গুরু-শিষ্য, সঞ্জয় ভরদ্বাজ- গৌতম গম্ভীর।
গৌতম গম্ভীর থেকে নবদীপ সাইনি, বহু তারকা ক্রিকেটার বেড়ে উঠেছেন তাঁর কোচিংয়ে। শিষ্যরা দেশের হয়ে ফুল ফুটিয়েছেন। ছাত্রদের সাফল্য বিচক্ষণ কোচকে তৃপ্তি দিয়েছে। কঠিন পরিশ্রমের ফল অবশেষে পেতে চলেছেন সঞ্জয় ভরদ্বাজ। দিন কয়েক পরে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে দ্রোণাচার্য পুরস্কার নেবেন তিনি। গম্ভীরদের কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা থেকে ভারতের ওয়ানডে দলের চার নম্বর, আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় ভরদ্বাজ ধরা দিলেন অন্য মেজাজে।
প্রশ্ন: এই সম্মান পেয়ে কেমন লাগছে আপনার?
সঞ্জয়: এই সম্মান পেয়ে আমি গর্বিত। দ্রোণাচার্যের স্বপ্ন সব কোচই দেখেন। আমিও দেখতাম। এ বার দেশের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সেই সম্মান গ্রহণ করব। কোচেদের জীবনে এর চেয়ে বড় সম্মান আর কিছু হতে পারে না।
প্রশ্ন: ভারতের প্রাক্তন ওপেনার গৌতম গম্ভীরকে ছোট থেকে কোচিং করিয়েছেন আপনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গম্ভীরের সাফল্যের রহস্য কী?
সঞ্জয়: খেলার সময়ে ওর একাগ্রতা এবং ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা ওকে সবার থেকে আলাদা করে দেয়। কোনও খেলোয়াড়ের হার না মানা লড়াকু মনোভাবই এই স্তরে সাফল্যের চাবিকাঠি।
প্রশ্ন: একজন খেলোয়াড়ের সাফল্যের পিছনে কোচের ভূমিকা ঠিক কতটা?
সঞ্জয়: একজন কোচের কাজই হল ছাত্রের মনোবল শক্তিশালী করা। খেলায় যেমন ভাল দিন আছে, তেমনই খারাপ দিনও দেখতে হয় সবাইকে। ১৪-১৫ বছরের শিক্ষার্থীর মনে অনুপ্রেরণা জোগানোই একজন কোচের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: অতীতে বিষেণ সিংহ বেদী থেকে বর্তমানের ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি— বহু রত্ন দিল্লি থেকে এসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বছরের পর বছর ধরে দিল্লির এই সাফল্যের কারণ কী?
সঞ্জয়: দিল্লির ক্রিকেট পরিবেশটাই এরকম। ছোটবেলা থেকেই কঠিন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে হয় এখানকার ক্রিকেটারদের। সেই কারণেই পরবর্তী সময়ে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে ভয় পায় না ওরা।
প্রশ্ন: ভারতীয় ক্রিকেটে চার নম্বর ব্যাটিং পজিশন নিয়ে জট অব্যাহত। চলতি ক্যারিবিয়ান সফরে শ্রেয়াস আইয়ার ভাল খেললেও তাঁর জায়গা এখনও পাকা নয়। অপর দিকে, ভারতীয় এ দলের জার্সি গায়ে নিয়মিত খেলছেন আপনারই স্নেহধন্য বাঁ-হাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান নীতীশ রাণা। তিনি কি ভারতীয় দলে নিজের জায়গা করে নিতে পারবেন? আপনার কী মত?
সঞ্জয়: বিরাট কোহালি যেমন নিয়মিত বড় রান করে, তেমনই ছোট থেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটে নীতীশও বড় ইনিংস খেলতে অভ্যস্ত। বিগত কয়েক বছরে ওর পারফরম্যান্স যথেষ্ট ভাল। তার সুবাদেই ভারতীয় এ দলে জায়গা পেয়েছে ও। আমি বিশ্বাস করি, কিছু দিনের মধ্যেই সিনিয়র দলের জার্সি গায়েও দেখা যাবে ওকে।
প্রশ্ন: গম্ভীর-নবদীপদের জাতীয় দলের হয়ে খেলার রহস্য কী?
সঞ্জয়: দেখুন, জাতীয় দলের হয়ে খেলা নিঃসন্দেহে বড় ব্যাপার। আমি খুব কাছ থেকে ওদের দেখেছি। তাই জানি, এরা কোনও সময়েই নিজেদের মনোসংযোগ হারায়নি। খারাপ সময়ে ইস্পাত কঠিন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। হারার আগে হার মানেনি। লড়াই করে গিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই এই মানসিকতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল ছেলেদের মধ্যে। তার জন্যই ওরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এত সফল।
প্রশ্ন: অনেকে কোচই মেজাজ হারিয়ে ছাত্রকে বকাবকি করেন... (প্রশ্ন মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে)
সঞ্জয়: শুনুন, মায়ের স্নেহে ছোট ছোট বাচ্চাদের গড়ে তুলতে হয়। বকাবকি করলে তো ওরা ভয় পেয়ে যাবে। খেলার প্রতি আগ্রহ কমে যাবে। আমি চিরকালই মায়ের মতো ওদের আগলে রেখেছি। ভালবাসা দিয়ে ঘিরে রেখেছি। ওরা ভুল করলে ভুলটা শুধরে দেওয়া চেষ্টা করেছি।
আরও পড়ুন: জিতলেই ইতিহাস, অ্যান্টিগায় রেকর্ডের সামনে বিরাট কোহালি
আরও পড়ুন: সেমিফাইনালে ধোনির ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে এ বার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করলেন সহবাগ