সিদ্ধান্ত নিক ধোনি নিজে, দ্রুত দেখতে চাই ঋষভকেও

আমি যদি ভারতীয় দলের সঙ্গে থাকতাম, ধোনির চোট হলে ঋষভকেই খেলানোর কথা ভাবতাম। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ভঙ্গিতে প্রতিপক্ষকে তছনছ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে ও। যে কোনও বোলিংকে ধ্বংস করার মানসিকতা এবং আত্মবিশ্বাস ওর মধ্যে রয়েছে।

Advertisement

সুমিত ঘোষ 

ম্যাঞ্চেস্টার শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯ ০৩:২৮
Share:

পরামর্শ: ধোনির ক্লাসে ঋষভ। দু’জনকেই প্রথম একাদশে রাখার কথা বলছেন ফারুক ইঞ্জিনিয়ার।—ছবি এপি।

বহু বছর ধরে ম্যাঞ্চেস্টারের বাসিন্দা তিনি। এখানকার ক্রিকেট সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টও। খুব শীঘ্রই প্রেসিডেন্টের পদে বসতে চলেছেন। তাঁর শহরেই তাঁর দেশ খেলতে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপ নিয়ে আনন্দবাজারের সামনে খোলাখুলি ফারুক ইঞ্জিনিয়ার। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে উইকেটকিপারদের সংজ্ঞা যিনি বদলে দিয়েছিলেন। আজকের মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, ঋষভ পন্থদের সামনে প্রথম উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছিলেন।

Advertisement

কাপ ফেভারিট: যতদূর মনে করতে পারছি, বিশ্বকাপ শুরুর আগে আপনাকেই আমি চারটে দলের কথা বলেছিলাম, যারা সেমিফাইনালে যাবে। ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজ়িল্যান্ড। আমি সেই মত পাল্টানোর কোনও কারণ দেখছি না। কাগজেকলমে বলুন কী ফর্মের বিচারে, এই চারটে দলকেই সব চেয়ে শক্তিশালী লাগছে। তবু বলব, এটা শুধুই আমার মনে হওয়া। ক্রিকেটে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। সব চেয়ে শক্তিশালী দলেরও একটা খারাপ দিন যেতে পারে। তবে এই চারটে দল এত গোছানো ক্রিকেট খেলছে যে, এদের বাইরে অন্য কাউকে শেষ চারে দেখতে পেলে খুবই অবাক হব।

ভারতীয় দল নিয়ে: আমাদের ছেলেরা দারুণ ক্রিকেট খেলছে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচটায় হোঁচট খেতে খেতে বেঁচেছে। সেটা আত্মতুষ্টির জন্য হয়েছে বলে আমার মনে হয়। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিল হয়তো। আফগানিস্তান দেখিয়ে দিয়ে গেল, বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে কাউকেই হাল্কা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশও সেটা প্রমাণ করে দিচ্ছে এই বিশ্বকাপে। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে। বাকিদের মতো আফগানিস্তানও যোগ্যতা অর্জন করে খেলতে এসেছে। বিশ্বকাপে আসার অধিকার অর্জন করেছে। নিশ্চয়ই এমনি এমনি করেনি। আর এটা তো ক্রিকেটের জন্য দারুণ একটা ব্যাপার যে, নতুন নতুন টিম ভাল করছে।

Advertisement

ধোনির মন্থর ব্যাটিং: বেশ কিছু দিন ধরেই কিন্তু কথাটা উঠছে। যদি ভুল না হই, বছর দু’য়েক ধরে ধোনিকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য কানে আসছে। আমার দেখে মনে হচ্ছে, ধোনি কিছুটা আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছে। কিন্তু তা দেখে কি মন্তব্য করা ঠিক হবে? জানি না। কত বার তো এমন মনে হয়ছে আর শেষে গিয়ে ধোনি ঠিক জিতিয়ে দিয়েছে। আমার একটা কথা মনে হচ্ছে যে, ধোনি ব্যাট করার সময় যে বলগুলো ‘ব্লক’ করছে, সব হয়তো ‘ব্লক’ করার মতো বল নয়। সেটা ঠিক করতে হবে। বহু ম্যাচ ও শেষে গিয়ে জিতিয়ে দেয়। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, রোজ রোজ ধোনির পক্ষেও সেটা করে দেখানো সম্ভব নয়।

