নবরাত্রি শেষ হল আর আমি ফের মাংসাশী জীবনে ফিরলাম। আমি একজন নির্লজ্জ আমিষভুখি যদিও চিকেন আর সামুদ্রিক মাছের বাইরে বেশি যাই না। নবরাত্রির সময় অবশ্য আমিষ খাই না কিন্তু তার পরে পুরো স্বাধীন। এ দিন ব্রেকফাস্ট সীমিত ছিল ওমলেট আর সেদ্ধ ডিমে। একটা কামড় দিতেই শেফকে পুরস্কার দিতে ইচ্ছে করল, যে ওমলেটটা বানিয়েছে। এমন নয়, স্বাদটা কিছু আলাদা ছিল কিন্তু এত দিন পর ওমলেট খেয়ে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম। লাঞ্চে কিছু কাবাব আর চিকেন টিক্কার সামনে নিজেকে আত্মসমর্পণ করে দিলাম। ডিনারের সময় কাবাব আর সবশেষে অবশ্যই হায়দরাবাদি বিরিয়ানি।
এটা বুঝতে কোনও অসুবিধে নেই আমি খুব খাদ্যরসিক। উদাহারণ হিসেবে বলতে বলি, বাটার চিকেন সপ্তাহের সাত দিনই খেতে পারি! নব্বইয়ের শেষ দিকে গুরগাঁওয়ে যাওয়া জীবনের অঙ্গ ছিল না, যেমনটা বর্তমানে হয়েছে। তবু আমি আর আমার বন্ধুরা রাতে গাড়ি চালিয়ে গুরগাঁও যেতাম রাস্তার ধারের খাবার খেতে। যার মধ্যে থাকত ধাবার বাটার চিকেন। সেই সময় আমার কাছে গুরগাও ছিল দুর্দান্ত খাবার আর মজার। কিছু বছর পরে আবার আবিষ্কার করলাম আমার স্ত্রীও গুরগাঁওয়ের বাসিন্দা। খুবই খারাপ লাগছে যে গুরগাঁও নামটা আর্কাইভে চলে গিয়েছে। এখন বলা হচ্ছে গুরুগ্রাম। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী নামকরণটা হয়েছে গুরু দ্রোণাচার্যের নামে। যিনি গুরুদক্ষিণা হিসেবে পাণ্ডবদের থেকে গ্রামটা পেয়েছিলেন আর সেই কারণে জায়গাটাকে গুরুগ্রাম বলা হয়। গল্প অনুযায়ী যত দিন কেটেছে নামটা দাঁড়িয়ে গিয়েছে গুরগাঁও-তে। কিন্তু তাতে কী আর আসে-যায়! বর্তমানে গুরগাঁও উপর-নীচ লাফাচ্ছে ‘শাসক’দের নজর টানতে। নাম পাল্টানোর থেকে শহরটার বেশি প্রয়োজন যাতায়াতের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত জল আর বিদ্যুৎ। সঙ্গে চাই কম টাকায় থাকার ব্যবস্থা, মহিলাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ।
আর একটা থিওরি হচ্ছে, নামটা হিন্দুত্বের সাইনবোর্ড হিসেবে করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমি বিশেষ়জ্ঞ নই, কিন্তু কোনও বিশ্বাস এতটাও ঠুনকো নয় যে, শহরের নাম বদলানোর উপর সেটা নির্ভর করবে। আমার আসল চিন্তা সরকারি জিনিসপত্রের দোকান, সরকারি ওয়েবসাইট, মেট্রো স্টেশন, হাসপাতাল, অফিসের সাইনবোর্ড পাল্টাতে জনগণের কর দেওয়ার টাকার কতটা খরচ হবে! একটা জায়গার পরিচয় তার নামের উপর নয়, নির্ভর করে কী রকম ভাবে জায়গাটা চালানো হচ্ছে।
হায়দরাবাদের সঙ্গে খেলতে আমরা তৈরি। যারা এখন তেলেঙ্গনার অংশ আর বিধিসম্মত অন্ধ্রপ্রদেশেরও রাজধানী। এখনও পর্যন্ত দুটো রাজ্যের হয়ে সব কিছু ঠিকঠাকই চলছে আর নাম পাল্টানোর কোনও কথাও শুনতে পাওয়া যাচ্ছে না। যাই হোক, হায়দরাবাদ মানেই রোমান্স আর ইতিহাস। আশা করছি আমরা ভাল একটা পারফরম্যান্স দেখাতে পারব। ডেভিড ওয়ার্নারের নেতৃত্বে সানরাইজার্স খুব শক্তিশালী একটা দল। আশিস নেহরা না থাকাটা অবশ্যই ওদের জন্য ধাক্কা। আমাদের দিক দিয়ে চেষ্টা থাকবে একটা পেস-স্পিন কম্বিনেশন নিয়ে খেলা। দেখা যাক, ঠিকঠাক কাজে লাগে কি না।
এটা বলতেই হচ্ছে আমার শ্বশুরবাড়ির সবাই গুরগাঁওতে থাকেন। আমি মাঝেসাঝে সারা রাত সেখানে থাকি। ভাবছিলাম শেষ সোমবার রাতে যদি ওখানে থাকতাম তা হলে গুরগাঁওতে ঘুমোতাম আর ঘুম ভাঙত গুরুগ্রামে। তা হলে আমি কি আরও ভাল হিন্দু হতাম!
(দীনেশ চোপড়া মিডিয়া)