হুঙ্কার: শামি (উপরে), বুমরার দাপটে চনমনে মেজাজে ভারত। টুইটার
তাঁরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিপক্ষ ব্যাটিংকে এর আগে অনেক বারই ভেঙেছেন। এ বার সতীর্থ যশপ্রীত বুমরার খারাপ সময়ে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালেন মহম্মদ শামি। মাত্র কয়েকটা ইনিংস দেখার পরে কেন বুমরার বোলিং নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, এই প্রশ্ন তুলে সমালোচকদের একহাত নিয়েছেন শামি।
শনিবার হ্যামিল্টনে নিউজ়িল্যান্ড একাদশের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে ছন্দে দেখিয়েছে ভারতের দুই পেসারকেই। তার পরে সাংবাদিকদের কাছে শামির প্রশ্ন, ‘‘গোটা দুয়েক ওয়ান ডে ম্যাচে ভাল খেলেনি বলে কী ভাবে লোকে বুমরার দুরন্ত সব ম্যাচ জেতানো বোলিংয়ের কথা ভুলে গেল?’’
নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে তিন ম্যাচে কোনও উইকেট পাননি বুমরা। এর পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা হলে কি চোট কাটিয়ে ওঠার পরে পুরনো ছন্দ ফিরে পাননি বিশ্বের অন্যতম সেরা এই পেসার? শামি এখন বলছেন, ‘‘অনেকটা সময় বুমরাকে ছন্দহীন দেখানোর পরে এই ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা হলে বোঝা যেত। কিন্তু মাত্র দুটো ম্যাচে ও ভাল খেলতে পারেনি বলে বুমরার ম্যাচ জেতানো দক্ষতার কথা ভুলে গেলে তো চলবে না।’’
এখানেই শেষ নয়। সমালোচকদেরও একহাত নিয়েছেন শামি। ভারতীয় পেসার মনে করেন, এই সব সমালোচকদের কাজই হল কোনও না কোনও ব্যাপারে মন্তব্য করা। শামির প্রশ্ন, এঁরা কি ভুলে গিয়েছে কোমরের চোট সারিয়ে সবে মাঠে ফিরেছেন বুমরা? ‘‘এক জন ক্রীড়াবিদই বুঝতে পারে, এই ভাবে ফিরে আসা কতটা কঠিন। বাইরে বসে মন্তব্য করাটা তো সোজা কাজ। কেউ, কেউ তো এই ভাবে মন্তব্য করেই অর্থ রোজগার করে,’’ বলেন তিনি। শামির আরও মন্তব্য, ‘‘যে কোনও ক্রীড়াবিদই চোট পেয়ে যেতে পারে। তাই নেতিবাচক দিকটা নিয়ে কথা না বলে ইতিবাচক ব্যাপারটার উপরেই নজর দেওয়া উচিত। আমিও ২০১৫ সালে চোট পেয়েছিলাম। হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে ফিরে আসি।’’
শামি কিছুতেই বুঝতে পারছেন না এক জন ক্রিকেটারের ফর্ম কিছু দিনের জন্য খারাপ হলেই কী ভাবে সংশ্লিষ্ট সেই ক্রিকেটারের প্রতি সবার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। শামির মন্তব্য, ‘‘কয়েকটা ম্যাচ খারাপ খেললেই এক জন খেলোয়াড়ের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। তাই এই সব ব্যাপার নিয়ে আমাদের বেশি ভাবলে চলবে না।’’
ভারতীয় দলের এই বোলিং আক্রমণে শামি অন্যতম অস্ত্র। সুনীল গাওস্কর থেকে শোয়েব আখতার, অনেকের মুখেই শোনা গিয়েছে শামির প্রশংসা। দলের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটার তিনি। এই অভিজ্ঞতার মূল্য কতটা? শামির জবাব, ‘‘অবশ্যই অভিজ্ঞতার একটা আলাদা দাম আছে। চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররাই। আগে অনেক বার চাপে পড়ার কারণে অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা জানে কখন কী করতে হবে। এটাই অভিজ্ঞতার মূল্য।’’
শামি আরও মনে করেন, অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলতে পারলে এক জন তরুণ ক্রিকেটার উপকৃতই হবেন। শামির কথায়, ‘‘দলে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার থাকার সময় তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে আসা উচিত। তা হলে তরুণরা তাড়াতাড়ি পরিণত হতে পারবে।’’ ভারতীয় দলে সিনিয়র-জুনিয়র ক্রিকেটারদের সমীকরণটা কী রকম, সেটাও পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে শামির কথায়। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের দলে আমরা তরুণ ক্রিকেটারদের ঠিক রাস্তা দেখাই, ওদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করি। যাতে ওরা সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যে কোনও দূরত্ব আছে বলে মনে না করে।’’
এ রকমই এক জন তরুণ পেসার, নবদীপ সাইনির প্রশংসা করছেন শামি। বলছেন, ‘‘ওর বয়স কম। প্রতিভা আছে, বলে গতি আছে। উচ্চতাও ভাল। কিন্তু কাউকে ওকে ঠিক রাস্তাটা দেখাতে হবে। সাইনি ভাল বল করছে। কিন্তু একদিনে তো অভিজ্ঞ হয়ে যাবে না। যত খেলবে তত অভিজ্ঞতা বাড়বে। আর আমরা সিনিয়ররা তো আছিই ওকে ঠিক রাস্তা দেখানোর জন্য।’’
প্রস্তুতি ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে ভারতীয় পেসারদের মধ্যে শামিকেই সেরা দেখিয়েছে। যে ধরনের পিচ হ্যামিল্টনে পেয়েছেন শামি, তাতে তিনি খুশি। বলেছেন, ‘‘উইকেটে ভাল বাউন্স ছিল। বল ভাল যাচ্ছে। এই ধরনের পিচে বেশি খেলার সুযোগ পাওয়া যায় না। কিন্তু এই সব পিচ থেকে ফায়দা তোলার মতো বোলার আমাদের হাতে আছে।’’