চিন্তার কারণ কি না: নিশ্চয়ই চিন্তার কারণ। আমি আশা করছি, টিমের পক্ষ থেকে নিশ্চয়ই ধোনির সঙ্গে কথা বলে তাদের দুশ্চিন্তার কথাটা ব্যক্ত করেছে। অথবা কেউ কিছু না বললেও ধোনির বোঝা উচিত। এই দলে ও-ই তো সব চেয়ে সিনিয়র। সব চেয়ে বেশি ক্রিকেট খেলেছে। ওর নিজেরই বোঝা উচিত। আমার মনে হয়, ব্যাপারটা কিছুটা মানসিকও হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধোনি আউট হতে চাইছে না। হয়তো মাথার মধ্যে বেশি ঘুরছে যে, আমি আউট হয়ে গেলে নতুন এক জনকে এসে ফের সেট হতে হবে। ধোনির জায়গাটাও সহজ নয়। ওর হয়তো এখনও মনে হচ্ছে, শুরুর স্লো ব্যাটিং পরে গিয়ে ঠিক করে দিতে পারবে। বহু বার সেটা ও করে দেখিয়েছে। তাই ওর ভাবনাকেও দায়ী করা যাবে না। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, একটু বেশিই যেন রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েছে ধোনি।

ফুরিয়ে আসছেন কি ফিনিশার: সব ভাল জিনিসই এক সময় গিয়ে শেষ হয়। তবে ধোনি শেষ হয়ে এসেছে কি না, সেই সিদ্ধান্তটা ওর উপরেই ছেড়ে দেওয়া হোক। আমি দেখতে চাই না, ধোনির মতো এক জন ক্রিকেটারকে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওর উইকেটকিপিং এখনও খুবই ক্ষিপ্র। শুরুর দিনের চেয়ে এখন অনেক ভাল উইকেটকিপার। রানিং বিটুইন দ্য উইকেট্‌স এখনও অতুলনীয়। দারুণ ফিট রয়েছে। তাই ইতিবাচক দিকও আছে। তাই ধোনি চালিয়ে গেলে চলুক না। তবে খুব তাড়াতাড়ি আমি ঋষভ পন্থকেও ভারতের হয়ে মাঠে দেখতে চাই।

প্রিয় ঋষভকে পরামর্শ: ম্যাঞ্চেস্টারেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে ঋষভের সঙ্গে দেখা হল। আমি অম্বানি বক্সে ছিলাম। ও এসে নিজের পরিচয় দিয়ে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করল। উইকেটকিপিং নিয়ে জিজ্ঞেস করল, ব্যাটিং নিয়ে কথা বলল। কী ঠিক হচ্ছে, কোথায় ভুল হচ্ছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চাওয়ার আগ্রহটা আমার খুব ভাল লেগেছে। ঋষভ আর ধোনি দু’জনেই আমার নিজের তরুণ বয়সকে মনে করিয়ে দেয়। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং আর আক্রমণাত্মক মনোভাবের দিক থেকে আমাদের অনেক মিল আছে।

