ভারতকে হারাতে পারবে না বাংলাদেশ

জ্যোতিষীর নাম স্যর রিচার্ড হ্যাডলি। শুক্রবার মার্টিন গুপ্টিলের সেঞ্চুরি হওয়ার আগেই তাঁকে নিশ্চিন্ত দেখাল যে প্রচুর লড়াইয়ের পর নিউজিল্যান্ডই জিতছে। হ্যামিল্টন মাঠের পশ্চিম কোণে একটা সোফায় আবিষ্কার করা গেল নিউজিল্যান্ডের মিস্টার ক্রিকেটকে।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

হ্যামিল্টন শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৫
Share:

জ্যোতিষীর নাম স্যর রিচার্ড হ্যাডলি। শুক্রবার মার্টিন গুপ্টিলের সেঞ্চুরি হওয়ার আগেই তাঁকে নিশ্চিন্ত দেখাল যে প্রচুর লড়াইয়ের পর নিউজিল্যান্ডই জিতছে। হ্যামিল্টন মাঠের পশ্চিম কোণে একটা সোফায় আবিষ্কার করা গেল নিউজিল্যান্ডের মিস্টার ক্রিকেটকে।

Advertisement

বাংলাদেশ বনাম ভারত: বাংলাদেশ খুব ভাল লড়ল আজ। গোটা টুর্নামেন্টে নিউজিল্যান্ড এত নাস্তানাবুদ আর হয়নি। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে আমি ওদের বিশেষ আশা দেখছি না। ভারতের ব্যাটিং অনেক স্ট্রং। বোলিংটাও খুব ভাল করছে পেসাররা। ওরা সহজে রান করতে দেবে না। বিশেষ করে ইন্ডিয়ান ব্যাটিংটা এত ভাল যে ওদের ভাঙা খুব সমস্যা। আমি ভারতকে মেলবোর্নে সত্তর ভাগ ফেভারিট ধরব।

Advertisement

বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানদের আধিপত্য নিয়ে বিতর্ক: আমি বলব অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাটসম্যানরা যত সহজে রান করেছে, আমাদের দেশে তত কিন্তু করেনি। এখানকার পিচে বোলারদের জন্য কিছু ছিল। তাই অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় এখানে সেঞ্চুরির সংখ্যা কম। তবে এটা ঠিক যে ও দেশে আধিপত্যটা সীমাহীন পর্যায়ে চলে গিয়েছে। কী ভাবে এটা সামলানো যায়, আমি নানান থিওরি শুনছি। হয় ব্যাটের প্রযুক্তি সম্পর্কিত কোনও আইন আনতে হবে। নয়তো আর একটা সমাধানের উপায় হল বলের সিম চওড়া করে দাও। তা হলে বোলাররা বাড়তি সুবিধে পেয়ে যাবে। একটা ভারসাম্য আসবে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট: ভারতের তুলনায় পিছিয়ে রাখলেও এমনিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দেখে আমি অভিভূত। ওরা প্রমাণ করেছে কোয়ার্টার ফাইনালে মোটেও ফ্লুকে ওঠেনি। এই মাহমুদুল্লাহ ছেলেটাকে দেখে আমি চমত্‌কৃত। কী ভাল ব্যাট করল। বল ছাড়া। চাপের মুখে খেলা। দারুণ। রুবেল ছেলেটাও খুব ভাল বল করে। সাকিব নিয়ে তো কিছু বলারই নেই। অলরাউন্ডার হিসেবে সে রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা যদি সমসাময়িক প্লেয়াররা ওকে দিত তা হলে ও আরও উন্নতি করত। বাংলাদেশ যে আমাদের দেশে এসে এ রকম লড়াই করতে পারবে, ভাবতেই পারিনি। দারুণ উন্নতি করেছে ওদের ক্রিকেট।

বিশ্বকাপে নিজের হাতে বল থাকলে টুর্নামেন্টের সেরা তিন ব্যাটসম্যানকে কী ভাবে বল করতেন: হ্যাডলির নির্বাচন— সঙ্গকারা, ডে’ভিলিয়ার্স আর কোহলি।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

