নজরে: চাপে পড়ে আইসিসি ফেরাল অ্যাটকিনসনকে। ফাইল চিত্র
মাঠের মধ্যে একের পর এক প্রতিপক্ষকেই শুধু ঘায়েল করলে হবে না বিরাট কোহালি, রোহিত শর্মাদের। চলতি বিশ্বকাপে মাঠের বাইরেও নানা রকম যুদ্ধ জিততে হবে তাঁদের।
মনে করা হচ্ছে, ইংল্যান্ডে চলা এই বিশ্বকাপে কোহালির দলের জন্য একেবারেই লাল কার্পেট অভ্যর্থনা নিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে নেই। ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসি তো নয়ই। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কোহালির সিংহাসনে বসা ছবি আইসিসি টুইট করায় বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। তখন অনেকে প্রশ্ন তোলেন, কোহালি বা ভারতের মতো আরও ন’টি দেশ ও তাদের ক্যাপ্টেনরা আছেন। তা হলে শুধু ভারত অধিনায়কের সিংহাসনে বসা ছবি টুইট করল কেন আইসিসি? নিয়ামক সংস্থা হয়ে তারা নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারল কোথায়?
কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে, পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, আইসিসি মোটেও বিশ্বকাপে ভারতের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে আসেনি। বরং কারও কারও সন্দেহ জাগছে, কোহালি এবং তাঁর দলের রাস্তায় কাঁটাই বেশি বিছানো থাকছে কি না। প্রথম সন্দেহ জাগে পিচের চরিত্র নিয়ে। শুরুর দিকে অনেক জায়গায় আইসিসি-র পিচ প্রধান অ্যান্ডি অ্যাটকিনসনকে দেখা যাচ্ছিল না। বিভিন্ন জায়গার পিচে খুব বেশি পরিমাণে তফাত ধরা পড়ছিল। ভারতের প্রথম ম্যাচ হয়েছিল সাউদাম্পটনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। পিচ বেশ কঠিন ছিল।
সব চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে, প্রধান পিচ প্রস্ততকারক না থাকায় নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। পিচ তদারকির দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হচ্ছিল স্থানীয় কিউরেটরদের হাতে। স্থানীয় কিউরেটর মানে তাঁরা সবাই ইংল্যান্ডের। অনেকেই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন।
আরও পডু়ন: মর্গ্যানের ছক্কা-বৃষ্টিতে ১৫০ রানে জিতল ইংল্যান্ড
পাশাপাশি কেউ কেউ সূচির দিকেও আঙুল তোলেন। ভারতের প্রথম চারটি ম্যাচই ছিল সব চেয়ে শক্তিশালী। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজ়িল্যান্ড, পাকিস্তান। মানে প্রথম চারটে ম্যাচেই বিশ্বকাপ ভাগ্য এসপার-ওসপার হয়ে যেতে পারত বিরাট, রোহিতদের। অন্য কোনও দলকে শুরুতেই এ ভাবে সব শক্তিশালী দলের মুখে পড়তে হয়নি। মিলিয়ে মিশিয়ে প্রতিপক্ষ পেয়েছে। ইংল্যান্ড যেমন তাদের সব চেয়ে শক্তিশালী দুই প্রতিপক্ষ ভারত ও অস্ট্রেলিয়াকে খেলছে শেষের দিকে। আবার অন্যরা মাঠে নেমে পড়লেও ভারত নেমেছিল সবার শেষে।
