টানা নয় বছর প্রেম করার পরে শেষমেশ সেই প্রেমিকা যদি বিয়ে করে পাশের পাড়ার ছেলেকে, তা হলে কেমন হয় সেই প্রেমিকের মনের অবস্থা?
এই মুহূর্তে এমন প্রশ্নের উত্তর বোধহয় ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা সবচেয়ে ভাল দিতে পারবেন!
যে আই লিগ লাল-হলুদ তাঁবুতে ঢুকবে-ঢুকবে করেও একাধিক বার শেষ লগ্নে এসে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে (বিশেষ করে মর্গ্যান জমানায়), সেই ট্রফির এখন বাগান ড্রেসিংরুমের শোভা হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। জাতীয় লিগের মতো আই লিগও বাংলার মাটিতে সম্ভবত প্রথম পা রাখতে চলেছে সেই সবুজ-মেরুন রং লেপ্টেই। আর সেটা হলে ভাইচুং ভুটিয়া, দুলাল বিশ্বাসের মতো বঙ্গসন্তান ফুটবলাররা আঠারো বছর আগে যে ভাবে হাত কামড়েছিলেন, এ বার ঠিক সে রকমই যন্ত্রণায় ভুগবেন হয়তো মেহতাব-অর্ণবরা।
গোটা বছর যাকে পেতে চাইলাম, চোখের সামনে তাকে অন্য কারও হতে দেখলে সহ্য করা যায় না কি! ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ মাধবন ওরফে ফারহান কুরেশি বলেছিলেন, ‘বন্ধু ফেল করলে কষ্ট হয়। কিন্তু বন্ধু ফার্স্ট হলে আরও বেশি কষ্ট হয়।’ যদিও সে রকম মনোভাব আঠারো বছর আগের ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। ’৯৭-এর লাল-হলুদ অধিনায়ক দুলাল বিশ্বাস এ দিন বললেন, ‘‘কষ্ট হয়েছিল। খুব কষ্ট হয়েছিল। এত কাছে এসে জাতীয় লিগ হারানোয়। তবে গর্বও হয়েছিল। ভেবেছিলাম ট্রফিটা মোহনবাগান পাওয়া মানেও তো ভিন রাজ্যের ক্লাবে চলা বাংলা-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে মোক্ষম জবাব। সে বার বাগানের সব ফুটবলারকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম।’’
সেই মরসুমের আর এক ইস্টবেঙ্গল ফুটবলার তরুণ দে-র কথায়, ‘‘সে বারের মরসুম শেষে আমাকে আর দলে রাখা হয়নি। তাই অনুভূতিটাও খুব কম ছিল। আরও দু’এক বছর ইস্টবেঙ্গলে খেলতে চেয়েছিলাম। পারিনি। তবে দারুণ খুশি হয়েছিলাম মোহনবাগানের জন্য। কেন না আমার কাছে বাংলা আগে। তার পর ক্লাব।’’ তরুণের সে বারের সতীর্থ তুষার রক্ষিতও একমত। ‘‘দু’টো দলের মধ্যে খেলা হলে একটা টিম জিতবে। একটা হারবে। সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমি সেই সময় বেশি খুশি হয়েছিলাম ট্রফিটা বাংলায় এসেছিল বলে। হোক না সেটা মোহনবাগান, তাতে কী?’’
লাল-হলুদের প্রাক্তনদের মতো বর্তমানদের মনোভাবও কি এক? শনিবার শিলংয়ে লাজং এফসির বিরুদ্ধে আই লিগে শেষ ম্যাচ খেলতে নামছে ইস্টবেঙ্গল। নিছক নিয়মরক্ষার ম্যাচ। চ্যাম্পিয়ন হওয়া তো দূরের কথা, রানার্সের সম্ভাবনাও নেই। এই পরিস্থিতিতে এখন সান্ত্বনা পুরস্কার ‘থার্ড বয়’ যদি হওয়া যায়। কিন্তু বাগান যদি চ্যাম্পিয়ন হয়, তার পাশে ‘থার্ড বয়’-এর মূল্য কার্যত শূন্য। এই আবেগ র্যান্টির মতো লাল-হলুদের বিদেশিরা হয়তো পুরোপুরি অনুভব করতে পারবেন না, কিন্তু টিমের বঙ্গসন্তানরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
মেহতাব হোসেন যেমন শিলং থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কী! শেষ পাঁচ বছর ভারতের সবচেয়ে ধারাবাহিক টিম ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু দেশের সেরা ট্রফিটাই জিততে পারছি না। আই লিগ জিততে পারলে ক্লাব তো বটেই, ব্যক্তিগত সম্মানও বাড়ত।’’ অর্ণব মণ্ডলের আবার অন্য আফশোস, ‘‘খুব কষ্ট হচ্ছে ট্রফিটা আমার হাত ধরে বাংলায় এল না। যেমন এটিকে-র হয়ে আইএসএল জিতেছি প্রথম বার। তবে যে টিম-ই জিতুক, আমার শুভেচ্ছা থাকল। সবাই পরিশ্রম করে এই জায়গায় এসেছে। কেউ ফ্লুকে জিতছে না।’’
আই লিগ ‘ফাইনাল’ রবিবার। তার আগের দিনই কিন্তু পরিষ্কার হয়ে যাবে, বাকি টিমগুলোর চূড়ান্ত অবস্থান। দেখার, সালগাওকর (২১), মুম্বই এফসি (২১), স্পোর্টিং ক্লুব (২০), লাজং (২০) এবং ডেম্পো (১৯)— কোন টিমের অবনমন হয়। ভারত এফসি পয়েন্ট তালিকায় ‘লাস্ট বয়’ থাকলেও, এআইএফএফের বিধানে কপোর্রেট টিম বলে তাদের অবনমন হচ্ছে না!