কী পরামর্শ দিলেন পন্থকে: ওর কতগুলো প্রশ্ন ছিল। আমি সাধ্যমতো উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে কথা হয়েছিল। নানা ব্যাপার নিয়েই আলোচনা করেছি আমরা। ইংল্যান্ডে আমি অনেক দিন আছি, সেটা ও জানে। এখানে উইকেটকিপিং করার সময় কোন ব্যাপারগুলো মাথায় রাখা দরকার, তা নিয়ে কথা হল। তবে আমি একটাই জিনিস ওর মাথায় ঢোকানোর চেষ্টা করেছি। অনেকে অনেক পরামর্শ দেবে, আমিও দেব। সকলে চলে যাবে, থাকবে শুধু তুমি। মাঠে নেমে তোমাকেই আসল কাজটা করতে হবে। আর একটা কথা মনে রেখো যে, উইকেটকিপার তৈরি করা যায় না। এটা একটা জন্মগত প্রতিভা। সহজাত প্রবণতার মতো সেটা ঠিকরে বেরোতে হবে। একটা কথা বলব। ঋষভকে দেখে আমার ভাল ছাত্র মনে হয়েছে। কথা শুনতে জানে। ওর জন্য আমার অনেক শুভেচ্ছা রইল। আমি নিশ্চিত, ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের আগামী দিনে অনেক আনন্দ দেবে ঋষভ। দেশের জন্য অনেক গৌরব ও আনবে। আমি খুব খুশি হয়েছি দেখে যে, দেরিতে হলেও ওকে বিশ্বকাপের দলে ডাকা হয়েছে। ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজে আমি ওকে দেখেছি। প্রথম থেকেই ওর বিশ্বকাপের দলে থাকা উচিত ছিল। জানি না কী করে ঋষভের আগে দীনেশ কার্তিক দলে ঢুকল। দীনেশ খুব ভাল ছেলে, আমার ভাল বন্ধু কিন্তু তবু ঋষভের আগে ওকে বিশ্বকাপের দলে দেখে অবাক হয়েছিলাম। বিশেষ করে আগের বছরই ইংল্যান্ডে এসে ভাল করে যাওয়ার পরে ঋষভকে নিয়ে কোনও প্রশ্নই থাকা উচিত ছিল না।

ঋষভকে খেলানো উচিত কি না: কেন নয়? ইংল্যান্ড দলটার দিকে দেখুন। ওরা তো বাটলার আর বেয়ারস্টো দু’জনকেই খেলাচ্ছে। তা হলে ধোনি আর ঋষভ পন্থ এক সঙ্গে খেললে অসুবিধা কী ছিল? তবে আমার মনে হয়, ভারতীয় দলকে যে ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে, তা হল, ঋষভকে কার জায়গায় খেলাব? বিজয় শঙ্করকে কিন্তু আমার খারাপ লাগেনি। পরিস্থিতির বিচারে ও বেশ ভাল খেলেছে সাউদাম্পটনে। দুর্দান্ত ফিল্ডার, প্রয়োজনে কয়েক ওভার বোলিং করে দিতে পারবে। তবে এটা ঠিক যে, আমি যদি ভারতীয় দলের সঙ্গে থাকতাম, ধোনির চোট হলে ঋষভকেই খেলানোর কথা ভাবতাম। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ভঙ্গিতে প্রতিপক্ষকে তছনছ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে ও। যে কোনও বোলিংকে ধ্বংস করার মানসিকতা এবং আত্মবিশ্বাস ওর মধ্যে রয়েছে। ওয়ান ডে ক্রিকেটে ছয় বা সাত নম্বরে এমন এক জনকে দরকার যে, এসে কয়েকটা ছক্কা মারতে পারবে। ঋষভের মধ্যে সেই গুণটা সহজাত।

আফগানিস্তান চিন্তা ধরিয়ে দিয়ে গেল কি না: আমি বলব, একটা চেতনা দিয়ে গেল যে, কাউকেই হাল্কা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কোনও জায়গা নেই। আফগানিস্তান ম্যাচ আমরা হেরে যেতে পারতাম। এবং হারলে বিরাট ধাক্কা হতে পারত। বিরাট কোহালিকে বলব, সাউদাম্পটন থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে চলো। ইতিবাচক থাকো। আমরা বিশ্বের সেরা দলগুলোকে হারিয়েছি। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছি, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছি। শেষ পর্যন্ত গিয়ে কাপ জিতে ফেরো। আমাদের বোলিং বিশ্বের সেরা এখন। আমাদের হাতে সেরা ফাস্ট বোলাররা রয়েছে। যশপ্রীত বুমরার মতো ইয়র্কার কেউ দিতে পারে না। মহম্মদ শামি রিজার্ভে ছিল। ভুবনেশ্বরের চোট বলে খেলতে নেমেই হ্যাটট্রিক করে দিল। সেরা স্পিনাররা আমাদের দলে রয়েছে। তবে এটাও বলব, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডকেও নজরে রাখতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement