বিষণ্ণ: কোচ রবি শাস্ত্রী সেমিফাইনালে হার মন থেকে মানতে পারছেন না। ফাইল চিত্র
এক দিকে হারের ময়নাতদন্ত চলছে। অন্য দিকে উঠে পড়েছে বিশ্বকাপের ফর্ম্যাট নিয়ে প্রশ্ন। সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া ভারতীয় দলের অভ্যন্তরে কী পরিস্থিতি? অঘটনের পরাজয় নিয়েই বা তিনি কী বলবেন? বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের সময় বিকেলে ম্যাঞ্চেস্টার থেকে ফোনে ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।
প্রশ্ন: সকলে ধরে নিয়েছিল, লর্ডসে ভারত ফাইনাল খেলছেই। স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় চারদিকেই হতাশা। টিমের মধ্যে কী অবস্থা?
রবি শাস্ত্রী: বিরাট তো কাল বলেই এসেছে প্রেস কনফারেন্সে— হার্টব্রেক। সকলেরই ভিতরটা দুমড়ে গিয়েছে। এ ভাবে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হবে, কে ভাবতে পেরেছিল! আমাদের অন্তত ফাইনাল খেলা উচিত ছিল। ফাইনালে গিয়ে কী হবে, কেউ বলতে পারে না। তবে ফাইনালের আগে চলে যেতে হবে, কেউ ভাবিনি।
প্র: অধিনায়কের মতোই কি বলবেন হারের কারণ চল্লিশ মিনিট?
শাস্ত্রী: আমি বলব, কুড়ি মিনিট। যখন পাঁচ রানে তিন উইকেট হয়ে গেলাম। এমএস (ধোনি) আর জাড্ডু (জাডেজা) মিলে দারুণ লড়াই করেছিল। কিন্তু শুরুতে ওই ধাক্কার পরে আমরা জানতাম, কঠিন হবে।
প্র: মিডল অর্ডার ঠিক মতো না সাজানো নিয়ে অনেকে সরব...
শাস্ত্রী: হারলে কথা হবে। কিন্তু আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, এটাই বলব যে, কুড়ি মিনিটের একটা পর্ব আমাদের হারিয়ে দিয়ে গেল। আর কোনও কিছু নয়। সঙ্গে এটাও বলব যে, গোটা টুর্নামেন্টে ছেলেরা দারুণ ক্রিকেট খেলেছে। এই কারণেই সব চেয়ে খারাপ লাগছে। আমরা যদি গোটা টুর্নামেন্টে খারাপ ক্রিকেট খেলতে খেলতে এগোতাম, তা হলে না হয় বুঝতাম। তখন মনকে বোঝানো সহজ হত। ছেলেরা ভাল খেলছিল বলেই কালকের হারটা খুবই মন ভেঙে দিয়ে গিয়েছে।
প্র: এ রকম একটা পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে হেড কোচ কী বলতে পারেন তাঁর ছেলেদের?
শাস্ত্রী: এটাই বললাম যে, গোটা টুর্নামেন্টে তোমরা দারুণ ক্রিকেট খেলেছ। সে জন্য নিশ্চয়ই তোমাদের বাহবা প্রাপ্য। ওয়েল প্লেড। একটা ছোট্ট সময়ের জন্য আমরা নিজেদের ক্রিকেটটা খেলতে পারিনি। সেটাই সব শেষ করে দিয়ে গেল। মনে রেখো, এটাই ক্রিকেট। এটাই খেলার দুনিয়া। অনেক কিছু দেবে, আবার কখন যে শূন্য করে দিয়ে চলে যাবে কেউ জানে না। ওদের দুঃখটাও বুঝতে হবে। সব চেয়ে বেশি প্রস্তুতি ওরা নিয়েছিল। সব চেয়ে বেশি স্বপ্ন ওদের চোখে ছিল। তার জন্য প্রাণপাত পরিশ্রম করে গিয়েছে সকলে দু’বছর ধরে। তার পরেও ২০ মিনিটের পর্বে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি এটুকু বলতে পারি, এই হারে আমার ছেলেদের চেয়ে বেশি দুঃখী কেউ নেই।
প্র: কোহালি গত কাল মেনে নিয়েছেন, টুর্নামেন্টের ফর্ম্যাট নিয়ে চিন্তাভাবনার দরকার। একটা দল গ্রুপের সেরা হয়ে একটা খারাপ দিনের জন্য বাইরে। আপনার কী মত?
