প্রশ্ন: সচিন পরশু ওয়াংখেড়ে আসছেন তো?
সচিন: মনে হয় আসব।
প্র: মনে হয় কেন?
সচিন: আমার দিল্লিতে একটা কাজ আছে। সেটা সেরে আশা করছি চলে আসতে পারব।
প্র: এই সময়ের সবচেয়ে জ্বলন্ত টপিক অবশ্যই বিরাট কোহালি।
সচিন: নিশ্চয়ই।
প্র: বিরাটকে কেমন দেখলেন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে?
সচিন: খুব ভাল। আমি বলব ওর মধ্যে তুখোড় একটা অ্যাওয়ারনেস এসেছে যেটা বারবার চোখে পড়ছে।
প্র: অ্যাওয়ারনেস বলতে?
সচিন: ম্যাচ পরিস্থিতির অ্যাওয়ারনেস। যে কোন বোলারকে মারবে। কাকে মারবে না। কখন স্ট্রাইক রোটেট করবে এই আন্দাজটা ও দারুণ দেখাচ্ছে।
প্র: আপনি টিভিতে কি দেখছিলেন অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ?
সচিন: হ্যাঁ। দেখছিলাম আর শেন ওয়ার্নের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছিল খেলাটা কোন দিকে গড়াবে তা নিয়ে।
প্র: ওয়ার্ন সে দিন টিভি স্টুডিওতে ছিলেন। আপনি তো সেখানে যাননি?
সচিন: হ্যাঁ ফেস টু ফেস কন্ট্যাক্ট নয়। আমরা শেষ দিকে ক্রমাগত এসএমএস করছিলাম নিজেদের মধ্যে। ওয়ার্ন বলছিল ইন্ডিয়া পারবে বলে মনে হচ্ছে না। আর যদি পারেও শেষ ওভারে ১০ রান মতো করতে হবে। যেটা সহজ হবে না। আমি লিখলাম, দেখো লাস্ট ওভারে এত রান বিরাট ফেলে রাখবে না। দু’-তিন ওভার আগেই ও চালাবে (হাসি)। তাই তো হল (হাসি)।
প্র: ওয়ার্ন তো ম্যাচের পর আবার টুইটও করলেন। সচিন এটা তোমার সেরা ইনিংসগুলোর একটা যেন মনে হচ্ছে।
সচিন: হ্যাঁ দেখেছি আমি।
প্র: বিরাট কোহালি সম্পর্কে একটা কথা বারবার বলা হচ্ছে যে তিনি কখনও দায়িত্ব থেকে পালান না। টিমের বোঝা নিজের ঘাড়ে নেন। আমরা আপনার সম্পর্কে লিখতাম, বাকিরা একটা পিচে ব্যাট করে। সচিন ব্যাট করেন দুটো পিচে। একটা নিজের জন্য, টিমের জন্য। আর একটা সমর্থকদের মুখে হাসি রাখার দায়িত্ব নিয়ে। বিরাটের মধ্যে সেই বাড়তি লোড নেওয়ার প্রবণতা কি দেখছেন?
সচিন: বাইশ গজে ঢোকার পর মাঠে একটাই লক্ষ্য থাকে বলটা ঠিক মতো দেখা। রান করা। টিমকে টানা। যাই আশেপাশে ঘটুক না কেন এই লক্ষ্যটা কখনও চেঞ্জ হয় না। টার্গেটটা বরাবর এক যে টিমকে দ্যাখো। টিমের জন্য বাড়তি বোঝা নাও। যা কিছু করো টিমের মুখ চেয়ে করো।
প্র: সেটা তেইশ বছর একনিষ্ঠ ভাবে করেছেন বলেই না আপনি তেন্ডুলকর। শখ করে এই বাড়তি লোড কেউ নিতে চায় না। কিন্তু আমার প্রশ্ন, বিরাটের মধ্যে সেই সচিনোচিত ঝোঁক কি দেখছেন?
সচিন: বিরাট সুপার্ব খেলছে। দায়িত্ব নিচ্ছে যে সে তো দেখাই যাচ্ছে।
প্র: আর ওর ব্যাটিং সম্পর্কে কী বলবেন?
সচিন: বলব ওর ব্যাটিং নিয়ে যেটা মুগ্ধ হওয়ার মতো তা হল ধারাবাহিকতা। ওর সম্পর্কে বলার মতো সবচেয়ে বড় শব্দ হল কন্সিসটেন্সি!
প্র: এ ছাড়া আরও কিছু?
সচিন: বিরাটের কমিটমেন্ট। এটাও মনকে স্পর্শ করার মতো।
প্র: আপনি যেমন ব্যাটিং ইউনিটের দায়িত্ব নিতেন পরোক্ষে বিরাট যেন এই টিমের ব্যাটিং কর্তা। আপনি যখন ছাড়ছেন তখন ভেবেছিলেন বাকি সবাইকে টপকে বিরাট এই চাকরিটা স্বেচ্ছায় বেছে নেবেন?
সচিন: আমি তো ওর কমিটমেন্টের কথা বললামই। তবে আমি কোনও তুলনায় যেতে চাই না। তুলনা করাটা আমার পছন্দের নয়।
প্র: ওকে। সিনিয়র হিসেবে বিরাটকে কী পরামর্শ দেবেন?
