নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান এম এস কে প্রসাদ।—ছবি সংগৃহীত।
বিশ্বকাপের পর থেকেই তাঁদের নির্বাচক কমিটি বেশ কিছু প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বলা হচ্ছে, এই কমিটির কোনও দূরদৃষ্টি নেই। অভিযোগ উঠেছে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে সুযোগ দিতে গিয়ে বিশ্বকাপে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যাবতীয় অভিযোগের জবাব দিয়েছেন নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান এম এস কে প্রসাদ। আপনাদের কমিটির কোনও দূরদৃষ্টি ছিল না বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে কী বলবেন? প্রশ্নের জবাবে প্রসাদের ব্যাখ্যা, ‘‘আমি কয়েকটা উদাহরণ দিতে চাই। এক, যশপ্রীত বুমরাকে সবাই প্রথমে সাদা বলের ক্রিকেটার ভাবত। আমাদের দূরদৃষ্টি না থাকলে ও কী ভাবে আস্তে আস্তে টেস্টে নিজের জায়গা পাকা করে নিতে পারল? দুই, হার্দিক পাণ্ড্য। ওকেও সবাই প্রথম দিকে টি-টোয়েন্টির ক্রিকেটার ভেবে নিয়েছিল। দূরদৃষ্টি না থাকলে ও কী ভাবে সব ফর্ম্যাটের ক্রিকেটে এক জন ভাল অলরাউন্ডার হয়ে উঠল?’’
শুধু এই দু’জনই নন। প্রসাদ টেনে এনেছেন দুই রিস্টস্পিনারের কথাও। বলেছেন, ‘‘এই নির্বাচক কমিটিই কিন্তু আর অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাডেজার মতো প্রতিষ্ঠিত স্পিনার ওয়ান ডে দলে থাকা সত্ত্বেও কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চহালকে সুযোগ দিয়েছিল। আর আমাদের যদি দূরদৃষ্টি না-ই থাকে, তা হলে এত অল্প সময়ের মধ্যে ঋষভ পন্থ কী করে টেস্টে জায়গা করে নেয়? ওর খেলা দেখে কেউ তো ওকে পাঁচ দিনের ফর্ম্যাটের ক্রিকেটার বলে ধরেইনি।’’ এখানেই শেষ নয়। প্রসাদ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মায়াঙ্ক আগরওয়াল, হনুমা বিহারী কী নবদীপ সাইনি, খলিল আহমেদের মতো ক্রিকেটারও রিজার্ভ বেঞ্চে আছেন। ‘‘এই কমিটি যদি দূরদর্শী না হত, তা হলে আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চ বা ভারতীয় ‘এ’ দল এই জায়গায় কী করে পৌঁছত? এ সবই নির্বাচক কমিটি, কোচ রবি শাস্ত্রী এবং রাহুল দ্রাবিড়ের মধ্যে বোঝাপড়া এবং আন্তরিক চেষ্টার ফল,’’ বলেছেন প্রসাদ।
কিন্তু ধোনিকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য কি মিডল অর্ডারের ভারসাম্যে ধাক্কা লাগেনি? এই প্রশ্নের জবাবে প্রসাদ বলেছেন, ‘‘আমরা যদি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচটা জিততাম, তা হলে ধোনি এবং জাডেজার ইনিংসকে সর্বকালের অন্যতম সেরা বলা হত। আমি পরিষ্কার বলছি, আমার কাছে ছোট ফর্ম্যাটের খেলায় ধোনি এখনও সেরা উইকেটকিপার এবং ফিনিশার। অন্যরা এখনও তৈরি হওয়ার পথে। বিশ্বকাপে ধোনি ভারতীয় দলের বড় শক্তি ছিল। কিপার এবং ব্যাটসম্যান হিসেবে তো বটেই। নিজের বিশাল অভিজ্ঞতাও দলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পেরেছিল ধোনি।’’
যদি দক্ষিণ আফ্রিকা বা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠের সিরিজের জন্য আপনাদের কমিটিকে দল বাছতে বলা হয়, তা হলে কি ধোনিকে ম্যাচ বেছে বেছে খেলার সুযোগ দেবেন? প্রসাদের মন্তব্য, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দল নির্বাচনের শেষে আমি বলেছিলেন, বিশ্বকাপের পরে আমাদের একটা অন্য রকম পরিকল্পনা আছে। আমরা ঋষভকে যত বেশি সম্ভব সুযোগ দিতে চাই। যাতে ও দলের চাহিদা অনুযায়ী খেলার মতো জায়গায় আসতে পারে।’’
সামনে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। ২০২০ এবং ২০২১ সালের কথা মাথায় রেখে কি এই সফর থেকে দল পুনর্গঠনের একটা প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে? নির্বাচক প্রধান বলেছেন, ‘‘পুনর্গঠন একটা লম্বা প্রক্রিয়া। টেস্ট দল নিয়ে বলব, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে আমরা ভালই ফল করেছি। এ বার টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে। যে চ্যাম্পিয়নশিপের দিকে আমরা আগ্রহের সঙ্গে তাকিয়ে আছি। আর সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্য আমরা কয়েক জন তরুণকে সুযোগ দিয়েছি ওদের ‘এ’ দলের হয়ে পারফরম্যান্স দেখার পরে। এ বার ওদের নিজেদের জায়গা পাকা করার লড়াই। যে জন্য এখন থেকে প্রচুর সুযোগও পাবে ওরা।’’
প্রসাদদের মেয়াদ এ বছরই শেষ হচ্ছে। বোর্ড নির্বাচন হলে নতুন কমিটি আসার কথা। এত দিন চেয়ারম্যান থাকার সুবাদে এক জন নির্বাচকের মধ্যে কী কী গুণ থাকা উচিত বলে আপনার মনে হয়? প্রসাদের মন্তব্য, ‘‘সততা, দায়বদ্ধতা, গোপনীয়তা বজায় রাখার ক্ষমতা— এগুলো থাকতে হবে। কে ক’টা ম্যাচ খেলেছে, সেটা তো অন্য ব্যাপার।’’