নজরে: আইসিসি বৈঠকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে সৌরভদের বক্তব্য।
ক্রিকেট ভক্তদের বহু প্রতীক্ষিত দু’টি প্রশ্নের উত্তরের ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে আগামী ২৮ মে। সে দিনই নিয়ামক সংস্থা আইসিসি শীর্ষ বৈঠক ডেকেছে সব দেশের বোর্ডের মহাকর্তাদের নিয়ে।
কী সেই দু’টি প্রশ্ন?
এক) অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে? নাকি করোনার প্রকোপে শেষ পর্যন্ত বাতিলই করে দিতে হবে? দুই) ভারতে আইপিএলের ভবিষ্যৎ কী?
দ্বিতীয় প্রশ্ন নিয়ে ২৮ মে সরকারি ভাবে আলোচনা হওয়ার প্রশ্ন নেই। যে-হেতু আইপিএল ভারতের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট এবং আইসিসি-র আওতার মধ্যে পড়ে না। কিন্তু করোনার প্রকোপে দু’টো টুর্নামেন্ট নিবিড় ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সর্বনাশ মানে ভারতের পৌষ মাস হতে পারে।
অতিমারি নিয়ে নিষেধাজ্ঞা চলায় এই বৈঠক হবে ভিডিয়ো কনফারেন্স মারফত। সব দেশের শীর্ষ কর্তারা হয়তো যে যাঁর বাড়ি থেকেই যোগ দেবেন। ভারতীয় বোর্ডের প্রধান মুখ হিসেবে কলকাতা থেকে ভিডিয়ো বৈঠকে হয়তো থাকবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এই আইসিসি বৈঠকে খুবই জোরালো হয়ে উঠতে পারে সৌরভ এবং ভারতীয় বোর্ডের বক্তব্য। করোনা-উত্তর পরিস্থিতিতে সব দেশই এখন ভারতের দিকে তাকিয়ে। কারণ, নজিরবিহীন এই মন্দার বাজারে ক্রিকেট কোষাগার ভরার অভিযানে প্রধান ভরসা বিরাট কোহালিরাই।
আইসিসি সূত্রের খবর, ২৮ মে সভায় এসপার-ওসপার সিদ্ধান্ত হতে পারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে। সব দেশের বোর্ডের কাছেই মতামত চাওয়া হবে। কোন দেশে করোনা নিয়ে কী পরিস্থিতি, অক্টোবরের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা ওঠার সম্ভাবনা আছে কি না, উড়ান চলাচল কবে স্বাভাবিক হতে পারে, বিস্তারিত আলোচনা হবে। আইসিসি-র পাশ করা সূচিতে থাকা দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা হবে।
আয়োজক দেশ অস্ট্রেলিয়া কী বলছে, তা শোনার জন্য সকলে মুখিয়ে রয়েছে। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটমহল থেকে খবর, সে দেশের সরকার এখনও সবুজ সঙ্কেত দেয়নি অক্টোবরে ১৬টি দেশকে নিয়ে বিশ্বকাপের মতো মহাযজ্ঞ আয়োজন করা নিয়ে। ১৬টি দল মানে প্রত্যেকের অন্তত ১৬জন করে সদস্য। তার সঙ্গে করোনা-উত্তর পৃথিবীতে মেডিক্যাল টিম পাঠাতে পারে অনেক দেশের বোর্ড। তাঁদের সকলের নিভৃতবাসের ব্যবস্থা করা, সারাক্ষণ স্যানিটাইজ় করে যাওয়া এবং সব নির্দেশিকা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। তার উপরে ম্যাচ করতে হতে পারে ফাঁকা স্টেডিয়ামে। তা নিয়েও আপত্তি থাকতে পারে অস্ট্রেলিয়ার কারণ তাদের দেশে বেশির ভাগ মাঠই বড় এবং দর্শকাসন অনেক বেশি। সচিনের দেশের তুলনায় ডনের দেশে টিকিট বিক্রি থেকে অনেক বেশি টাকা আসে।
টিকিটের মূল্যও বেশি।
এটাও ভুললে চলবে না যে, গত দুই দশকে ক্রিকেট বিত্তশালী হয়ে ওঠার পিছনে রয়েছে টিভি স্বত্ব থেকে আসা আকাশছোঁয়া অর্থ। একটা উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। আইপিএলের টিভি স্বত্ব পাঁচ বছরের জন্য বিক্রি হয়েছে অবিশ্বাস্য ১৬০০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যে। ঘটনা হচ্ছে, বিশ্বকাপ এবং আইপিএলের টিভি স্বত্ব রয়েছে একই সংস্থার হাতে। সেই সংস্থা স্টার স্পোর্টসের বক্তব্য যথেষ্ট গুরুত্ব পেতে পারে বলে ওয়াকিবহাল
মহলের মত।
পর-পর দু’বছরে দু’টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ রেখেছে আইসিসি। দু’টোরই টিভি স্বত্ব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী, টুর্নামেন্ট না হলে টাকা পাবে না আইসিসি। খুব গায়ে-গায়ে দু’টি বিশ্বকাপ করে কি যথেষ্ট মুনাফা করতে পারবে টিভি সংস্থা? তা-ও আবার এ রকম মন্দার বাজারে? বিজ্ঞাপন থেকেই বা কত টাকা তোলা সম্ভব? নানা ধাঁধার উত্তর বাকি।
তবে একটা ব্যাপার নিয়ে কোনও ধাঁধা নেই। যত মেঘাচ্ছন্ন হবে বিশ্বকাপের আকাশ, ততই সম্ভাবনা বাড়বে আইপিএলের। অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাতিল হয়ে গেলে নভেম্বরে আইপিএল করার ভাবনা গতি পেতে পারে। তাই ২৮ মে বৈঠক নিয়ে বাড়তি আগ্রহ থাকবে সৌরভদের। কেউ কেউ বলছেন, অস্ট্রেলিয়াকে প্রস্তাব দেওয়া হোক, এ বছরের বিশ্বকাপ ২০২২-এ করার জন্য। ২০২১-এ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৩-এ পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ভারতে। ক্রিকেট বাজারের যা ইঙ্গিত, এই পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ হলে হয়তো লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। সেই তুলনায় ভারতে আইপিএল হলে তা-ও কিছুটা সামাল
দেওয়া যেতে পারে।
আর আইপিএল এমনই এক টুর্নামেন্ট যেখান থেকে বিদেশি ক্রিকেটারেরাও কোটিপতি হচ্ছেন, তাঁদের দেশের বোর্ডও লভ্যাংশ পাচ্ছে। তাই সোনার রাজহাঁস না কেটে বাঁচাতেই সকলে তৎপর হলে অবাক হওয়ার নেই।