শাস্ত্রী: আমি বলব, অবশ্যই ভেবে দেখা উচিত। হাতের সামনে উদাহরণ রয়েছে। আইপিএল। দারুণ ফর্ম্যাট। যে টিমটা গ্রুপের সেরা হয়ে এসেছে, তাদের আর একটা সুযোগ প্রাপ্য। একটা খারাপ দিন যেতেই পারে ক্রিকেটে। কত কিছু বিপক্ষে থাকতে পারে। হঠাৎ করে মেঘলা আকাশ এসে যেতে পারে, বল তখন বেশি সুইং করতে পারে। বুধবার যে রকম হয়েছিল আমরা ব্যাটিং করতে নামার সময়। আমরা অজুহাত দিয়ে ক্রিকেট খেলি না। দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখেছেন, প্রথম কথা আমি আর বিরাট বলেছিলাম যে, পিচ নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলতে আমরা এখানে আসিনি। আমরা ক্রিকেট খেলতে এসেছি। এখানেও তাই নিউজ়িল্যান্ডের থেকে কোনও কৃতিত্ব কেড়ে নিতে চাইছি না। ওরা দারুণ খেলে জিতেছে। সে দিনটায় যোগ্য বিজয়ী। কিন্তু যে দলটা এত বড় রাউন্ড রবিন পর্বে আগাগোড়া ভাল খেলল আর এক নম্বর হয়ে সেমিফাইনালে উঠল, তারা একটা ছোট্ট স্পেলের জন্য ছিটকে যাবে! এটাই বা কেমন হল?
প্র: বিকল্প তা হলে কী?
শাস্ত্রী: আমি বলব, আইসিসি-র অবশ্যই এই দিকটা ভেবে দেখা উচিত। আইপিএলের ফর্ম্যাট বেশ ভাল। সেখানে গ্রুপে টানা এত দিন ধরে ভাল খেলার একটা পুরস্কার পাওয়া যায় কারণ প্রথম দু’টো দল ফাইনালে যাওয়ার দু’টো করে সুযোগ পায়। এই দিকটা অবশ্যই ভাবা উচিত। এই টুর্নামেন্টে সব চেয়ে বেশি ম্যাচ জেতা টিম বেরিয়ে গেল। এ দিন তো ইংল্যান্ড উঠে গেল ফাইনালে। তার মানে ব্যাপারটা এই দাঁড়াচ্ছে, যে টিমটা চ্যাম্পিয়ন হবে, তারা আমাদের চেয়ে কম ম্যাচ জিতেছে।
প্র: ধোনির ব্যাটিং নিয়ে খুব কথা হচ্ছে। আপনি কী বলবেন?
শাস্ত্রী: কাল ধোনি আর জাডেজা অবিশ্বাস্য খেলে আমাদের ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিল। পাঁচ রানে তিন উইকেট আর তার পরে ছয় উইকেট চলে যাওয়ার পরে কেউ কল্পনা করতে পেরেছিল, শেষ পর্যন্ত আমরা ম্যাচে থাকতে পারি? অসাধারণ খেলেছে দু’জনে। ওদের প্রশংসা প্রাপ্য। আমি তো বললামই, হেরেছি ওই ২০ মিনিটের জন্যই।
প্র: সামনে তা হলে কী?
শাস্ত্রী: দেশে ফিরে যাওয়ার পালা এ বার, আর কী! ক্রিকেটের দেওয়া বিধান মেনে নিয়ে ফেরার প্রস্তুতি চলছে। তার পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।