সঙ্গকারা: ওকে আউট করতে হলে অফস্টাম্পের বাইরে। একমাত্র ওই জায়গাটাই ওর সামান্য ভঙ্গুর জায়গা। আমাদের দেশে যখন এসেছে বাঁ হাতি বোলাররা কোনাকুনি অফস্টাম্পের বাইরে রেখেই ওকে আউট করার চেষ্টা করেছে। যদি ফ্র্যাকশন অব আ সেকেন্ড একটা ডেলিভারি খেলতে গিয়ে ভুল করে। ফিল্ডও ওই ভাবে অফস্টাম্প ভিত্তিক সাজাতে হবে। সঙ্গকারা এত ভাল ব্যাটসম্যান যে নির্দিষ্ট পরিকল্পনার এ দিক-ও দিক হলে চলবে না।

ডে’ভিলিয়ার্স: ও প্রচুর সুযোগ নেয়। অ্যাডভেঞ্চারের মধ্যে যায়। ডে’ভিলিয়ার্সকে আমি ক্রিজের কোনায় ঠেলে নিয়ে যেতে চেষ্টা করব। ক্লোজ টু দ্য স্টাম্পস না এসে ওয়াইড অব দ্য ক্রিজ আসব যাতে মুহুর্মুহু লাইনটা ওর শরীর থেকে দূরে রাখতে পারি। ফাঁদটা সেখানেই। যে অধৈর্য হয়ে চালাতে গিয়ে ও ক্যাচ তুলবে।

কোহলি: নড়ানো খুব কঠিন। ক্লাসিক্যাল ব্যাটসম্যান বলতে যা বোঝায়, তাই। ব্যাকফুট, ফ্রন্টফুট দু’টোই ভাল খেলতে পারে। আমাদের সময়ে এখনকার মতো ভিডিওর সাহায্য পাওয়া যেত না। পুরোটাই মনে। মনে রেখে রেখে অপেক্ষাকৃত দুর্বল জায়গায় অ্যাটাক করতে হত। আমি তো ডোসিয়ের বানিয়ে রেখেছিলাম সারা পৃথিবীর ব্যাটসম্যানদের ওপর। এখনও সেই স্মৃতিশক্তিটা চলে যায়নি। কে কোথায় কী ভাবে আউট হচ্ছে মনে রাখি। কোহলিকে বাঁ কনুইয়ের হাইটে রাইজিং ডেলিভারি করতাম যেটা ঝাক করে ঠিক অফস্টাম্পের বাইরে যেত। কোহলির ক্ষেত্রে মার্জিন অব এরর খুব কম। ঠিক জায়গাটায় রাখতে হবে। তবে ধৈর্য আর ব্যাটসম্যানের শরীর থেকে দূরে সুইং করাবার ক্ষমতা থাকলে না হওয়ার কিছু নেই।

তিনি-ইমরান-কপিল-বোথাম সবাই ধরা যাক এই বিশ্বকাপে খেলছেন: আমি সবচেয়ে বেশি উইকেট পেতাম (হাসি)। তবে আমাদের সঙ্গে কালিসকে যোগ করে বলছি এই পাঁচ জনের মধ্যে সেরা অলরাউন্ডার ইমরান। আমি শুধু বোলিংয়ে অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু আমার ব্যাটিং রেকর্ড ভাল না। ওই রেকর্ড নিয়ে সেরা অলরাউন্ডার হওয়া যায় না। কপিল সবচেয়ে ধারাবাহিক ভাবে খেলে গিয়েছে। বোথাম ছিল ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান। আর খেলার চেয়েও বেশি করে ওর ফ্ল্যামবয়েন্সটা সেই সময় ক্রিকেটের দরকার ছিল। কালিস তো নিছক স্ট্যাটসের বিচারে আমাদের মধ্যে এক নম্বর। কিন্তু আমার এক নম্বর বাছার মাপকাঠি শুধু স্ট্যাটস নয়। আমি আরও অনেক কিছু দেখি। ইমরান এমন একজন যে টেস্টে এক থেকে ছয় নম্বরের মধ্যে ব্যাট করতে পারত। ওয়ান ডে-তে প্রথম চারে। টিম চাইলে মারতে পারত। আবার দরকার হলে ধরতে। এর সঙ্গে বোলিং। রিয়াল পেস ছিল। বোলার হিসেবে প্রায় আমার গায়ে গায়ে। এর সঙ্গে ওর ক্যাপ্টেন্সি। তবে এখন আর চৌষট্টি বছরে এ সব কল্পনা নিয়ে থাকি না যে বিশ্বকাপ খেলছি। বরং এটাই মনে রাখি পরের বছর আমি পঁয়ষট্টি। আমার পেনশনার হিসেবে জীবন শুরু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement