পুজারাদের প্রয়োজনটা না আরও কমতে থাকে!

একজন পেসার কতটা দাপুটে বা স্পিনার বল হাতে কতটা বিধ্বংসী কিংবা ব্যাটসম্যান কতটা পোক্ত তা যাচাই করে টেস্ট।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৩
Share:

সংশয়: পুজারাদের এই লড়াই হয়তো দেখাই যাবে না। ফাইল চিত্র

চার দিনের টেস্ট ম্যাচ! আইসিসির এই প্রস্তাব শোনার পরেই মনে হচ্ছে প্রকৃত ক্রিকেট ম্যাচ, যেখানে ব্যাটসম্যান ও বোলারের শ্রেষ্ঠত্ব দেখানোর আসল পরীক্ষা, সেই মঞ্চটাকেই ভেঙে দেওয়ার ভাবনা যেন শুরু হয়ে গেল।

Advertisement

একজন পেসার কতটা দাপুটে বা স্পিনার বল হাতে কতটা বিধ্বংসী কিংবা ব্যাটসম্যান কতটা পোক্ত তা যাচাই করে টেস্ট। তাকেই যদি পাঁচের বদলে চার দিনের করা হয়, তা হলে যে ক্ষতিটা হবে, তা হল, অনেক ম্যাচের মীমাংসা হবে না। আকর্ষণ হারাবে টেস্ট। কারণ ম্যাড়মেড়ে ড্র ম্যাচ দেখতে মাঠে ভিড় হবে না।

খবরে দেখলাম, আইসিসির এই মনোভাব জেনে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের অধিনায়ক টিম পেন বলেছে, অ্যাশেজ সিরিজে যদি চার দিনের টেস্ট খেলতে হত, তা হলে ফলাফল হত না। সোজা কথাটা সোজা ভাবে বলার জন্য পেনকে ধন্যবাদ। চার দিনের টেস্টের নেপথ্যে আইসিসির যুক্তি, এতে সময় ও অর্থের সাশ্রয়। যদি তাই হয়, তা হলে বিশ্ব জুড়ে যে সীমিত ওভারের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হচ্ছে, সেগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে বন্ধ করা হচ্ছে না কেন?

Advertisement

পাঁচ দিনের টেস্টে সকালের দিকে হয়তো লাল বল নড়াচড়া করছে। প্রথম সারির দুই ব্যাটসম্যান হয়তো শুরুতেই প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছে। সেই সময়ে অনেক ব্যাটসম্যান ক্রিজে গিয়ে বোলারকে হতোদ্যম করে দেয়। তখন মারার চেয়ে বোলারকে সম্মান দেখিয়ে বল ছাড়তে হয়। আমাদের সময়ে সুনীল গাওস্কর, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। তার পরবর্তীকালে দিলীপ বেঙ্গসরকর, রবি শাস্ত্রী, সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড় থেকে আজকের বিরাট কোহালি, চেতেশ্বর পুজারা— সকলেই এই কাজ করে এসেছে। গাওস্কর বলেছিল, ব্যাটসম্যানদের টেস্ট জেতালেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। টেস্ট বাঁচানোও সমান তালে করতে হয়।

যদি ২০২৩ সাল থেকে চার দিনের টেস্ট ম্যাচ শুরু হয়, তা হলে কিন্তু আজকের দিনে পুজারা, বিরাট কোহালি বা স্টিভ স্মিথ, কেন উইলিয়ামসনদের ব্যাট থেকে আর এই ধরনের ইনিংস দেখা যাবে না। পাশাপাশি টেস্টে আরও একটা বিষয় দেখি, বোলার বার বার ব্যাটসম্যানকে পরাস্ত করছে কিন্তু উইকেট পাচ্ছে না। পাঁচ দিনের টেস্টে তা সত্বেও বোলারের মনোবল অটুট থাকে। কিন্তু খেলাটা চার দিনের হলে বোলারই হতাশ হয়ে ছন্দ হারাবে।

পাঁচ দিনের টেস্টে আজকাল দেখা যায় স্পোর্টিং উইকেট। যেখানে প্রথম তিন দিন হয়তো দেখা গেল ব্যাটসম্যান ও পেসারদের দাপট। চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে পিচ ভাঙার পর থেকে জাঁকিয়ে বসে স্পিনাররা। টেস্ট ম্যাচ চার দিনের হলে সেই ভারসাম্যটাই থাকবে না। তা ছাড়া, আয়োজক দেশ নিজেদের শক্তি বুঝে পিচে হয়ত প্রচুর ঘাস রেখে দেবে বা জেতার জন্য পুরো ঘূর্ণি উইকেট রেখে কামাল করতে চাইবে। স্পোর্টিং উইকেট কতটা হবে তা সন্দেহ।

পাঁচ দিনের টেস্টের একদিন বৃষ্টিতে ভেস্তে গেলেও চার দিনে অনেক টেস্টের ফয়সালা হয়েছে। কিন্তু চার দিনের ম্যাচে একদিন বৃষ্টি হলে খেলাটা তিন দিনের। সেই ম্যাচের আর মীমাংসা হবে কি? আজ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বা ওয়ান ডে ম্যাচ দেখতে দর্শক আসছেন। কারণ এখানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। কিন্তু এ রকম একাধিক মীমাংসাহীন টেস্ট হতে থাকে, তখন ক্রিকেট-বাণিজ্য কতটা বাড়বে সন্দেহ রয়েছে। এখনকার দিনে অনেক টেস্ট হয়তো চার দিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ভারত বনাম বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচ তিন দিনও গড়াচ্ছিল না। সে সব দেখে হয়তো আইসিসি দিনের সংখ্যা কমাতে চাইছে। কিন্তু ভারত বনাম বাংলাদেশ দিয়ে এটার বিচার করলে ভুল হবে। দেখতে হবে, ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া বা অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড টেস্ট খেললে পাঁচ দিনটা কি খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে? আমার মনে হয় না। বরাবরই ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া বা অ্যাশেজের অনেক টেস্ট শেষ দিনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ উপহার দিয়েছে।

টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হোক। নৈশালোকে গোলাপি বলে টেস্ট ম্যাচ পর্যন্ত চলতে পারে। কারণ অফিস ঘুরে এসেও সন্ধের পরে মাঠে খেলা দেখতে আসতে পারবেন অনেকে। সারা দিনের কাজকর্ম শেষ করে টিভির সামনে বসতে পারবেন। কিন্তু চার দিনের করে দিলে টেস্ট ক্রিকেটের আসল চরিত্রই হারিয়ে যেতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement