ফুটবল খেলার বাইরে পেলে একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছে অনেক সিনেমা। ফাইল ছবি
শুধু সবুজ ঘাসে ফুটবল খেলাই নয়, মাঠের বাইরেও পেলের জীবন কম বর্ণময় ছিল না। দিয়েগো মারাদোনার বিতর্ককে সঙ্গে নিয়ে হয়তো সারা জীবন ঘোরেননি। কিন্তু আর পাঁচটা ব্রাজিলীয়ের মতো তাঁর জীবন কম রঙিন ছিল না। ফুটবল খেলার বাইরে পেলে একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছে অনেক সিনেমা। পেলের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে বেশ কিছু সিনেমায়।
প্রথমেই মনে আসে উৎপল দত্ত অভিনীত হিন্দি সিনেমা গোলমাল (১৯৭৯)-এর কথা। সিনেমার একটি দৃশ্যে দেখা গিয়েছে, চাকরিপ্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন উৎপল দত্ত। হঠাৎই তাঁর সামনে আবির্ভূত হন শ্রীবাস্তব নামে এক চাকরিপ্রার্থী, যে চরিত্রে অভিনয় করেন হরিশ মাগন। শুরু থেকেই নানা কথা বলে উৎপলকে বিভ্রান্ত করে দেন তিনি। সেখানে উঠে আসে ‘ব্ল্যাক পার্ল’, অর্থাৎ পেলের কথাও। পরের চাকরিপ্রার্থীকে (অমল পালেকর) পেলের কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি জানান, সংবাদপত্রে পড়েছেন কলকাতায় পেলের জন্য ৩০-৩৫ হাজার রাতবিরেতে দমদম বিমানবন্দরে গিয়ে হাজির হয়েছে। ব্যাখ্যা না করলেও বুঝতে অসুবিধা নেই সেখানে মোহনবাগান বনাম কসমস ম্যাচের কথা বলা হয়েছে। সেটাই পেলের প্রথম বার কলকাতায় আসা।
প্রায় আধ ডজন সিনেমায় অভিনয় করেছেন পেলে। তার একটি হল ‘এসকেপ টু ভিকট্রি’ (১৯৮১)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কিছু বন্দি নাজ়িদের এড়িয়ে একটি ফুটবল ম্যাচ সম্পূর্ণ করার জন্য পালায়। সেখানে ফুটবল খেলতে দেখা যায় পেলেকে। ১৯৮৬ সালের সিনেমা ‘হটশট’-এ পেলে কোচের ভূমিকায় অভিনয় করেন। আমেরিকার এক ধনী কিশোরকে ফুটবলার বানানোর চেষ্টায় মগ্ন ছিলেন। সেখানে ওই কিশোর নিজেকে দরিদ্র হিসাবে সাজিয়ে ফুটবল দলে ঢুকতে চাইছিল।
একটি সিনেমায় হলিউডি অভিনেতা সিলভেস্টার স্ট্যালোনের সঙ্গে পেলে। ফাইল ছবি
রয়েছে একই বছরে একটি পর্তুগিজ সিনেমা ‘ওস ট্রাপালহোস ই ও রেই দো ফুটেবল’। পেলে ছিলেন একজন ফুটবল লিখিয়ে, যিনি নিজের বন্ধু এবং কোচকে সাহায্য করছিলেন একটি বিধ্বস্ত দলকে ঘুরে দাঁড় করানোর জন্য। পেলের চরিত্রটি ছিল বেশ মজার। তার ছ’বছর আগে পর্তুগিজ সিনেমা ‘ওস ত্রোম্বাডিনহোস’ সিনেমার কাহিনি পেলে নিজেই লিখেছিলেন এবং সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। গল্পের কাহিনি ছিল, ব্রাজিলের এক সফল ব্যবসায়ী পকেটমারদের কারণে অত্যন্ত বিরক্ত। তিনি স্যান্টোসের জুনিয়র প্রশিক্ষককে (অভিনয় করেন পেলে) ফোন করে অনুরোধ করেন যাতে সেই খুদে পকেটমারদের নিয়ে একটি ফুটবল দল তৈরি করা যায়।
‘পেদ্রো মিকো’ (১৯৮৫) সিনেমায় নামভূমিকায় অভিনয় করেন পেলে, যেখানে তিনি অভিনয় করেছিলেন রিয়ো দে জেনেইরোর এক দুর্বৃত্তের চরিত্র। সেই চরিত্র রাস্তাঘাটে মানুষের টাকা এবং গয়না চুরি করে পালায়। পেলের সেই অভিনয় ভূয়সী প্রশংসা পায়। একই বছরে ‘আ মাইনর মিরাক্ল’ সিনেমায় পেলে ক্যামিয়োর চরিত্রে অভিনয় করেন।
ব্রাজিলের একনায়কতন্ত্রের সঙ্গে পেলের নৈকট্য এক সময় ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু ১৯৭২ এ নির্মিত ‘মার্চা’ সেই ধারণা বদলে দেয়। সেখানে পেলেকে দেখা গিয়েছিল দাস বিরোধী একটি আন্দোলনের নেতার চরিত্রে। তার তিন বছর আগে একটি সিরিয়ালে পেলে এমন এক চরিত্রে অভিনয় করেন যেখানে দেখা যায়, চরিত্রটি ভিন্গ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ ঘটাচ্ছে।
২০১৬-তে মুক্তি পায় ‘পেলে: বার্থ অফ আ লেজেন্ড’। ফাইনালে মাঠে নামার আগে পেলেকে দেখা যায় ব্রাজিল দলের হোটেলে। পেলে সেখানে স্যুট পরা এক বৃদ্ধ। নিউ ইয়র্কের রাস্তায় তখন পেলের জনপ্রিয়তা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন রবার্ট রেডফোর্ড। এই পরিচালক-অভিনেতা অবাক হয়ে দেখেছিলেন, সইশিকারীর দল ছেঁকে ধরেছে পেলেকে। কিন্তু কেউ তাঁর কাছে আসছে না। ২০০১-এ তৈরি ‘মাইক ব্যাসেট: ইংল্যান্ড ম্যানেজার’ সিনেমাতেও অভিনয় করেন পেলে। ফুটবলে ইংরেজদের আধিপত্যের দাবি নিয়ে সেখানে মজা করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
‘গোলমাল’ ছবিতে উৎপল দত্ত পেলেকে আমল দেননি। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ফুটবলে আগ্রহ ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু সেই ছবিতেই রঞ্জন রক্ষিতের ভূমিকায় রবি ঘোষের চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে ব্রাজিলের নাম শুনে। উৎপল দত্তর সামনেই। সে বলে ওঠে, ‘পেলে!’ সত্যজিত রায়ের চিত্রনাট্যে সংলাপের সৌজন্যেই বোঝা যায়, ব্রাজিল আর পেলে বাঙালির চোখে সমার্থক।