চাপে পড়ে আইসিসি এখন তাদের প্রধান পিচ প্রস্তুতকারক অ্যান্ডি অ্যাটকিনসনকে ফিরিয়ে এনেছে। নিয়ামক সংস্থা এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে বিবৃতি দেয়নি। আগে যখন অ্যাটকিনসনকে দেখা যাচ্ছিল না, তখনও তারা চুপচাপ বসে ছিল। বেসরকারি ভাবে আইসিসি কর্তারা বলার চেষ্টা করছিলেন, অ্যাটকিনসনকে দরকার পড়লে নিশ্চয়ই আনা হবে। এখনও হয়তো প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাবেন তারা। কিন্তু পিচ-কাণ্ড চোখের আড়াল করা তার পরেও কঠিন হবে।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে ম্যাঞ্চেস্টারে পাঠানো হয় অ্যাটকিনসনকে। হাতেনাতে ফলও পাওয়া যায়। অ্যাটকিনসন আসার পরে ম্যাঞ্চেস্টারে দু’টো ম্যাচ হয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত তোলে ৩৩৬। এ দিন অইন মর্গ্যানের ইংল্যান্ড তুলল ৩৯৭। অথচ, এত কাল ইংল্যান্ডে ব্যাটসম্যানদের জন্য সব চেয়ে কঠিন ঠাঁই ছিল ম্যাঞ্চেস্টারই। বোঝাই যাচ্ছে, অ্যাটকিনসনের অভিজ্ঞ হাত পড়ায় পিচের চরিত্রে রদবদল হতে শুরু করেছে। কারও কারও মতে, আইসিসি-র পক্ষে অ্যাটকিনসনকে না ফিরিয়ে উপায়ও ছিল না। টুর্নামেন্টের নিরপেক্ষতা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে যাচ্ছিল।
কোনও কোনও দল ঘুরিয়ে অনুযোগ করতে শুরুও করেছিল যে, ইংল্যান্ডের ম্যাচগুলো বেশির ভাগই হাইস্কোরিং হচ্ছে। অন্যান্য অনেক জায়গায় বোলাররা প্রাধান্য পাচ্ছে। অইন মর্গ্যানের দল যে গত দু’বছরে ওয়ান ডে ব্যাটিংকে আরও বিধ্বংসী স্তরে নিয়ে গিয়েছেন, তা নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। কিন্ত ইংল্যান্ডের সব ম্যাচেই কী করে তিনশোর উপরে রান উঠছে, সেই প্রশ্নও বা কী ভাবে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা যায়? শুধুই কি কাকতালীয়? একই মাঠে যখন অন্য টিম খেলছে, তখন রানের জোয়ার দেখা যাচ্ছে না কেন?
এ দিনেরটা নিয়ে পাঁচটি ম্যাচ খেলল ইংল্যান্ড। তারা রান তুলেছে যথাক্রমে ৩১১ (দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জেতে), ৩৩৪-৯ (পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩৪৮-৮ তাড়া করে হারে), ৩৮৬ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জেতে), ২১৩ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২১২-তে শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ৩৩.১ ওভারে তুলে দেয়) এবং এ দিন আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে ছক্কার বৃষ্টি ঘটিয়ে ৩৯৭। কোহালিদের যেমন সাউদাম্পটনে মন্থর এবং কঠিন পিচে পড়তে হয়েছিল, তেমন বাইশ গজ ইংল্যান্ডের খেলায় দেখা যায়নি।
ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা টেনে বলা যেতেই পারে, মর্গ্যানদের এই ইংল্যান্ড দল পাওয়ারহিটিংয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। চারশো রান তোলাটাও জলভাত করে দেখিয়েছে তারা। কিন্তু সেই যুক্তির ঢালে বিশ্বকাপের বড় স্কোরের ধাঁধা সম্পূর্ণ মেটানো যাচ্ছে না। আইসিসি-র সঙ্গে ভারতীয় বোর্ডের সম্পর্কে অনেক দিন ধরেই যে তিক্ততা ছড়াতে শুরু করেছে, সেটাও মাথা থেকে সরালে চলবে না। জগমোহন ডালমিয়াদের যুগও নেই যে, আইসিসি বৈঠকে কেউ প্রতিবাদের ঝড় তুলে গর্জন করবে— এ সব হচ্ছেটা কী? এটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল না ইংল্যান্ড ক্রিকেট কাউন্সিল? বিরাট, রোহিতদের যা উত্তর দেওয়ার তা ব্যাটেই দিতে হবে!