চোটের পরে অনুশীলনে ফিরে খোশমেজাজে নেমার। পিটিআই
ব্রাজিল কোচ তিতের সাংবাদিক সাংবাদিক বৈঠক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তির বেগে কাতার কনভেশন সেন্টারের বাস স্ট্যান্ডের দিকে ছুটলেন পার্ক চোই, মিন-হো ফাং-রা। একটু পরেই তো দক্ষিণ কোরিয়ার কোচ পাওলো বেন্তো সাংবাদিক বৈঠক করবেন। অথচ তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই কোরীয় সাংবাদিকদের।
হঠাৎ কী হল? একটু পরেই সব রহস্যের সমাধান হয়ে গেল। সাংবাদিক বৈঠকে তিতে বলে দিয়েছেন, ‘‘দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে পারে নেমার। তবে সন্ধের অনুশীলনে ওকে আরও একবার দেখব। কথা বলব মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে। ওরা সবুজ সঙ্কেত দিলেই নেমার খেলবে।’’ চোট সারিয়ে নেমার ফিরছেন শোনার পরেই উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া শিবিরে। ব্রাজিল তারকা সত্যি সুস্থ কি না দেখতে পড়িমড়ি করে পার্করা দৌড়লেন আর আরবি ক্লাবে।
ব্রাজিলের অনুশীলন দেখতে গিয়ে নিশ্চিত ভাবেই রক্তচাপ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবাদিকদের। ভিনিসিয়াস জুনিয়র, কাসেমিরো, দানি আলভেসরা মাঠে নেমে পড়লেও ছিলেন না নেমার। হঠাৎ তিতে পকেট থেকে একটি কাগজ বার করে সহকারী সিজ়ার সাম্পাইয়ের হাতে দিয়ে উদ্বিগ্ন মুখে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফিরে এলেন। এ বার তিনি হাসছেন। তিতের ঠিক পিছনেই ছিলেন নেমার। প্যারিস সঁ জরমঁ তারকা মাঠে পা রাখতেই ব্রাজিলের সাংবাদিকরা যে ভাবে উল্লাস শুরু করে দিলেন, মনে হচ্ছিল নেমার যেন ম্যাচে গোল করেছেন!
সার্বিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে গোড়ালিতে চোট পেয়ে গ্রুপ পর্বে বাকি দু’টি ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর ম্যাচেও নেমারের খেলা নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা ছিল। আট দিন পরে শনিবারই তিনি প্রথম বল নিয়ে অনুশীলন করায় স্বস্তি ফেরে ব্রাজিল শিবিরে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিন প্রস্তুতিতে নেমারকে দেখে বোঝার উপায় নেই, সদ্য চোট সারিয়ে উঠেছেন। মাঠে নেমে প্রথমেই সতীর্থদের সঙ্গে সাম্বার সুরে কোমর দুলিয়ে নেচে উঠলেন।
আজ, সোমবার স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ ব্রাজিলকে আটকাতে দক্ষিণ কোরিয়া রক্ষণ মজবুত করে খেলবে বলে মনে করছেন তিতে। এই কারণেই মাঠ ছোট করে ম্যাচ প্র্যাক্টিস করালেন। রিচার্লিসনের সঙ্গে নেমারকে ফরোয়ার্ডে রেখেই। ব্রাজিল তারকা ডান পায়ের অসাধারণ শটে একটি গোল করে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি তৈরি। তবে অনুশীলনের মাঝে বেশ কয়েকবার সাইডলাইনের ধারে গিয়ে গোড়ালির আঘাতের জায়গায় স্প্রে নিচ্ছিলেন। ব্রাজিল টিম ম্যানেজমেন্টের এক কর্তা বলছিলেন, ‘‘ফোলা কমলেও ব্যথা এখনও রয়েছে নেমারের। তবে ওর মনের জোর প্রবল। ক্যামেরুনের কাছে হারের পর থেকেই মরিয়া হয়ে উঠেছে মাঠে ফেরার জন্য।’’ আবেগপ্রবণ ব্রাজিল তারকা ইনস্টগ্রামে লিখেছেন, ‘‘আমার জীবনে কোনও কিছুই সহজ ভাবে আসেনি। লক্ষ্য পূরণের জন্য আমাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। কখনও কারও খারাপ চাইনি। হ্যাঁ, আমি আহত। যা আমাকে প্রতি মুহূর্তে কষ্ট দিচ্ছে। দেশ, সতীর্থ ও দলের জন্য কিছু করতে চাই। তাই ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছি।’’
নেমারের গোল দেখার পরেই পার্ক, মিনদের মুখ কেমন যেন রক্তশূন্য হয়ে গেল। উদ্বেগের সঙ্গে বলেই ফেললেন, ‘‘ব্রাজিল কোচ সাংবাদিক বৈঠকে নেমারের খেলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবুও আমরা ভেবেছিলাম, ওঁর পক্ষে গোড়ালির চোট সারিয়ে এত তাড়াতাড়ি মাঠে ফেরা সম্ভব নয়। কিন্তু আগের মতোই আগ্রাসী মেজাজে রয়েছে। গোলটা করল ডান পা দিয়েই।’’ যোগ করলেন, ‘‘নেমার না খেললে জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই বাড়ত। এখন কাজটা অনেক কঠিন হয়ে গেল।’’ একা নেমার নন, ফিরছেন রক্ষণের অন্যতম ভরসা দানিলোও। তবে চোটের কারণে খেলতে পারবেন না আলেক্স সান্দ্রো।
পেলের অসুস্থতার খবরে মুষড়ে পড়ে ব্রাজিল শিবিরে নেমার যেন একঝলক মুক্তির বাতাস। ফুটবল সম্রাটের প্রসঙ্গে উঠতে সাংবাদিক বৈঠকে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কেঁদে ফেলেছিলেন তিতে। বলছিলেন, ‘‘২০১৮ বিশ্বকাপের আগে ফুটবল সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য হয়েছিল। আমার হাত কাঁপছিল পেলের সঙ্গে করমর্দন করার সময়। মনে হচ্ছিল যেন স্বপ্ন দেখছি। ফুটবলের ঈশ্বর আমার কাঁধে হাত রেখে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, এর চেয়ে সেরা প্রাপ্তি কিছু হতে পারে না। পেলের অসুস্থতার খবরে আমরা সকলেই প্রচণ্ড উদ্বগের মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছি। ফুটবল সম্রাটের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’’ তবে ক্যামেরুনের কাছে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ হারের যন্ত্রণা এখনও ভুলতে পারেননি ব্রাজিলের কেউ। অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা বলছিলেন, ‘‘ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে আমরা খুব খারাপ খেলেনি। জিততেও পারতাম। এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই ঘুরে দাঁড়াতে হবে।’’
এই নিয়ে অষ্টমবার দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে প্রথমবার। এর আগের সাতটি সাক্ষাতের ছ’টিতে জিতেছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। যদিও পরিসংখ্যান নিয়ে আগ্রহী নন ব্রাজিলের কেউ। সামনে যে পর্তুগালকে হারিয়ে শেষ ষোলোয় যোগ্যতা অর্জন করা সন হিউং মিনের দক্ষিণ কোরিয়া।