—ছবি পিটিআই।
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজ মানেই একটা সময় ছিল চূড়ান্ত আগ্রাসনের দ্বৈরথ। আগুনের জবাব আগুনে দেওয়ার লড়াই। কিন্তু চলতি ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের তৃতীয় ওয়ান ডে ম্যাচের আগে যে প্রশ্নটা উঠছে, তা হল— এই দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কি এখন খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছে?
এমনটাই বলছেন কোনও কোনও প্রাক্তন ক্রিকেটার। দ্বিতীয় ওয়ান ডে ম্যাচে একটা ফুলটস সোজা এসে লাগে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের পেটে। তার পরেই ভারতীয় উইকেটকিপার কে এল রাহুল দৌড়ে এসে ফিঞ্চের পেটে হাত বুলিয়ে দেন। এই নিয়ে দুই ক্রিকেটারের মধ্যে হাসাহাসিও হয়। যা দেখে ধারাভাষ্যকার, প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার, কেরি ও’কিফ বলে ওঠেন, ‘‘এই সিরিজটা একটু বেশিই বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একটা উত্তেজক ঘটনা চাই। সবাই দেখছি হাসছে! কী হচ্ছে!’’
ও’কিফ একটু মজা করে কথাটা বলে থাকতে পারেন, কিন্তু দু’দলের এই নরমসরম মেজাজের খেলা চোখে লেগেছে অনেকেরই। যেমন মাইকেল ভন। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মনে করেন, এ সবই আইপিএলের প্রভাব। একটি ওয়েবসাইটে ভন বলেছেন, ‘‘মনে হয়, আমরা ভিন্ন একটা যুগে এসে পড়েছি। কিছু বছর আগে পর্যন্ত অস্ট্রেলীয়রা বিপক্ষকে চাপে ফেলতে স্লেজ করতে দ্বিধা করেনি। বলছি না, ওরা সীমা ছাড়িয়ে যেত। আসলে ওটাই ওদের খেলার ধরন ছিল। কিন্তু এখন সবাই সবার সতীর্থ হয়ে গিয়েছে।’’ ভন আরও বলেন, ‘‘আইপিএলের দৌলতে বেশির ভাগ অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার এখন ভারতীয়দের সঙ্গে একই দলে খেলে। এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর জন্য ক্রিকেট বিশ্বে বিশাল পরিবর্তন এসে গিয়েছে।’’
এই মুহূর্তে দু’দেশের বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার আইপিএলে একই দলে খেলেন। যেমন, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে বিরাট কোহালি এবং যুজ়বেন্দ্র চহালের সঙ্গে খেলেন ফিঞ্চ এবং অ্যাডাম জ়াম্পা। দিল্লি ক্যাপিটালসে একসঙ্গে খেলে এসেছেন শ্রেয়স আয়ার, শিখর ধওয়ন, মার্কাস স্টোয়নিস এবং অ্যালেক্স ক্যারি। কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের দুই ক্রিকেটারের নাম রাহুল এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
এর মধ্যে প্রথম ওয়ান ডে-তে আবার কোহালির সোজা ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন জ়াম্পা। যা নিয়ে প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় স্পিনার ব্র্যাড হগ মজা করে বলেছিলেন, ‘‘আইপিএল চুক্তি পাওয়ার জন্য কোহালিকে ধন্যবাদ দিল জ়াম্পা!’’ মজা করে বলা হলেও সেই আইপিএলের ছায়াটা পড়েছিল দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
এই আবহে আজ, বুধবার, ক্যানবেরায় তৃতীয় ওয়ান ডে-তে জিতে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা ভারত এড়াতে পারে কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন। প্রথম দুটো ওয়ান ডে ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হেরেছে ভারত। শ্রেয়স মনে করেন, টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাট থেকে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে মানিয়ে নেওয়াটা একটু সমস্যার হয়ে গিয়েছে ভারতীয় বোলারদের পক্ষে। শ্রেয়স বলেছেন, ‘‘২০ ওভারের ম্যাচ থেকে সোজা ৫০ ওভারের ম্যাচে মা্নিয়ে নেওয়াটা সহজ নয়। ১০ ওভার বল করতে হচ্ছে, ফিল্ডিং করতে হচ্ছে। তবে সবাই ইতিবাচকই আছে। আমি নিশ্চিত, বোলাররা শক্তিশালী হয়েই ফিরে আসবে।’’
সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচে দেখা গিয়েছে, শ্রেয়সের বিরুদ্ধে শর্ট বল করার কৌশল নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা। তাঁকে নিয়ে যে অস্ট্রেলিয়া এত ভাবছে, তাতেই খুশি শ্রেয়স! আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া যে একটা পরিকল্পনা নিয়েছে, তাতে আমি ভীষণ খুশি। তবে আমিও চাপের মুখে খেলতে ভালবাসি। পাল্টা আক্রমণ করতে ভালবাসি।’’