সাক্ষাৎ: পুরস্কার বিতরণীতে হিদার নাইট ও হরমনপ্রীত। গেটি ইমেজেস
এই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার ছাড়পত্র পেলেন ভারতের মেয়েরা। কিন্তু এই ভাবে যে ফাইনালের টিকিট আসবে, তা সম্ভবত চাননি কেউই। বৃহস্পতিবার সিডনিতে বৃষ্টির জন্য ভারত বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচে একটা বলও হয়নি। কিন্তু গ্রুপ লিগে শীর্ষে থাকার কারণে ফাইনালে চলে গেল ভারত। রবিবারের মহারণে হরমনপ্রীতদের সামনে গত বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। যাদের অবশ্য গ্রুপ পর্যায়ে হারিয়েছে ভারত।
সেমিফাইনালে কেন অতিরিক্ত দিন রাখেনি আইসিসি, এই নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার মার্ক ওয় যেমন টুইট করেছেন, ‘‘মেয়েদের ক্রিকেটে বছরের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রতিযোগিতা এই বিশ্বকাপ। হয়তো বা কারও, কারও জন্য জীবনের সব চেয়ে বড় প্রতিযোগিতা। আর সেখানে কি না রিজার্ভ ডে রাখল না আইসিসি? অদ্ভুত সিদ্ধান্ত।’’ ইংল্যান্ড অধিনায়ক হিদার নাইটও স্বাভাবিক ভাবে বিপর্যস্ত। ম্যাচ বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে তিনি বলেছেন, ‘‘সত্যিই খুব হতাশ লাগছে। এই ভাবে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাবে, কে ভেবেছিল। কোনও বাড়তি একটা দিন নেই, খেলার কোনও সুযোগই পেলাম না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের হারটাই আমাদের ক্ষতি করে গেল।’’ আরও বলেন, ‘‘আশা করি, ইংলিশ আবহাওয়া নিয়ে এর পরে কেউ আর কিছু বলবেন না।’’
ম্যাচ না হওয়াকে দুর্ভাগ্য বলছেন হরমনপ্রীত। কিন্তু ভারত অধিনায়ক এটা জানাতে ভুলছেন না যে, বিশ্বকাপের শুরু থেকেই তাঁরা এই নিয়মটা জানতেন। এবং, সে ভাবেই নিজেদের কৌশল তৈরি করেছিলেন। হরমনপ্রীতের কথায়, ‘‘দুর্ভাগ্য যে বৃষ্টির জন্য ম্যাচটা হতে পারল না। কিন্তু নিয়ম নিয়মই। ভবিষ্যতে রিজার্ভ ডে থাকলে সেটা খুব ভাল হবে।’’ ফাইনালে অবশ্য ‘রিজার্ভ ডে’ রাখা হয়েছে। ৮ তারিখ কোনও কারণে খেলা না হলে পরের দিন হবে।
ভারত অধিনায়ক পরিষ্কার করে দিয়েছেন, তাঁরা এই নিয়মের কথা ভেবেই শুরু থেকে তৈরি হয়েছিলেন। হরমনপ্রীত বলেছেন, ‘‘প্রথম দিন থেকেই আমরা নিয়মের কথা জানতাম। তাই এটাও জানতাম, আমাদের প্রতিটা ম্যাচ জিতে গ্রুপ শীর্ষে থাকতে হবে। যাতে সেমিফাইনাল ভেস্তে গেলেও আমরা ফাইনালে চলে যেতে পারি।’’
দুরন্ত ফর্মে থাকা ভারত সহজেই গ্রুপে তাদের চারটে ম্যাচ জিতেছে। অন্য দিকে ইংল্যান্ড হেরে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। এ দিন সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয় সিডনিতে। যে কারণে টস পর্যন্ত হতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত আম্পায়াররা ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।
ফাইনালে ওঠার জন্য বিশেষজ্ঞরা কৃতিত্ব দিচ্ছেন গ্রুপ পর্যায়ে ভারতের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সকে। হরমনপ্রীত বলেছেন, ‘‘প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠার অভিজ্ঞতাটা দারুণ। দল হিসেবে আমরা চাইব, ফাইনালেও সেরা ক্রিকেটটা খেলতে। সেটা যদি করতে পারি, তা হলে খুব ভাল জায়গায় থাকব। আমরা জানি, দক্ষিণ আফ্রিকা আর অস্ট্রেলিয়া, দুটো দলই ভাল ক্রিকেট খেলেছে। তাই ফাইনালের প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবছি না।’’ হরমনপ্রীত যখন এ কথা বলছেন, তখনও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ফাইনালে যায়নি অস্ট্রেলিয়া।
গ্রুপ লিগে একটা মাত্র ম্যাচ হারার জেরে ছিটকে যেতে হল ইংল্যান্ডকে। বিষণ্ণ হিদার নাইট মজা করে বলেছেন, ‘‘এই বিশ্বকাপ থেকে একটা শিক্ষা পেলাম। প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচটা জেতা খুব জরুরি। আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, শুরুটা খারাপ করার। যার ফলটা এখন ভুগতে হচ্ছে।’’ আইসিসি প্রতিযোগিতায় আবার ইনিংস পিছু অন্তত ১০ ওভার হলেই তবে সেই ম্যাচের ফল হবে। যা এ দিন সিডনিতে হওয়া সম্ভব ছিল না।
ফাইনালের আগে রীতিমতো আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে হরমনপ্রীতকে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের সবাই বেশ ভাল ছন্দে আছে। শেফালি (বর্মা) আর স্মৃতি (মন্ধানা) ভাল শুরু করছে। আমি আর স্মৃতি নেটে আরও বেশি সময় দিচ্ছি।’’ নিজের খারাপ ফর্ম নিয়ে ভারত অধিনায়কের মন্তব্য, ‘‘আমি ভাল রান পাইনি হয়তো, কিন্তু সতীর্থরা পাচ্ছে। ভুলে যাবেন না দিনের শেষে দলগত
লড়াইটাই আসল।’’