‘মনে হয়েছিল চ্যালেঞ্জ নিতে হলে এখনই’

নাম ঘোষণার আগেই তাঁর নিয়োগ সবার জানা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জানাই আছে যতক্ষণ না সরকারি ঘোষণা হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁর মোবাইল থেকে থ্যাঙ্ক ইউ শব্দটা ভেসে আসবে না। বিষ্যুদবার এমন একটা দিন যে উত্তরটা শেষ অবধি এলই না। মোবাইলেও ধরার উপায় নেই সারাক্ষণ ‘বিজি’ দেখাচ্ছে। রাত দশটা নাগাদ খুব সামান্য সময়ের জন্য ধরা গেল অনিল কুম্বলেকে। আলাদা করে ফোনে ইন্টারভিউ দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। বললেন, ‘‘আজ ছেড়ে দিন।’’ তার পর জাস্ট পাঁচটা প্রশ্ন বলে তাঁকে কোনওক্রমে রাজি করানো গেল...প্রশ্ন: অনিল, প্রথমেই আনন্দবাজারের তরফে অভিনন্দন। কুম্বলে: থ্যাঙ্ক ইউ। আমি নিজেও খুব এক্সাইটেড। আশা করি এই টিমটাকে নিয়ে ভাল কিছু করতে পারব। ইয়ং টিমটার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা আছে।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৬ ০৯:৪০
Share:

নিজের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ভারতের নতুন কোচ। বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরু। ছবি: পিটিআই।

প্রশ্ন: অনিল, প্রথমেই আনন্দবাজারের তরফে অভিনন্দন।

Advertisement

কুম্বলে: থ্যাঙ্ক ইউ। আমি নিজেও খুব এক্সাইটেড। আশা করি এই টিমটাকে নিয়ে ভাল কিছু করতে পারব। ইয়ং টিমটার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা আছে।

Advertisement

প্র: এই ভারতীয় দলে অন্তত একজনের কথা বলতে পারি যিনি আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্টে উল্লসিত হবেন।

কুম্বলে: কে?

প্র: রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অশ্বিনের কথা শুনলে মনে হয়, তিনশো আন্তর্জাতিক উইকেটের পরেও আপনাকে মুগ্ধ আইডলের মতো দেখেন।

কুম্বলে: অশ্বিনকে আমি বরাবর খুব পছন্দ করি। বললাম তো এই টিমটাই খুব এক্সাইটিং।

প্র: একটা কথা বলুন, ৯৫৬ উইকেট যতই আপনার থাক, কোচের চাকরিতে আবেদন করে তো খারিজও হয়ে যেতে পারতেন। এত বড় প্লেয়ার আপনি, একটা লোকলজ্জাও তো হত।

কুম্বলে: হলে হত, আমি এ ভাবে কখনও ভাবিনি। আমি জীবনে কখনও ফলের কথা ভেবে চ্যালেঞ্জ নিইনি। চ্যালেঞ্জের কথা ভেবে চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। কোনও কিছু যখন আপনি করবেন বলে ঠিক করেছেন, তখন সেটা করতে হবে। তখন আর পিছু হঠার কোনও ব্যাপার নেই।

প্র: নেটে দেখলাম আপনার এই সময়ে বস্টনে থাকার কথা। বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি আপনি ডিআরএস নিখুঁত করা নিয়ে আইসিসি-র প্রতিনিধিত্ব করছেন।

কুম্বলে: ভুল লিখেছে। আমি বস্টন গিয়েছিলাম গত বছর।

প্র: হঠাৎ এই চাকরিতে দরখাস্ত করার কথা মনে হল কোথা থেকে?

কুম্বলে: আইপিএলের সময় এ বার আমি ব্রেক নিই। পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল এ বছর আইপিএল থেকে ছুটি নেওয়া দরকার। তার পর লন্ডনে যাই আইসিসি বৈঠকে। লন্ডন থেকে ফিরে বিজ্ঞাপনটা দেখে ঠিক করি অ্যাপ্লাই করব। তা ছাড়া আমার মনে হয়েছিল ক্রিকেটকে আমার কিছু ফেরত দেওয়া দরকার। আমার বন্ধুরা এখন ক্রিকেট প্রশাসনে নানা পদে রয়েছে। রাহুল জুনিয়রদের কোচ। দাদা সিএবি প্রেসিডেন্ট প্লাস অ্যাডভাইসরি কমিটিতে রয়েছে। সচিন আছে, লক্ষ্মণ আছে। আমিও এই সময় লেগে যেতে পারি।

প্র: কিন্তু ভারতীয় কোচের চাকরি মানে তো প্রায় দশ মাস বাইরে থাকা। পরিবারের সমস্যা নেই?

