গোলের পর সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাস আলেক্সিসের (মাঝে)। ছবি: সমাজমাধ্যম।
মহমেডান ১
গোয়া ১
তখন ম্যাচের বয়স ৯৩ মিনিট। দর্শকাসনে সমর্থকেরা আনন্দে নাচতে শুরু করে দিয়েছিলেন। জয়ের জন্য অপেক্ষা ছিল আর তিন মিনিটের। সেই মুহূর্তেই বদলে গেল চিত্রপট। জিততে জিততেও জেতা হল না মহমেডানের। আগের ম্যাচের মতো আবার সংযুক্তি সময়ে গোল খেল মহমেডান। এ বার হারতে হল না। তবে নিশ্চিত তিন পয়েন্ট হাতছাড়া হল। মোহনবাগানের বাতিল খেলোয়াড় আর্মান্দো সাদিকুর গোলে ড্র করল এফসি গোয়া। খেলা শেষ হল ১-১ অবস্থায়।
তবে ফলাফল নয়। এই ম্যাচে নজর কেড়ে নিয়েছে মহমেডানের দাপুটে ফুটবল। মুহূর্তের ভুলে ড্র করলেও গোটা ম্যাচে মহমেডান যে ফুটবল খেলেছে তা প্রশংসা করার মতোই। প্রথম ম্যাচে নর্থইস্টের কাছে অল্পের জন্য হারতে হলেও এ দিন সেই ভুল করেননি আন্দ্রে চের্নিশভের ছেলেরা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপট দেখাল মহমেডান। ভাল খেললেন ফ্রাঙ্কা। তিনিই পেনাল্টি আদায় করে নেন। আইএসএলের মহমেডানের হয়ে প্রথম গোল করে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন আলেক্সিসও। সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে এই ম্যাচে অনায়াসে জেতার কথা মহমেডানের। কিন্তু এক মুহূর্তের ভুলে হাতছাড়া হল জয়। একটি ভাল সুযোগেই গোল করল গোয়া।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই মহমেডান চাপে ফেলেছিল গোয়াকে। মাকান ছোটের প্রয়াস অল্পের জন্য বাঁচিয়ে দেন লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমানি। এর পর কিছু ক্ষণ গোয়া আক্রমণ করলেও ধীরে ধীরে চাপ বাড়াতে থাকে মহমেডান। ভাল খেলছিলেন ফ্রাঙ্কা এবং ছোটে। বাঁ দিক আক্রমণে উঠে ব্যস্ত রেখেছিলেন গোয়ার রক্ষণকে।
১৯ মিনিটের মাথায় ফ্রাঙ্কা দৌড়ে পিছনে ফেলেন জয় গুপ্তাকে। তাঁর ক্রস আটকে দেন ওদেই ওনান্দিয়া। তার ঠিক আগে নিম দোরজি বাঁচান গোয়াকে। ২৫ মিনিটে ফ্রাঙ্কার শট কোনও মতে বাঁচান কাট্টিমানি। সেই সময় গোয়ার রক্ষণ ফালাফালা করে দিচ্ছিল মহমেডান। গোয়ার রক্ষণ ভাগ বুঝতেই পারছিল না কী ভাবে মহমেডানকে আটকানো যায়।
২৮ মিনিটে ফ্রাঙ্কার শট আবার বাঁচান কাট্টিমানি। বিরতির ছ’মিনিট আগে পেনাল্টির আবেদন করেছিল মহমেডান। বক্সের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছিল আদিঙ্গা রালতেকে। তবে রেফারি পাত্তা দেননি। এর পর ফ্রিকিক থেকে সরাসরি গোলে শট নিয়েছিলেন আলেক্সিস গোমেজ়। কোনও মতে আঙুল ঠেকিয়ে তা বার করে দেন কাট্টিমানি।
দ্বিতীয়ার্ধেও একই চিত্র। শুরুতেই গোয়ার রক্ষণ চিরে এগিয়ে গিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কা। তাঁর শট গোয়ার রক্ষণে আটকে গেলেও অমরজিতের পায়ে লেগে গোলের দিকে গিয়েছিল। সেই প্রচেষ্টা বাঁচিয়ে দেন কাট্টিমানি। আলেক্সিসও একটি ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর শট বারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। মহমেডানের কোচ খুশি হতে পারেননি দেখে।
৬৫ মিনিটে গোল করে মহমেডান। ওনান্দিয়ার পায়ের ফাঁক দিয়ে বল গলিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কা। পিছন থেকে এসে বক্সের মধ্যে ওনান্দিয়া ফেলে দেন তাঁকে। রেফারি পেনাল্টি দেওয়ার পাশাপাশি হলুদ কার্ড দেখান ওনান্দিয়াকে। কাট্টিমানিকে উল্টো দিকে ফেলে পেনাল্টি থেকে ঠান্ডা মাথায় গোল করেন আলেক্সিস।
মহমেডানের দাপট তাতেও কমেনি। গোল পেয়েও একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে তারা। নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সেই ব্রাজিলীয় ফ্রাঙ্কাই। দুর্ভাগ্য যে গোল পেলেন না।
শেষ দিকে যে গোয়া সমতা ফেরাবে তা কেউই ভাবতে পারেননি। সংযুক্তি সময়ের তৃতীয় মিনিটের খেলা চলছে। বাঁ দিক থেকে ভেসে আসা বলে সজোরে হেড করেন সাদিকু। পদম ছেত্রীকে পরাস্ত করে বল জালে জড়িয়ে যায়।