যুযুধান: দুই অধিনায়ক মেগ ল্যানিং ও হরমনপ্রীত কৌর। ফাইল চিত্র
বুধবার রাতে সিডনি থেকে বাবা হরমন্দর সিংহ ভুল্লারকে ফোনটা করেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন ভারতীয় মহিলা টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর। মেয়ে কেমন আছে তা নিয়ে যেন কোনও আগ্রহ নেই বাবার। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘বেটি তৈয়ার হো তো? ইসবার চ্যাম্পিয়ন হোনা হি পড়েগা।’’ একই সুর মায়ের গলাতেও।
বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুন হরমনপ্রীত, প্রত্যেক দিন ফোনে বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলবেনই। এর আগে যত বার ফোন করেছেন, বাবা-মা জানতে চেয়েছেন, মেয়ের শরীর ঠিক আছে কি না। ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করছেন কি না। পরামর্শ দিয়েছেন চাপমুক্ত থাকার। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে নতুন অভিজ্ঞতা হল হরমনপ্রীতের।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পঞ্জাবের ভুল্লার জেলা থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে হরমন্দর বললেন, ‘‘দু’বছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারের যন্ত্রণা কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে আমাদের মনে। স্বীকার না করলেও আমি জানি, হরমনও সেই হার ভুলতে পারেনি। ওকে তাতিয়ে দেওয়ার জন্যই এ রকম বলেছি।’’ আপনার প্রশ্নের কী উত্তর দিলেন ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক? হাসতে হাসতে হরমন্দর যোগ করলেন, ‘‘প্রথমে একটু অবাক হয়ে গিয়েছিল হরমন। বুঝতে পারছিল না কী বলবে। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, আমরা সবাই তৈরি। কথা দিচ্ছি, এ বার বিশ্বকাপ নিয়েই দেশে ফিরব।’’
২০১৮ সালে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সপ্তাহখানেক আগে মেলবোর্নে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের ফাইনালে হরমনপ্রীত, স্মৃতি মন্ধানাদের হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। আজ, শুক্রবার সিডনিতে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই ভারতের প্রতিপক্ষ দুরন্ত ছন্দে থাকা অস্ট্রেলিয়া। ঘরের মাঠে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরা অস্ট্রেলিয়াকেই এগিয়ে রাখছেন। হরমনপ্রীতের বাবা অবশ্য তা মানছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘ক্রিকেটের মতো চরম অনিশ্চয়তার খেলায় কখনও ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালের চার দিন আগে এই অস্ট্রেলিয়াকেই সাত উইকেটে হারিয়েছিল হরমনরা। একটা দল হিসেবে খেলতে পারলে শুক্রবার ভারতের জিততে কোনও সমস্যা হবে বলে আমার মনে হয় না।’’
একই সুর ভারতীয় দলের অধিনায়কের গলাতেও। সিডনিতে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘‘ভাল কিছু করতে হলে একটা দল হিসেবে খেলতে হবে। আগের প্রতিযোগিতাগুলো থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি, এক বা দু’জনের উপরে নির্ভর করে কখনও ম্যাচ জেতা যায় না।’’ তিনি যোগ করেছেন, ‘‘দল হিসেবে খেলতে না পারলে বিশ্বকাপের মতো বড় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব নয়।’’
এই মুহূর্তে হরমনপ্রীত সেরা ছন্দে নেই। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ১৬ বলে মাত্র ১৪ রান করেছেন। যদিও তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন ভারত অধিনায়কের বাবা। বললেন, ‘‘হরমনকে আমি খুব ভাল করে চিনি। ঠিক সময়ে ও জ্বলে উঠবে। প্রচণ্ড লড়াকু। ব্যাটিং ও ফিটনেস নিয়ে ভীষণ সচেতন। নিয়মিত জিম করে। ওজন যাতে বেড়ে না যায়, তার জন্য অনেক কিছুই খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।’’ তিনি আরও বললেন, ‘‘ছুটিতে বাড়িতে এলেও সময় নষ্ট করে না। ভাই গ্যারিকে (গুরজিন্দর) নিয়ে মাঠে চলে যায় অনুশীলন করতে। তা ছাড়া ছেলেদের সঙ্গে খেলেই তো বড় হয়েছে হরমন। তাই লড়াই করতে কখনও ভয় পায় না।’’
ইতিমধ্যেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখতে মেলবোর্ন যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন হরমন্দর। বলছিলেন, ‘‘ভারত শুধু ফাইনালে উঠবে না, চ্যাম্পিয়নও হবে বলে আমার আশা। অস্ট্রেলিয়া রওনা হওয়ার আগে গত জানুয়ারিতে মাত্র এক দিনের জন্য বাড়িতে এসেছিল হরমন। যাওয়ার আগে বলেছিল, ফাইনালে উঠলে তোমাদের আমি মেলবোর্নে উড়িয়ে আনব। মাঠে বসে আমার মেয়ের নেতৃত্বে ভারতের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া দেখার চেয়ে সেরা প্রাপ্তি আর কী হতে পারে।’’