কুম্বলে: ফ্যামিলির সঙ্গে অ্যাপ্লাই করার আগে কথা বলেছিলাম। ওরা একমত হয়। প্লাস আমার মনে হয়েছিল আজ থেকে তিন-চার বছর পর আমার বাচ্চারা আরও বড় হবে। তখন বরঞ্চ ওদের আমাকে বেশি লাগবে। আমায় যদি কোনও চ্যালেঞ্জ নিতেই হয়, তা হলে মধ্যিখানের সময়টাতেই নিতে হবে।

প্র: সরকারি ভাবে আপনার মেয়াদ এক বছরের। কিন্তু বেসরকারি ভাবে কমিটি তো চায় আপনি চার বছর থাকুন।

কুম্বলে: চার বোধহয় না, তিন।

প্র: সরি তিন, ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত।

কুম্বলে: হ্যাঁ, আমি ওই সময়সীমার জন্য তৈরি।

প্র: এটা কী অদ্ভুত ক্রিকেটীয় ন্যায়বিচার যে মানুষটা চোটের জন্য ভারত অধিনায়কত্বে এক বছরও পূর্ণ করতে পারেনি, সে কি না অভাবিত ভাবে মুখ্য কোচ হয়ে গেল।

কুম্বলে: আমি ও ভাবে ভাবিনি। খেলা ছাড়ার পর তো অনেক বছর সক্রিয় ভাবে মাঠে ফিরিনি। এই ফেরাটা প্রয়োজনভিত্তিক। আমার মনে হয়েছে ঠিক এই সময়েই ভারতীয় ক্রিকেটকে আমার কিছু ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। আর চার-পাঁচ বছর পরে হলে অনেক দেরি হয়ে যেত।

প্র: আর অধিনায়কত্ব বেশি দিন না করতে পারার জন্য কোনও আফসোস নেই?

কুম্বলে: আমার জীবনে অধিনায়কত্বের স্বীকৃতি এসেছিল অনেক দেরিতে। কিন্তু এসেছিল তো। আর একটা কথা আমি জানতাম, আমি প্রতিনিধিত্ব করছি একটা ট্রানজিশনের। একটা জমানা থেকে আর একটা জমানার ব্যাটন চেঞ্জ হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে আমি। তবে যে সময়টা নিজের জন্য ভেবেছিলাম, তার দু-একটা টেস্ট আগেই শেষটা হয়ে গিয়েছিল চোটের জন্য।

দাদা, বললেন পাঁচটা প্রশ্ন, গোটা দশেক হতে চলল।

প্র: এটাই লাস্ট। আপনার প্রেজেন্টেশন দেখে তো অ্যাডভাইসরি কমিটির সদস্যরা অভিভূত।

কুম্বলে: থ্যাঙ্ক ইউ। আমি আমার মতো করে একটা রূপরেখা দেখানোর চেষ্টা করেছি যে, ভারতীয় ক্রিকেটকে কোথায় নিয়ে যাওয়া যায়।

প্র: ক্যাপ্টেন থাকাকালীন আপনি টিমের জন্য ভিশন ডকুমেন্ট তৈরি করেছিলেন। এটা তো আপনার কাছে প্রত্যাশিতই ছিল।

কুম্বলে: আরে ওটা করে আমার বন্ধুদের সামনে দেখানোটা একটা অভিজ্ঞতা ছিল বটে।

প্র: বন্ধুদের সামনে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে কেমন লাগল?

কুম্বলে: নার্ভের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ছিল (হাসি)। একে তো এ সব ইন্টারভিউ কখনও দিইনি। তার উপর আমার প্রিয় তিন বন্ধুর সামনে প্রেজেন্টেশন পেশ করা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। একটা অনুরোধ করছি।

প্র: বলুন।

কুম্বলে: দাদা বা সচিনকে সুযোগ থাকলে জিজ্ঞাসা করবেন আমার ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় ওদের কতটা অকওয়ার্ড লাগছিল (হাসি)?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement