Coronavirus Lockdown

ঘরে বসেই ধরে রাখতে হবে মাঠে নামার ফিটনেস, কঠিন পরীক্ষায় ওঁরা

বাড়ির ছাদ বা ড্রয়িংরুমেই বিকল্প বন্দোবস্ত করে ফেলছেন খেলোয়াড়রা। যাতে ফিটনেসে খামতি না থাকে, সেই চেষ্টা করে চলছেন। লকডাউন পর্ব মিটলে দ্রুত মাঠে নেমে পড়ার তাগিদ রয়েছে যে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২০ ১৫:৩৮
Share:

লকডাউনে শরীরচর্চা। ছবি: শাটারস্টক।

নেটে ব্যাট হাতে তৈরি থাকার উপায় নেই। বল হাতে দৌড়ে আসার প্রশ্নও নেই। বল পায়ে ড্রিবলিংয়ে শান দেওয়া বা সতীর্থের সঙ্গে রক্ষণের বোঝাপড়া বাড়ানোও সম্ভব নয়। অসম্ভব জিমে ঘাম ঝরানোও।

Advertisement

ক্রিকেটারই হন বা ফুটবলার, নিজেদের স্কিল ঘষে-মেজে নেওয়া হালফিলের করোনা-আবহে একেবারেই অসম্ভব। ঘরবন্দি গোটা দেশ, দুনিয়া। ঘরবন্দি খেলার দুনিয়াও। যে ক্রীড়াবিদরা নিরন্তর চেষ্টা করেন এগিয়ে চলার সরণিতে চলতে, অনেক ত্যাগ আর প্রলোভন এড়িয়ে, তাঁদের এখন বন্দিদশা। ক্রিকেট হোক বা ফুটবল, নিষেধাজ্ঞা সর্বত্র। নিজেকে ফিট রাখার জন্য একমাত্র শরীরচর্চা থাকছে, যা কেবল নিজের বাড়িতেই করতে হবে।অগত্যা, বাড়ির ছাদ বা ড্রয়িংরুমেই বিকল্প বন্দোবস্ত করে ফেলছেন খেলোয়াড়রা। যাতে ফিটনেসে খামতি না থাকে, সেই চেষ্টা করে চলছেন। লকডাউন পর্ব মিটলে দ্রুত মাঠে নেমে পড়ার তাগিদ রয়েছে যে।

আরও পড়ুন: ‘নিশ্চিত ভাবে বিরাটদের এখনকার দলকে আমরা হারিয়ে দিতাম’

Advertisement

নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডের গোলরক্ষক শুভাশিস রায়চৌধুরী বললেন, “হাতে বল না ধরলে আমাদের হ্যান্ড-আই কোঅর্ডিনেশন নষ্ট হয়ে যায়। স্ট্রাইকার বা ডিফেন্ডারদের ক্ষেত্রে এটা খাটে না। কিন্তু গোলকিপারদের হাতে বল ধরার অভ্যাস রাখা জরুরি। না হলে ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়। শরীরটা মাঠে ফেলা হল আমাদের অনুশীলনের অঙ্গ। সেটা করতে না পারলে সমস্যা। আমি যতটা পারি বাড়িতেই ফিট থাকার চেষ্টা করছি। সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা, পায়ে ওজন বেঁধে দৌড়নো, মেডিসিন বল দিয়ে পেটের পেশির কসরত। মাঠে নেমে অনুশীলন শুরু করলে যাতে ম্যাচে নামার অবস্থায় যেতে বেশি সময় না লাগে, সেটাই লক্ষ্য।” আর সেই লক্ষ্যে যে বিন্দুমাত্র ফাঁকি পড়ছে না, তা স্পষ্ট ভিডিয়োতেই।

জাতীয় দল ও ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডার গুরবিন্দর সিংহের আবার পঞ্জাবের বাড়িতেই রয়েছে জিম। সকালে সেখানেই সময় কাটান তিনি। যতটা পেরেছেন, আধুনিক সব যন্ত্র এনে রেখেছেন বাড়িতে। ট্রেডমিল, মেডিসিন বল নিয়ে কাটছে সময়। শুভাশিসের মতোই গোলরক্ষক শঙ্কর রায় জোর দিয়েছেন স্কিপিং, পেটের পেশির ব্যায়ামে। পাশাপাশি, ছাদে স্ত্রী প্রিয়ার সঙ্গে নেমে পড়ছেন বল নিয়ে। শরীরে যাতে একফোঁটাও বাড়তি চর্বি না জমে, থাকছেন সজাগ।

বাংলার রঞ্জি দলের অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরণ এখন রয়েছেন দেহরাদূনের বাড়িতে। সেখানে তাঁর বাবার তৈরি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতেই কাটাচ্ছেন সময়। জিমে ঘাম ঝরাচ্ছেন। নেটেও টুকটাক নেমে পড়ছেন বোলিং মেশিনের সামনে। সুবিধা হল, নিজেদেরই রয়েছে বোলিং মেশিন। ফলে, বাইরে যেতে হচ্ছে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে অনুশীলন। বললেন, “আমার তো ঘরেই অ্যাকাডেমি। তা বন্ধই রয়েছে। তবে সেখানে ব্যাটিং সবে শুরু করেছি। বোলিং মেশিন রয়েছে। আর সময় কাটাচ্ছি জিমে। সেখানে এক-দেড় ঘণ্টা থাকছি। একবেলা জিম, একবেলা ব্যাটিং, এই ভাবে শুরু করেছি এখন।”

করোনা না-হলে এখন খেলতেন আইপিএলে। গায়ে থাকত সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সি। আইপিএল অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত তো কী, ফিট থাকতে দেশের এক নম্বর উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা খুঁজে নিয়েছেন বিকল্প ব্যবস্থা। কখনও সুটকেস দু’হাতে তুলে সারছেন ‘ওয়েট ট্রেনিং’। কখনও দেওয়ালে পা রেখে, কখনও বিছানায় পা রেখে সারছেন ডন-বৈঠক। ইচ্ছে যখন রয়েছে, পথও ঠিকই বের হবে।

ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ঝুলন গোস্বামীও বাড়িতেই তৈরি থাকছেন যতটা সম্ভব। বললেন, “পুরোদস্তুর ট্রেনিং করা তো সম্ভব নয়। কারণ, আমার বাড়িতে জিম নেই। আমি দৌড়চ্ছি করিডোরে, শক্তি বাড়ানোর কিছু বেসিকস করছি। যতটা পারি, তৈরি থাকছি। এখন সুস্থ থাকা সবচেয়ে জরুরি। খেলা তার পর আসছে। লকডাউন শেষ হলে আস্তে আস্তে খেলাও ফিরবে মাঠে। তবে তত দিন পর্যন্ত ফিট থাকতে হবে। সেটাই এখন চ্যালেঞ্জ।”

আরও পড়ুন: ১৬ মে বুন্দেশলিগা শুরু, মেসিদের লিগ মধ্য জুনে​

সিএবি আবার বাংলা দলের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ক্রিকেটারের কাছেই পাঠিয়ে দিয়েছে ট্রেনিং শিডিউল। যাতে সবাই বাড়িতে থেকেও ফিট থাকতে পারেন। ক্রিকেটীয় স্কিলের ক্ষেত্রে কিছু করা সম্ভব নয় এই মুহূর্তে। কিন্তু, ফিট থাকার ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব তৈরি থাকতে তো বাধা নেই। দৌড়নো যাবে না মাঠে, বাড়িতেই যেটুকু করা যায়।

তার মধ্যেই থাকছে আফশোস। সিএবি লিগ ও নকআউট বন্ধ হয়ে গিয়েছে অনেক আগে। ফলে যে দলগুলো এ বার ভাল ছন্দে ছিল, তাঁদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। টাউন ক্লাবের গীতিময় বসু যেমন বললেন, “এ বার আমরা ভাল খেলছিলাম। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই ছন্দে ছিলাম। কিন্তু, এখন সবই থমকে গিয়েছে। তা ছাড়া নকআউটে ভাল খেললে নির্বাচকদের নজরে পড়ার ব্যাপার থাকে। সেই সুযোগও নেই। ফলে, একটা মরসুম পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে।”

অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ, আফশোস— সবই থাকছে। তবু এই আবহেই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতির বীজমন্ত্র ধ্বনিত হচ্ছে। ফিট থাকতে মরিয়া খেলোয়াড়রা ঘরেই তৈরি রাখছেন নিজেকে। করোনা মাঠ কেড়ে নিতে পারে, নেট-প্র্যাকটিস বন্ধ করতে পারে, কিন্তু লড়াকু মানসিকতাকে দমাতে পারছে না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement