এক সময় হাতের স্টিকে দাপিয়ে বেড়াতেন মাঠ। শাসন করতেন প্রতিপক্ষকে। তাঁর জীবনই সেলুলয়েডবন্দি হয়ে তৈরি হল ‘চক দে ইন্ডিয়া’। ভারতীয় মহিলা হকি দলের সেই প্রাক্তন অধিনায়ক সূরজ লতা দেবী এ বার খবরে এলেন গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হয়ে। অভিযোগ, তাঁর উপর অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছেন স্বামী।
শিরানামে তিনি অতীতেও এসেছেন। তবে তখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্যের জন্য। তাঁর নেতৃত্বেই পরপর তিন বছর স্বর্ণপদক পেয়েছে দেশের মহিলা হকি দল।
২০০২ সালের কমনওয়েলথ গেমস, ২০০৩ অ্যাফ্রো এশিয়ান গেমস এবং ২০০৪-এর হকি এশিয়া কাপ। পরপর তিনটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশকে স্বর্ণপদক এনে দেয় সুরজ লতা দেবীর নেতৃত্ব।
লাগাতার তিন বছর স্বর্ণপদক জয়ের ঘটনা ছিল ‘চক দে ইন্ডিয়া’ ছবি নির্মাণের অনুপ্রেরণা। ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবির অন্যতম প্রেক্ষাপট ছিলেন সূরজ লতা দেবী।
সুরজের জন্ম ১৯৮১ সালের ৩ জানুয়ারি, মণিপুরের ইম্ফলের পশ্চিম অংশে হেইংনং অঞ্চলে। নিজের প্রতিভার জোরে তিনি উত্তর পশ্চিম প্রান্তের প্রত্যন্ত অংশ থেকে এসে জাতীয় দলের নেতৃত্ব দেন।
কিন্তু খেলার মাঠের এই সাফল্যের রেশ পৌঁছয়নি সূরজের সংসারে। তাঁর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই সেখানে ক্রমে জমেছে অশান্তির মেঘ।
২০০৫ সালে সুরজের বিয়ে হয় শান্তাকুমার সিংহের সঙ্গে। প্রাক্তন অধিনায়কের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই হেনস্থার শিকার তিনি। স্বাভাবিকভাবেই বিয়ের পরে সূরজের ঠিকানার পরিবর্তন হয়েছিল। নতুন সংসার শুরু করেছিলেন স্বামীর বাড়িতে।
সেখানে তিনি সঙ্গে এনেছিলেন পদক এবং ছবি। সূরজের অভিযোগ, সেগুলি দেখে আনন্দ তো দূর অস্ত, উল্টে ব্যঙ্গের স্বরে শান্তা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “কী হবে ওগুলি দিয়ে?”
চাহিদা মতো পণ না দিতে পারার কারণেই তিনি নিগৃহীতা হয়েছেন, অভিযোগ সূরজের। তাঁর আরও অভিযোগ, দাম্পত্যের ১৪ বছর ধরেই চলেছে মানসিক নির্যাতন। কিন্তু দুই সন্তান এবং সংসারের স্বার্থে মুখ বন্ধ করে ছিলেন সূরজ। পাশাপাশি তাঁর আশা ছিল, হয়তো একদিন শান্তাকুমারের স্বভাব পাল্টাবে।
সূরজের আক্ষেপ, তাঁর আশা পূর্ণ হয়নি। একইরকম থেকে গিয়েছেন তাঁর স্বামী। অভিযোগ, পশ্চিম রেলের প্রাক্তন কর্মী শান্তাকুমার গত নভেম্বরে চরম অত্যাচার করেছেন স্ত্রী সূরজের উপরে।
প্রাক্তন হকি খেলোয়াড় সূরজ নিজে পশ্চিম রেলের অফিস সুপার পদে কর্মরত। গত নভেম্বরে পঞ্জাবের কপূরথালার সুলতানপুর লোধি এলাকায় রেলের একটি প্রতিযোগিতা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। অভিযোগ, সে সময় সূরজকে বেঁধে রেখে টানা তিন ঘণ্টা ধরে নৃশংসভাবে মারধর করেন শান্তাকুমার। সে সময় শান্তাকুমার নিজে অসংলগ্ন অবস্থায় ছিলেন বলেও অভিযোগ।
একখণ্ড জমি ঘিরেই অশান্তির সূত্রপাত, দাবি সূরজের। শারীরিক অত্যাচারের পাশাপাশি আছে মানসিক নির্যাতনও। শান্তাকুমার তাঁকে ক্রমাগত চাকরি ছাড়ার জন্য চাপ দিয়েছেন, অভিযোগ সূরজ দেবীর। শেষে তাঁর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। সম্প্রতি তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
গত নভেম্বরের নিগ্রহের অভিযোগ সম্প্রতি পুলিশে দায়ের করেছেন সূরজ। যেহেতু কপূরথালায় ঘটনাটি ঘটেছিল, সেই অঞ্চলের থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। ৪৯৮-এ-সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাক্তন অধিনায়কের স্বামী শান্তাকুমার সিংহকে। (ছবি: আর্কাইভ, শাটারস্টক ও সোশ্যাল মিডিয়া)