নায়ক: ব্যাকভলিতে গোল করে রিয়ালকে এগিয়ে দিয়ে বেল। ছবি: এএফপি
রিয়াল মাদ্রিদ ৩ • লিভারপুল ১
দুই ভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে নেমেছিলেন দুই ফুটবল ম্যানেজার।
রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবল ম্যানেজার জিনেদিন জিদানের সামনে হাতছানি ছিল টানা তিন বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে হ্যাটট্রিক করার। রিয়ালের এই ‘ট্রায়ো ডেসিমা’ (স্পেনীয় এই শব্দের অর্থ ত্রয়োদশ বার) অভিযানের সামনে লিভারপুলের জার্মান ম্যানেজার য়ুর্গেন ক্লপের আবার লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে তাঁর কোচিং-শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা।
শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলে জিতে হাসি মুখে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হাতে তুললেন রিয়াল ম্যানেজার জিদান। আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়ালের টানা তিন মরসুম জয়ের দিনে ক্লপকে সন্তুষ্ট থাকতে হল রানার্স হয়েই।
জখম: র্যামোসের সঙ্গে সংঘর্ষে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ছেন সালাহ। ছবি: রয়টার্স
কিয়েভে এ দিন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল ছিল নাটকীয়তায় পূর্ণ। প্রথমার্ধেই যে বিশ্ব ফুটবলের দুই বিখ্যাত ম্যানেজারের দুই অস্ত্র চোটে কাবু হয়ে মাঠ ছাড়বেন, তা কে জানত! আর তার পরে পরিবর্ত হিসেবে নেমে গ্যারেথ বেলের দর্শনীয় জোড়া গোল। লিভারপুল গোলকিপারের ব্যর্থতায় আর একটি গোল করলেন করিম বেঞ্জেমা। যা দেখে ধারাভাষ্যকাররা হাসতে হাসতে বলেই ফেললেন, ‘‘কী মজাদার গোল।’’
এই ম্যাচের আগে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন দু’জন। লিভারপুলের মহম্মদ সালাহ এবং রিয়াল মাদ্রিদের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। সালাহ চোট পেয়ে বেরিয়ে গেলেন। আর রোনাল্ডো গোল পাননি। এই দুই নায়কের জন্য তৈরি মঞ্চে দর্শনীয় দু’টি গোল করে ম্যাচের নায়ক বেল। যিনি রিয়ালের প্রথম দলে সুযোগই পাননি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গত কয়েকটি ম্যাচে।
সালাহ বেরিয়ে যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পায়ের পেশিতে চোট পেয়ে বেরিয়ে গেলেন রিয়াল রাইট ব্যাক ড্যানি কার্ভাহাল। প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পরে দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরু হতেই গোল করে রিয়াল মাদ্রিদকে এগিয়ে দিয়েছিলেন করিম বেঞ্জেমা। কিন্তু রিয়াল সমর্থকদের সেই গোলের আনন্দ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই লিভারপুলের হয়ে সমতা ফেরান সাদিও মানে। তার পরেই বেল নেমে গোল করলেন দর্শনীয় ব্যাকভলিতে। তাঁর অপর গোল দূরপাল্লার শটে।
ক্লপ শুরু থেকেই অতি-আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলিয়ে চেপে ধরেছিলেন রিয়াল রক্ষণকে। প্রথম কুড়ি মিনিটেই মার্সেলো-সের্খিও র্যামোসদের রক্ষণে ত্রাহি-ত্রাহি রব তুলে দিয়েছিলেন লিভারপুলের ত্রিফলা— সাদিও মানে, রবের্তো ফির্মিনো এবং মহম্মদ সালাহ। কিন্তু ম্যাচের তিরিশ মিনিটের মাথায় ক্লপের প্রধান অস্ত্র সালাহকে ট্যাকল করতে গিয়ে মিশরীয় ফুটবলারটির ডান হাত চেপে মাটিতে ফেলে দেন রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডার র্যামোস। প্রাথমিক শুশ্রূষার পরে উঠে দাঁড়িয়ে মাঠেও নামেন সালাহ। কিন্তু মিনিট খানেক পরেই কাঁধের যন্ত্রণায় মাঠে শুয়ে কাতড়াতে থাকেন তিনি। মাঠে ছুটে যান লিভারপুল চিকিৎসক। কিন্তু চোটের গুরুত্ব বুঝে আর তাঁকে মাঠে রাখার ঝুঁকি নেননি ক্লপ। সালাহকে তুলে নিয়ে তাঁর জায়গায় নামান অ্যাডাম লাল্লানাকে। এই চোটের ফলে সালাহর বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এর ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই ডান পায়ের পেশিতে চোট পেয়ে বেরিয়ে যান রিয়াল রাইট ব্যাক কার্বাহাল।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের আগে গত এক সপ্তাহেই এক লাফে বেড়ে গিয়েছিল শহরের বিভিন্ন হোটেলের ভাড়া। রাতারাতি কিছু কিছু হোটেলের ভাড়া বেড়ে যায় এক হাজার পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ নব্বই হাজার টাকার কিছু বেশি। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সফরকারী ফুটবল পর্যটকদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিতশেকো।