ছোট থেকেই দুর্বল ছিলেন। কিন্তু ফুটবল খেলা তার জন্য আটকায়নি। আর্জেন্টিনার রোসারিয়োয় জন্ম। চার বছর খেলেছেন স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলিতে। তারপর চলে যান নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ ক্লাবে।
১৩ বছর বয়সে যোগ দেন বার্সেলোনায়। তখন থেকে কাতালোনিয়ার এই শহর মেসির ধ্যান-জ্ঞান হয়ে ওঠে। একটি হোটেলে টিস্যু পেপারে মেসিকে সই করিয়েছিল বার্সেলোনা। তারপর তাঁর যাবতীয় ভার নেয় তারা।
১৬ বছর চার মাস ১৩ দিন বয়সে জোসে মোরিনহোর পোর্তোর বিরুদ্ধে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে তাঁর অভিষেক হয়। ৭৫ মিনিটে নেমেই দুটি সুযোগ তৈরি করেছিলেন। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে সিনিয়র দলের সঙ্গে অনুশীলনের অনুমতি দেওয়া হয়।
১৬ অক্টোবর ২০০৪-এ প্রথম সিনিয়র দলে অভিষেক হয় তাঁর। এসপ্যানিয়লের বিরুদ্ধে ৮২ মিনিটে নামেন তিনি। ১৭ বছর তিন মাস ২২ দিন বয়সে সেই সময়ে বার্সেলোনার সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি।
২০০৮-০৯ মরশুমে জীবনের প্রথম বড় সাফল্য পান। পেপ গুয়ার্দিওলার অধীনে সে বার বার্সেলোনা ত্রিমুকুট জেতে। মেসি প্রতিটি প্রতিযোগিতাতেই খেলেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে দলের দ্বিতীয় গোল ছিল তাঁর।
মেসিকে সিনিয়র দলে তুলে আনতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন রোনাল্ডিনহো। মেসির প্রথম গোলের পাসও তাঁর পাস থেকেই। দু’জনে ক্লাবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিলেন।
এরপর দুর্দান্ত জুটি বেঁধেছিলেন জাভি এবং আন্দ্রে ইনিয়েস্তার সঙ্গে। বার্সেলোনার বিধ্বংসী তিকিতাকা ফুটবল খেলার পিছনে এঁরা তিনজনই ছিলেন কাণ্ডারি।
২০০৯ সালে প্রথম ব্যালন ডি’ওর জেতেন মেসি। এই খেতাব তিনি কেরিয়ারে আরও ছ’বার জিতেছেন। ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার জিতেছেন পাঁচ বার। এ ছাড়া আরও নানা ব্যক্তিগত পুরস্কারে বর্ণময় হয়ে রয়েছে তাঁর কেরিয়ার।
প্রায় নয় বছর ধরে প্রতি মরশুমে মেসির সঙ্গে লড়াই হয়েছে রোনাল্ডোর। কোনওবার মেসি জিততেন, কোনও বার রোনাল্ডো। দু’জনের মুখোমুখি সাক্ষাৎ ছিল আন্তর্জাতিক ফুটবলের অন্যতম চর্চার বিষয়।
২০১৩-য় বার্সেলোনায় যোগ দেন নেমার। জাভি এবং ইনিয়েস্তার পাশাপাশি নেমারের সঙ্গে দুর্দান্ত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে মেসির। পরে লুই সুয়ারেস যোগ দেওয়ায় তিনজনকে একসঙ্গে ‘এমএসএন’ বলে ডাকা হত। ২০১৫-য় এই ত্রয়ীর সৌজন্যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে বার্সা। আজ পর্যন্ত সেটাই তাদের শেষ ইউরোপীয় খেতাব।
২০২০-র অগস্টে গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে বার্সেলোনা ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন মেসি। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জোসেপ মারিয়া বার্তোমিউয়ের সঙ্গে বিবাদই ছিল অন্যতম কারণ। কিন্তু আইনি জটিলতায় সে কাজ করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে ক্লাবে থেকে যান।
ক্লাবে থেকে যাওয়ার ইচ্ছে সফল হল না। আর্থিক নিয়মকানুনের কারণে তাঁর বেতন দিতে অক্ষমতার কথা জানাল বার্সেলোনা। ফলে ১৭ বছর পর বার্সেলোনায় শেষ হয়ে গেল মেসি-যুগ।