প্রশ্ন: কাদের নিয়ে দল গড়বে ইস্টবেঙ্গল? ফাইল চিত্র।
ইস্টবেঙ্গলের ভবিষ্যৎ কী? অষ্টম আইএসএলে লাল-হলুদের বাকি আর মাত্র পাঁচটি ম্যাচ। অথচ এখনও পর্যন্ত লগ্নিকারী সংস্থা শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি ক্লাব কর্তাদের। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে বিচ্ছেদ কার্যত নিশ্চিত বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে লাখো ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের।
আগের লগ্নিকারী সংস্থা কোয়েসের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে ইস্টবেঙ্গলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রবল অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে নতুন এই লগ্নিকারী সংস্থা। শেষ মুহূর্তে আইএসএলে প্রবেশ করে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু মরসুম শেষ হওয়ার পরে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া নিয়ে ফের চরমে পৌঁছয় বিবাদ।
পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে গিয়েছিল যে, অষ্টম আইএসএলে এসসি ইস্টবেঙ্গল খেলবে না বলে জানিয়েও দিয়েছিল তারা। এ বারও শেষ মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে চূড়ান্ত চুক্তি না হওয়া সত্ত্বেও দল গড়ে আইএসএলে খেলার সিদ্ধান্ত নেয় লগ্নিকারী সংস্থা। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই আগামী মরসুমে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে রাজি নন লগ্নিকারী সংস্থার কর্তারা। তাঁরা মনে করছেন, দুই মরসুমে প্রায় একশো কোটি টাকা ব্যয় করেও প্রাপ্তি শূন্য।
গত মরসুমে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা খরচ করেছিল লগ্নিকারী সংস্থা। এর মধ্যে ১৫ কোটি টাকা ফেরত এসেছে আইএসএলে খেলার জন্য। এই মরসুমেও নাকি প্রায় একই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। লগ্নিকারী সংস্থার কর্তারা জানালেন, তাঁদের একাধিক পরিকল্পনা ছিল ইস্টবেঙ্গলের উন্নয়নে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল পরিকাঠামোর উন্নয়ন, নতুন স্টেডিয়াম বানানো। বিদেশের বেশ কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার ব্যাপারে কথাবার্তাও নাকি অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। চূড়ান্ত চুক্তি না হওয়ায় সব ভেস্তে গিয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে আগামী মরসুমে লগ্নিকারী সংস্থার কর্তারা কী করবেন? তাঁরা সম্পর্ক ছিন্ন করলে ইস্টবেঙ্গলের ভবিষ্যৎই বা কী হবে? এই ডামাডোলের মধ্যে নতুন কোনও লগ্নিকারী সংস্থা কি রাজি হবে শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবে বিনিয়োগ করতে? লাল-হলুদের লগ্নিকারী সংস্থার কর্তারা এখনই সরাসরি বিচ্ছেদের কথা বলতে রাজি নন। জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি না বদলালে আর থাকা সম্ভব নয়। চূড়ান্ত চুক্তিতে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের স্বাক্ষর করতে হবে আগে। তার পরেই ক্লাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবেন তাঁরা। লাল-হলুদ কর্তারা অবশ্য এখনও আগের সিদ্ধান্তেই অনড়। চুক্তিতে যে যে বিষয়গুলিতে তাঁদের আপত্তি রয়েছে, তা পরিবর্তন না করলে স্বাক্ষর করবেন না। কর্তারা প্রভাব বা কর্তৃত্ব হারাতে চান না, পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। তাঁদের দাবি, ‘‘ফুটবল স্বত্ব লগ্নিকারী সংস্থার কাছেই রয়েছে। ওরা থাকবে না বলে জানাক, তার পরে আমরা ভাবব।’’ চব্বিশ ঘণ্টা আগেই আলোচনায় বসেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন তারকারা। ক্লাব ও লগ্নিকারী সংস্থার মধ্যে চলতে থাকা বিবাদ মেটাতে উদ্যোগ নিতে আগ্রহী তাঁরা।
ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার আবহে কোচ মারিয়ো রিভেরা ব্যস্ত আগামী সোমবার ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রস্তুতিতে। প্রথম পর্বের সাক্ষাতে ৪-৬ গোলে হেরেছিল ইস্টবেঙ্গল। মারিয়োর উদ্বেগ কিছুটা কমেছে অঙ্কিত মুখোপাধ্যায় সুস্থ হয়ে ওঠায়। কিন্তু অসংখ্য লাল-হলুদ সমর্থকের আতঙ্ক কমাবে কে? মাঠের মধ্যে যেমন বিপর্যস্ত ইস্টবেঙ্গল, মাঠের বাইরেও ততটাই এলেমেলো, দিশাহীন। হাল ধরবে কে?