সচিন: বলব ফোকাস ধরে রাখো আর চেটেপুটে এনজয় করো নিজের ক্রিকেটকে।
প্র: আপনি এমন বলছেন যেন এটা পৃথিবীর সহজতম কাজ। এক একটা কীর্তি মানেই চারপাশে মনোযোগের অভাব ঘটার মতো কত কারণ তৈরি হয়। কত প্রলোভন আসে। তেন্ডুলকর পেরেছিলেন মানেই কাজটা সোজা এমন তো নয়?
সচিন: এই সব আমি বলতে পারব না। আমায় যেটা জিজ্ঞেস করলেন তার উত্তর আমার কাছে ঠিক এটাই খেলায় মন রাখো আর খেলাটাকে ক্রমাগত এনজয় করো।
প্র: একটা কথা বলুন, আপনি ভারতের হয়ে খেলেছেন তেইশ বছরেরও বেশি। বিরাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আট বছরও হয়নি। তবু হাটেঘাটে এই যে আপনাদের মধ্যে মুহুর্মুহু তুলনা চলছে সেটা কি মনে হচ্ছে না অন্যায়?
সচিন: এটা আমি কী বলতে পারি? লোকে তুলনা করতে চাইলে তারা তুলনা করবে। আমি এই তুলনাটুলনায় কোনও দিন বিশ্বাস করিনি। কিন্তু যে যে ভাবে দ্যাখে।
প্র: কিন্তু আপনি কয়েক বছর খেলার পরেও তো তর্ক শুরু হয়েছিল, কে সেরা? গাওস্কর, না তেন্ডুলকর?
সচিন: হ্যাঁ শুরু হয়েছিল কিন্তু আমি তা নিয়ে কোনও মাথা ঘামাইনি। চুপচাপ চেষ্টা করেছি নিজের কাজটা করে যেতে। আপনি শুধু গাওস্করের নাম করলেন। আরও কত লোককে নিয়ে তুলনা টানা হয়েছে। কিন্তু আমি কর্ণপাতই করিনি।
প্র: সেটা কেন? বিভিন্ন আমলকে মেলানো সম্ভব নয় বলে?
সচিন: বিভিন্ন সময়কে মেলানো তো সত্যিই সম্ভব নয়। ক্রিকেটের নিয়ম বদলে যায়। বোলিং অ্যাটাক বদলে যায়। আপনি এক প্ল্যাটফর্মে ফেলবেন কী করে? বিচারটাই তো করা যাবে না।
প্র: কিন্তু একই আমলের মধ্যে তো তুলনা হতেই পারে?
সচিন: ব্যক্তিগত ভাবে ক্রিকেটে এই সব সময় তুলনা জিনিসটাই আমার পছন্দ নয়। তবু সমকালে খেলা দু’জনের মধ্যে একটা তুলনা হতে পারে।
প্র: আপনার ইন্টারভিউটার হেডিং কী হতে পারে? সাজেস্ট করবেন?
সচিন: কিছু ভাবিনি। এই বিষয়টা নিয়ে এর আগে কথাও বলিনি কোথাও। যদি কিছু মনে হয় আপনাকে টেক্সট করে দেব। (রাত অবধি কোনও এসএমএস আসেনি।)
প্র: অনেকেরই হয়তো জানা নেই যে বিরাট আপনার সম্পর্কে কী রকম শ্রদ্ধাশীল। ইডেনে ম্যাচ জিতিয়ে ফেরার পর তো আপনাকে অভিবাদনও করেছিলেন।
সচিন: হ্যাঁ খুব টাচিং ছিল ওর ওই জেস্চারটা।
প্র: কিন্তু তার নেপথ্যে তো কারণও থাকতে পারে। আজ কোহালিকে নিয়ে ধন্য ধন্য হচ্ছে। ইংল্যান্ড সফরের পর গোটা সিরিজে রান না পাওয়া দিশেহারা কোহালি যখন আপনার শরণাপন্ন হন আপনি ওকে মুম্বইতে নেটে ডেকেছিলেন।
সচিন: ইয়েস, ও এসেছিল।
প্র: আজ সকালে আমি সেই বান্দ্রা কুর্লা মাঠে গিয়েছিলাম। যেখানে কোহালিকে আপনি ক’দিন প্র্যাকটিস করিয়েছিলেন। একটু বলবেন ওঁর কী সমস্যা হচ্ছিল আর কোন জায়গাটা ঠিক করার পর উনি এমন দুর্দমনীয় ফর্মে?
সচিন: না সেটা ঠিক হবে না। আমি একটা কথাও বলব না। সেটা উচিত না। কোহালি নিজে থেকে কিছু বললে আলাদা কথা। আমি বলব না।
প্র: কেন? আপনি তো আর দাবি করছেন না যে আপনার জন্য উনি এমন ফর্মে! কোথায় সমস্যা হচ্ছিল এটা বলতে দোষ কী?
সচিন: না এটা একান্তই ব্যক্তিগত। আমি মিডিয়ায় বলতে পারি না।
প্র: আরে আমি যদি আপনাকে সরাসরি কোট না করে লিখি?
সচিন: তা হলেও না।