেডিংলেতে। এখানকার পিচ কিছুটা হলেও স্পিনারদের সাহায্য করার প্রবণতা দেখিয়েছে। আফগানিস্তানের স্পিনাররা আগের ম্যাচে সাহায্য পেয়েছেন।
মহম্মদ শামি বা ভুবনেশ্বর কুমারের মধ্যে যে কোনও এক জনের জায়গায় ফেরানো হতে পারে কুলদীপকে। আগের দিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উইকেট পেলেও পরের দিকে এসে প্রচুর আলগা রান দিয়ে ফেলেছিলেন শামি। আবার ভুবনেশ্বর কম রান দিলেও উইকেট কম পাচ্ছেন। বুমরাকে বিশ্রাম দেওয়ার কথা ভাবা যেত এই ম্যাচে। কিন্তু টেবলে এক নম্বর স্থানকে নিশানা করা হলে তাঁকে ছাড়া কী ভাবে মাঠে নামবে দল? নক-আউট পর্বের জন্য আর একটা প্রশ্নের সমাধান করতে হবে কোহালিদের। যদি কুল-চা স্পিন জুটিকে খেলানো হয়, তা হলে বুমরার সঙ্গে দ্বিতীয় পেসার কে হবেন? ভুবি না শামি? নাকি যশপ্রীত বুমরাকে বিশ্রাম দিয়ে তরতাজা রাখা হবে নক-আউটের জন্য?
হেডিংলে একটা আন্দাজ দিয়ে যেতে পারে। শনিবার যে শুধুই রাউন্ড রবিন পর্বের শেষ ম্যাচ নয়। সেমিফাইনালে কাকে প্রতিপক্ষ পাচ্ছি, সেটাও ঠিক হওয়ার দিন!